ক্যাটাগরি: মত দ্বিমত

বিবেকের মূল্য ও নৈতিক সমৃদ্ধির পথ

একটি সমাজে যেখানে নৈতিকতা বিসর্জন দেওয়া যেন সাফল্যের সবচেয়ে সহজ রাস্তা, সেখানে বিবেক নিয়ে বেঁচে থাকা মানে এক ধরণের নিঃশব্দ, অদৃশ্য যন্ত্রণা বয়ে বেড়ানো। এ এক পাঁচ স্তরের গভীর অনুভূতির গল্প, যা বাংলাদেশের বহু মানুষ নীরবে বহন করে যাচ্ছেন।

আজকের বাংলাদেশের নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের ছবিটি কী? যদি আমরা চারপাশে তাকাই, একটি অস্বস্তিকর বাস্তবতা চোখে পড়ে—দুর্নীতি, অনিয়ম, কুসংস্কার, প্রতারণা, ভেজাল, নকল — এসব যেন আমাদের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এমনকি এসব অনিয়মকে “চালাকি”, “স্মার্টনেস” কিংবা “কাজের বুদ্ধি” বলে প্রশংসাও করা হয়।

পিতামাতারা সন্তানদের শেখান কীভাবে পরীক্ষায় পাস করতে হয়, কিন্তু শেখান না কীভাবে ন্যায়ের পথে থাকা যায়। শিক্ষকরা নীতিকথা বলেন, অথচ নোট বিক্রিতে ব্যস্ত। ব্যবসায়ী ‘ভেজাল’ দিয়ে বলে—‘এটাই তো চলে।’ প্রশাসনের কেউ কেউ ঘুষকে ‘টিপস’ বলে বৈধতা দেয়। রাজনীতিতে ‘জনসেবা’ নয়, ‘ব্যবসা’ চলছে। এর মাঝখানে যারা সত্য বলার, ন্যায়ের পথে হাঁটার সাহস রাখে — তারা যেন হয়ে ওঠে অদৃশ্য, অপাংক্তেয়, এবং কখনো কখনো “বোকা” বলে বিবেচিত।

এই সমাজে একজন বিবেকবান, সৎ মানুষ কেমন করে বাঁচে? কীভাবে প্রতিদিনের সংগ্রামে টিকে থাকেন? তার ভেতরের লড়াইটাই বোঝার চেষ্টা করছি নিচের পাঁচটি স্তরের মাধ্যমে।

বিবেকবান মানুষের ৫ স্তরের যন্ত্রণা
একজন বিবেকবান মানুষের জন্য ‘সততা’ কেবল একটি নৈতিক অবস্থান নয়—এটা প্রতিদিনের মানসিক যন্ত্রণা, এক ধরনের নীরব যুদ্ধ। সমাজ যখন আদর্শের বিপরীতে চলে, তখন একজন নীতিপরায়ণ মানুষ হয়ে ওঠেন নিঃসঙ্গ পথিক। এই যাত্রাপথে তাঁর যন্ত্রণা ধাপে ধাপে গভীর থেকে গভীরতর হয়:

১. অনুশোচনা — নিজের ভুলকে ভাঙা আয়নায় দেখা
একজন বিবেকবান ব্যক্তি তাঁর অতীতের প্রতিটি ভুল মনে রাখেন। অন্যরা হয়তো ভুলে যায়, কিন্তু তিনি পারেন না। হয়তো সেই ভুল ছিল পরিস্থিতির চাপে, না জেনে করা — তবুও তাঁর বিবেক থেমে থাকে না। তিনি নিজেকে জিজ্ঞেস করেন — “তখন যদি একটু সাহস দেখাতাম?” এই আত্মজিজ্ঞাসা তাঁকে অনবরত পুড়িয়ে তোলে।

২. অসহায়ত্ব — প্রিয়জনদের ভুল দেখেও কিছু করতে না পারা
কখনো কখনো তিনি দেখেন — তার সন্তান, ভাই, বন্ধু, বা কাছের কেউ ভুল পথে হাঁটছে। তিনি জানেন ফলাফল কী হতে যাচ্ছে, জানেন তা ধ্বংস ডেকে আনবে — কিন্তু কিছুই করতে পারেন না। তিনি হয়তো বলেন, বোঝান — কিন্তু সমাজের মোহ, আর লোভের পীড়ন তাঁদের চোখ ঢেকে রাখে।

৩. হতাশা — শুনছে না কেউ, বোঝেও না
তিনি কথা বলেন, তবুও কেউ শোনে না। তাঁর সতর্কতা উপহাসে পরিণত হয়। কেউ বলেন — “তুমি অনেক আদর্শের কথা বলো, কিন্তু এগুলো দিয়ে পেট চলে না!” সমাজের এই কণ্ঠস্বর তাঁকে নিঃশব্দ এক অস্থিরতায় ফেলে দেয় — যেন এক অদৃশ্য কান্না।

৪. সহভোগিতা — দোষী না হয়েও কষ্ট পাওয়া
যখন তাঁর প্রিয়জন সত্যিই ভুলের ফলভোগ করেন — চাকরি হারান, সমাজচ্যুত হন, আইনি বিপাকে পড়েন — তখন তিনি নিজেও কষ্ট পান। যদিও তিনি ভুল করেননি, কিন্তু ভালোবাসা আর মানবিকতা তাঁকে কাঁদায়। এই সহভোগিতা শুধু দুঃখ নয় — এটি হৃদয়ের প্রমাণ।

৫. বিষণ্ণতা ও ক্লান্তি — চুপচাপ এক ধীর মৃত্যু
এই ধারাবাহিক যন্ত্রণার শেষে, একজন বিবেকবান মানুষ বিষণ্ণ হয়ে পড়েন। সমাজের প্রতিটি দুর্নীতির খবর, প্রতিটি ব্যর্থতার গল্প তাঁকে আহত করে। কেউ তাকে জিজ্ঞেস করে না, “তুমি কেমন আছো?” — কারণ সমাজ ধরে নেয় সে ঠিক আছে। কিন্তু ভেতরে তিনি ক্লান্ত, নিঃশেষ। নিঃশব্দ, নিঃসঙ্গ।

উদাহরণ: বিদেশে করি, দেশে করি না — কেন?
একজন প্রবাসী বাংলাদেশি বিদেশে ক্লিনার, ওয়েটার বা নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে লজ্জা পান না। তিনি বলেন — “সৎভাবে টাকা উপার্জন করছি, সেটাই বড় কথা।” কিন্তু দেশে ফিরে সেই একই ব্যক্তি যদি একটা ছোট চায়ের দোকান খুলতে চান — তখনই সমস্যা শুরু হয়।

“এত পড়াশোনা করে চা বেচিস?” — প্রশ্ন আসে চারপাশ থেকে। “কাজ নাই নাকি তোর?” — সমাজ উপহাস করে। অথচ এই ব্যক্তিই প্রবাসে সম্মানের সঙ্গে কাজ করে দেশের জন্য রেমিটেন্স পাঠান।

তবে দেশে এসে, সমাজের চোখে তিনি “ফেইল”। কেন? কারণ আমরা কাজকে নয়, পদবিকে সম্মান করি। আমরা টাকা কিভাবে এসেছে তা দেখি না, দেখি কতটা এসেছে।

এভাবেই সমাজ আমাদের এমন এক মানসিক দাসত্বে বন্দী করেছে — যেখানে “লজ্জা” জড়ায় সৎ কাজে, আর “সম্মান” জোটে দুর্নীতিতে। এই দ্বিচারিতা ভাঙতেই হবে।

তাহলে কীভাবে সম্ভব সৎভাবে উপার্জন?
বাংলাদেশে আজ এমন এক বাস্তবতায় আমরা বাস করছি, যেখানে সততার পথ অনেক সময়ই কণ্টকাকীর্ণ বলে ধরে নেওয়া হয়। নৈতিকতা যেন শুধু বক্তৃতায় থাকে, বাস্তবে নয়। “সৎ থাকলে চলা যায় না”, “বোকা হলে তবেই সৎ হও”, — এমন সব বাক্য আজ সমাজের অলিখিত বাণী হয়ে উঠেছে। অথচ এই মনোভাবটাই আমাদের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক বন্ধন ও জাতীয় চরিত্রকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে।

১. ‘সবাই করে তাই আমিও করি’ — এই মানসিকতা থেকে বের হওয়া দরকার
দুর্নীতি, অসদাচরণ ও অনৈতিকতার অন্যতম পুষ্টিকর ভিত্তিই হলো এই ভুল মনোভাব। এটি দায়িত্ব এড়ানোর একটি আরামদায়ক অজুহাত। কিন্তু একটু চিন্তা করুন—যদি সবাই ভুল করে, তাতে কি ভুলটা সঠিক হয়ে যায়? কেউ রাস্তা পার হবার সময় ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করলে কি আপনিও করবেন? একজন বিবেকবান মানুষ যখন বলেন “না, আমি এটা করব না”, তখন তিনিই সমাজ পরিবর্তনের সূচনা করেন।

উদাহরণ: ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা প্রতিদিন অল্প অল্প করে ‘স্পিড মানি’ নিয়ে থাকেন। চারপাশে সবাই নেয় — তিনিও ভাবেন, “আমিও তো বঞ্চিত হবো কেন?” কিন্তু যদি তিনি একা থেমে দাঁড়ান, তাহলে তিনিই প্রমাণ করবেন — নীতির পথ শুধু সম্ভবই নয়, শক্তিশালীও।

২. সামাজিক সম্মানের সংজ্ঞা বদলাতে হবে
সম্মান এখন আর নীতির মাপকাঠিতে নয়, বরং প্রতারণা আর চালাকির স্কোরবোর্ডে নির্ধারিত হয়। আমরা এমন একজন মানুষকে সম্মান দিই যার দামি গাড়ি আছে, কিন্তু প্রশ্ন করি না—এই গাড়ির উৎস কী? অপরদিকে একজন সৎ, সাধারণ ব্যবসায়ীকে আমরা অবহেলা করি — কারণ তিনি চাকচিক্যহীন।

উদাহরণ: একজন এম.বি.এ পাশ করা যুবক নিজ এলাকায় ছোট্ট মুদি দোকান দিয়েছেন। পরিবার ও প্রতিবেশীরা মুখ বাঁকায়, “এত পড়াশোনা করে এসব?” অথচ তাঁর দোকানে ভেজাল নেই, ওজনে কম নেই, আর লভ্যাংশও নিয়মমাফিক। এই যুবকই আসলে প্রকৃত উদাহরণ — যিনি সৎ থেকে জীবিকা অর্জন করছেন।

৩. শিক্ষার সঙ্গে কর্মসংস্কৃতির যোগসূত্র গড়ে তোলা
আজকের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের তথ্য দেয়, কিন্তু মূল্যবোধ শেখায় না। আমরা ডিগ্রি অর্জন করি, কিন্তু শ্রমের মর্যাদা বুঝি না। যার ফলে শিক্ষিতরাও সৎ ও ছোটখাটো পেশায় যেতে লজ্জা বোধ করেন, ফলে দুর্নীতির দিকেই তারা ঝুঁকে পড়েন।

উদাহরণ: বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্রী ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করেন। কিন্তু আত্মীয়রা বলে, “এ তো বেকার!” অথচ তিনি কারও ঘুষ খান না, কারও উপর নির্ভর করেন না। এমন বাস্তব উদাহরণ যত বেশি তুলে ধরা হবে, তরুণদের মধ্যে তত বেশি পরিবর্তন আসবে।

৪. নতুন প্রজন্মের মানসিকতা গঠনে মূল্যবোধের শিক্ষা জরুরি
শিশুরা বড় হয় দেখে — তারা শুনে নয়, দেখে শেখে। বাবা-মা যদি বলেন “সৎ হও”, কিন্তু বাস্তবে মিথ্যা বলেন, ঘুষ দেন, দুর্নীতিপরায়ণ লোকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন — তাহলে সন্তান কি শিখবে? তাই ঘরে ঘরে সততার সংস্কৃতি না গড়ে উঠলে কোনো স্লোগান কাজ করবে না।

করণীয়: শিক্ষাব্যবস্থায় “নৈতিক শিক্ষা” শুধু নামমাত্র নয়, বাস্তব জীবনের গল্পের মাধ্যমে শেখাতে হবে। একটি শিশুকে দেখাতে হবে যে একজন সৎ কৃষক দেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী কতটা সম্মানজনক কাজ করেন।

৫. নীতিবান মানুষদের নেতৃত্বে আসতে হবে
সমাজে কিছু মানুষ এখনও আছেন যারা আপোষ করেননি। কিন্তু তারা নীরব, আড়ালে। দরকার, তাঁরা যেন সামনে আসেন — মিডিয়া, সামাজিক প্ল্যাটফর্ম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান — এসব জায়গায় তাঁরা হোক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

উদাহরণ: একজন সৎ সরকারি কর্মকর্তা যিনি একাধিক ঘুষের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন — এমন গল্প মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া উচিত। একজন স্কুল শিক্ষক যিনি প্রতিদিন সময়মতো ক্লাস নেন, কেউ না দেখলেও — তিনিই হওয়া উচিত রোল মডেল।

সৎ মানুষরা যদি পিছিয়ে পড়েন, তাহলে দুর্নীতির জয় অবশ্যম্ভাবী
আমরা যদি এই বাস্তবতাকে মেনে নেই — “সৎভাবে চললে কিছু হয় না”, তাহলে আমরা নিজেরাই সমাজের ভিত ধ্বংস করছি। আমরা প্রতিটি সৎ মানুষকে যদি সাহস না দিই, বরং লজ্জা দিই, তাহলে দুর্নীতিবাজদের পথ আরও প্রশস্ত হয়।

আমাদের দরকার—
• কাজকে মর্যাদার চোখে দেখা, লজ্জার নয়
• লোভকে চিনতে শেখা এবং তার সঙ্গে সংগ্রাম করা
• দুর্নীতির বিপরীতে অবস্থান নেওয়ার সাহস
• পরিবার ও সমাজে সততার গল্প ছড়িয়ে দেওয়া
• নিজের বিবেককে দুর্বল হতে না দেওয়া

সবার শেষে, এই সত্যিটা মনে রাখা জরুরি: সৎ উপার্জন কখনো ছোট নয়। ছোট আয় হতে পারে, কিন্তু যদি তা নীতির ভিত্তিতে হয় — সেটাই বৃহত্তর সম্মান।

আপনি হয়তো বিলাসী জীবন পাবেন না, কিন্তু আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারবেন। কারও সামনে হাত পাততে হবে না — সেই মুক্তি, সেই গর্বই আসল সফলতা।

যখন সততা হয়ে ওঠে সাহসের আরেক নাম — বাস্তব মানুষ, জীবন্ত অনুপ্রেরণা

একজন আদর্শ মানুষ কেবল নিজের জন্য সৎ থাকেন না—তিনি চারপাশের মানুষদেরও সাহস জোগান, সঠিক পথের শক্তি হতে পারেন। এই সমাজে এমন অনেকেই আছেন যারা সীমিত সামর্থ্য নিয়েও নিজেদের আত্মমর্যাদা ধরে রেখেছেন, অন্যায় পথে যাননি। এমন কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরলে আমরা দেখব, বিবেকবান মানুষরাও ইতিহাস লিখতে পারেন।

১. আলতাফ হোসেন: রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে ‘সৎ ব্যবসায়ীর’ প্রতীক
ঢাকার মিরপুরে আলতাফ হোসেনের ছোট্ট একটি চায়ের দোকান আছে। আশপাশে সবাই জানে, তিনি অতিরিক্ত এক পয়সাও নেন না। বরং কেউ যদি ভুল করে বেশি টাকা দিয়ে দেন, তিনি সেটা ফেরত দিয়ে দেন হাসিমুখে।

একবার তার দোকানের সামনে একজন মানিব্যাগ ফেলে যান — ভিতরে প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা! সবাই বলেছিল, “ভাগ্য এসেছে, রেখে দে।” কিন্তু আলতাফ হোসেন দুই দিন অপেক্ষা করে, লোকটিকে খুঁজে বের করেন এবং পুরো টাকা ফিরিয়ে দেন। সেই দিন থেকে আলতাফ ভাইয়ের দোকানে কাস্টমারের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, টাকা দিয়ে ইজ্জত কেনা যায় না, কিন্তু ইজ্জত থাকলে টাকা আসবেই।

২. রুনা আক্তার: সৎ ফ্রিল্যান্সার থেকে ১৫ জন নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী
কুমিল্লার এক গ্রামে বেড়ে ওঠা রুনা আক্তার ইন্টারনেট চালাতে শিখেছিলেন এক আত্মীয়ের ফোন ধার করে। ইউটিউব দেখে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ শিখে শুরু করেন ফাইভার ও আপওয়ার্কে কাজ করা। প্রথম ছয় মাস কোনো আয় না হলেও, তিনি ভেঙে পড়েননি। কখনো ডেটা কেনার টাকা জোগাড় করতে কাঁথা সেলাই করেছেন, কিন্তু কখনো ফেক ক্লায়েন্ট বা অনৈতিক কাজ করেননি।

আজ তিনি নিজের একটি ছোট অফিস খুলেছেন। সেখানে ১৫ জন নারী কাজ করেন — সবাই তাঁর শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমি শুধু টাকা নয়, মানসিক শান্তিও চাই। সৎভাবে উপার্জনই আমাকে রাতে নিশ্চিন্ত ঘুম দেয়।

৩. রফিকুল ইসলাম: সরকারি চাকরির অফার ফিরিয়ে নিজ গ্রামে ফিরে যাওয়া এক কৃষকের গল্প
একজন মেধাবী ছাত্র, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু যখন তাঁর পরিবার জানায়, নিয়োগের জন্য ঘুষ দিতে হবে — তিনি সে সুযোগ ছেড়ে নিজ গ্রামে চলে আসেন।

আজ তিনি অর্গানিক কৃষিকাজ করছেন, স্থানীয় কৃষকদের ট্রেনিং দিচ্ছেন, নিজের ব্র্যান্ড গড়েছেন “সততা কৃষি” নামে। আয় হয়তো কম, কিন্তু গ্রামের মানুষ তাকে এখন নেতা হিসেবে দেখে। তিনি বলেন, আমি রাষ্ট্রের চাকরি করিনি, কিন্তু সমাজের জন্য কিছু করছি — সেটা আমার কাছে অনেক বড়।

এই মানুষগুলোর গল্প আসলে কাদের জন্য? এটা তাদের জন্য, যারা ভাবেন — সবাই চুরি করলে আমি কেন করব না? এটা তাদের জন্য, যারা মনে করেন — সৎ থেকে কিছু হয় না। এবং এটা তাদের জন্যও, যারা এখনো দ্বিধায় আছেন, কোন পথে যাবেন।

আমরা যখন সত্যের পথ থেকে সরে যাই, তখন শুধু নিজের ক্ষতি করি না— আগামী প্রজন্মের সামনে ভুল আদর্শ তুলে ধরি। আর আমরা যখন কারও গল্প শুনে বলি, উনি পেরেছেন, আমিও পারব— তখনই বদলটা শুরু হয়।

সমাপ্তি: ছোট আয়ের ভেতরও বড় গৌরব থাকে

সৎভাবে উপার্জন মানেই কষ্টের জীবন নয় — বরং তা হলো সম্মানের জীবন, যেখানে রাতে ঘুম ভেঙে মনে পড়ে না, “আমি কারো টাকা খেয়ে ফেলেছি কি না!”

আজ যদি কিছু মানুষ জেগে উঠেন বিবেকের আলোয়, তবে আগামীকাল বাংলাদেশ হবে এমন এক দেশ, যেখানে কর্মকে অসম্মান করা হবে না, এবং বিবেকবান মানুষদের নিঃসঙ্গতা থাকবে না।

তাই চলুন, ছোট কাজকে সম্মান দিই, সৎ মানুষদের সাহস দিই এবং নিজেদের বিবেককে শ্রদ্ধা করি।

কারণ বিবেক হারালে শুধু মানুষ হারায় না — হারায় একটি সমাজ, একটি জাতি।

বিকল্প একটাই: সৎ মানুষরা নিজেদের দুর্বল ভাবা বন্ধ করুক। হোক ছোট উপার্জন, তবু সেটা হোক মাথা উঁচু করে। কারও কাছে হাত পাততে না হয়— সেটাই সবচেয়ে বড় গৌরব।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
শেয়ার