কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতন, অশ্লীল মেসেজ প্রদান ও ইচ্ছাপ্রণোদিতভাবে নম্বর কমিয়ে ফেল করানোর মতো ঘটনা’সহ নানান অভিযোগ করেছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বিভাগের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বলেন, দ্বিতীয় বর্ষে আজিজ স্যারের টিটোরিয়ালে ভালো মার্কস পাওয়ার পর উনি ফোন দেন এবং জিজ্ঞেস করেন ‘এতোদিন আমার চোখে পড়ো নাই কেনো?’ ক্যাম্পাসে হাত ধরে হাঁটার মানুষ আছে? তারপর বলেন তোমাকে তো দেখি ক্লাসে চুপ থাকতে, তুমি কি হাসতে পারো? একটু হেসে শুনাও তো। তারপর আমাকে আরও কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন এবং আমি ফোন রেখে দিই আর তার ইফেক্ট তাঁর টিউটোরিয়ালের মার্কসে দেখতে পাই।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বলেন, ট্যুরে স্যার যাবেন কিনা শিক্ষার্থীরা জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি সাঁতার পারো? আমি উত্তর দেই, ‘পারি না’ তখন তিনি বলেন, সাঁতারই তো পারো না, কক্সবাজার যেয়ে কি হবে। একসাথে সমুদ্রে নেমে তো গোসল করতে পারবো না।
ভুক্তভোগী অপর ছাত্রী জানান, তোমার কি কোনো সেক্সুয়াল ইচ্ছে নেই? তুমি কি asexual? যেটা উনি (শিক্ষক) আমাকে বুঝিয়ে বলতে থাকেন। তোমার বাসা লাগবে? তোমার তো একরুমের বাসা হলেই হয়। শেখপাডায় অনেক ভালো বাসা আছে একরুমের। তুমি বাসা পেলে আমাকেও একদিন দাওয়াত দাও তোমার রুমে।
গত ২৩ জুন বিভাগের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা এসব কথা বলেন। এছাড়া অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরাও নানান অভিযোগ দেন।
এবিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কোনো শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করিনি। হয়তো আমার কথা তারা ভুলভাবে নিয়েছে। কখন কী বলছি এখন বলতে পারছি না। তবে এটি পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলক মনে করছি।’
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. একে এম নাজমুল হুদা বলেন, বেশ কিছুদিন আগে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দেয়। গত ২৯ তারিখ আমরা একাডেমিক কমিটির সভায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত আপাতত তিনি বিভাগের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন। পরে তদন্ত কমিটি হবে, কখন কোন সেকশন পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা দেখে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
উল্লেখ্য, শিক্ষক আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ল্যাব ভাইভায় অপমান করা, হোয়াটসঅ্যাপে কুরুচিপূর্ণ মেসেজ প্রদান, ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে দেওয়া, রুমে ডেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন নিয়ে আপত্তিকর জিজ্ঞাসা, ক্লাসে সবার সামনে আজেবাজে ইঙ্গিত করা, মানসিক নির্যাতন করা, ছাত্রীদের ভিডিও কল দেওয়া, কল না ধরলে রেজাল্ট খারাপ করানোর হুমকি, বিবাহিত ছাত্রীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, নিজের অধীনে প্রজেক্ট করতে পছন্দের ছাত্রীদের বাধ্য করা, বডি শেমিং করাসহ নানাভাবে হেনস্তার অভিযোগ করেন বিভাগটির বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। পরে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিক্ষককে বিভাগের কার্যক্রম থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
অর্থসংবাদ/সাকিব আসলাম/এসএম