ইবিতে কমেছে ধূমপায়ী, সিগারেট বিক্রি হ্রাস ৬০ শতাংশ

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা আগের তুলনায় অনেকটাই কমে গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দোকানিরা ও সিগারেট সরবরাহকারীরা। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ক্যাম্পাসে মাসে গড়ে ১২ লাখ টাকার সিগারেট বিক্রি হয়, যা আগে ছিল প্রায় ২৪ লাখ টাকা। দিনে যেখানে আগে শিক্ষার্থীরা সিগারেটে ব্যয় করতেন প্রায় ১ লাখ টাকা, এখন তা নেমে এসেছে ৪০ হাজার টাকার কাছাকাছি। অর্থাৎ, আগের তুলনায় সিগারেট বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

সিগারেট বিক্রেতারা জানান, ধূমপান কমে যাওয়ার পেছনে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি, দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধিই বড় কারণ। অনেকের মতে, বর্তমানে ক্যাম্পাসে ফল, শরবত ও ফাস্টফুড জাতীয় খাবারের চাহিদা বেড়েছে, যা শিক্ষার্থীদের ধূমপানের প্রতি নিরুৎসাহিত করেছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন ও ক্যাফেটেরিয়াগুলোতে সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ এবং অনেক দোকানেই এটি বিক্রি হয় না।

আবাসিক হলগুলোতেও ধূমপান ও মাদকসেবন নিষিদ্ধ। হল কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত রুম কিংবা হল গেটের ভেতরে ধূমপান করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ক্যাম্পাসের দোকানগুলোতে দু’টি কোম্পানির প্রতিনিধিরা এসে এসব সিগারেট সরবরাহ করেন। এর মধ্যে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি ছয় ব্র্যান্ডের এগারো ধরনের এবং জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল দুই ব্র্যান্ডের চার ধরনের সিগারেট বিক্রি করে থাকেন।

ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কম্পানির বিপণন কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম ও জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল কম্পানির বিপণন কর্মকর্তা মো. মনির জানান, দুই কোম্পানি ক্যাম্পাসের দোকানে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১২ লাখ টাকার সিগারেট সরবরাহ করে, যার খুচরা বিক্রয়মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকার কাছাকাছি।

তারা আরও জানান, প্রতি মাসে সতেরো থেকে আঠারো হাজার শলাকা বিক্রয় করেন। যার ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো অর্থাৎ আগের থেকে বিক্রয় অর্ধেক কমে গেছে।

অপর একজন কোম্পানি কর্মকর্তা জানান, প্রতি ২ দিন অন্তর ক্যাম্পাসে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকার সিগারেট সরবারহ করেন। বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি ও দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনক

ক্যাম্পাসের মুদি দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে শিক্ষার্থীরা সিগারেট তেমন ক্রয় করে না। সিগারেটের বিক্রির পরিমাণও পূর্বের তুলনায় অনেক কমে গেছে।

জিয়া মোড়ের এক মুদি দোকানি বলেন, ক্যাম্পাসে আগে অনেকে সিগারেট খেত যারা বিভিন্নভাবে নেশাগ্রস্ত ছিল। এখন তারা না থাকায় বিক্রি অনেক কমেছে। মাঝেমধ্যে সিগারেটের দাম কমবেশি হয় কিন্তু তা বিক্রি কমে যাওয়ায় তেমন কারন নয়।

সিগারেট বিক্রি কমে যাওয়ায় বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে ঝাল চত্বরের এক দোকানি বলেন, সিগারেট বিক্রি করলে আমাদের লাভ হয় খুব কম। তবে ইদানিং সিগারেট বিক্রি কমেছে এতে আমাদের ব্যবসার উপর প্রভাব পড়লেও ভালো লাগছে যে শিক্ষার্থীরা মাদক দ্রব্য গ্রহণে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা বলেন, ‘‘অনেক সময় দেখা যায় শিক্ষক, কর্মকর্তা, এমনকি শিক্ষার্থীরাও চলন্ত যানবাহনে কিংবা রাস্তার ধারে সিগারেট খাচ্ছেন। এটা দুঃখজনক এবং অনেকের জন্যই অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা সচেতন। যারা সচেতন ও প্রকৃত শিক্ষার্থী তারা কখনই এই মাদকের সাথে জড়িত না। আমরাও মাদকের ব্যপারে তৎপরতা বৃদ্ধি করব যাতে এই মাত্রা শূন্যের কোঠায় আনতে পারি।

শিক্ষার্থীর অভিযোগের ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, অভিযোগপত্র দিলে অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘‘মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার জন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের ক্যাম্পাসে চারিদিক থেকে প্রবেশ করা যায় এজন্য আমরা রাত দুইটার দিকেও শিক্ষার্থী এবং বহিরাগত মাদক সেবনরত অবস্থায়ও আটক করেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানগত কারণে রাতে আনসার সহ পুলিশ গার্ড দিতেও ভয় পায়। আমাদের জনবলের অভাব আছে। আমরা অতিরিক্ত ২০ জন আনসার চেয়েছি যদি পেয়ে যায় এবং আমাদের প্রক্টরিয়াল সদস্য যদি ১৫ জনে করতে পারি তাহলে আশা করি রাতে নিরাপত্তা সহ মাদকের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হতে পারবো। দরকার হলে মাঝে মাঝে আমিও রাতে ঝটিকা অভিযান দিবো।

তিনি আরও বলেন, ‘‘যদি গুচ্ছ অন্তর্ভুক্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ডোপ টেস্ট করে তাহলে আমরাও প্রাথমিকভাবে নোটবুকের মাধ্যমে চেষ্টা করবো, ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করবো, প্রয়োজনে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক ক্যাম্পেইন করবো যাতে করে সাধারণ শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসে।”

অর্থসংবাদ/সাবিক/কাফি

শেয়ার করুন:-
শেয়ার