ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা বৃদ্ধিতে চাপ দিয়েছে বিএসইসি

পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে আবারও তালিকাভুক্ত ৬০টি কোম্পানির কাছে তাদের পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির বিষয়ে রোডম্যাপ চেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত থাকতে চাইলে এসব কোম্পানির ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। ঈদুল আজহার ছুটির আগে এবিষয়ে কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগেও এসব কোম্পানিগুলোকে তাদের পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিল বিএসইসি। কিন্তু বেশিরভাগ কোম্পানিই তা মানতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে এবার তালিকাভুক্তির শর্ত পূরণে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সংস্থাটি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) তালিকাভুক্তি বিধিমালা অনুসারে, মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত থাকতে হলে একটি কোম্পানির ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকা আবশ্যক। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই শর্ত পূরণে ব্যর্থতাকে সিকিউরিটিজ আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করছে।

সূত্র জানায়, স্বল্প পরিশোধিত মূলধনের স্টকগুলো অত্যন্ত অস্থির প্রকৃতির হয় এবং কিছু অসাধু বিনিয়োগকারী দ্বারা এগুলো সহজেই কারসাজির শিকার হয়। এটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়। কারণ প্রায়শই স্বল্প মূলধনের শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগ করে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই ক্ষতির শিকার হন, যদিও কিছু ক্ষেত্রে স্বল্প মেয়াদে লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকে।

জানা গেছে, স্টক ডিভিডেন্ড ইস্যু করা মূলধন পূরণের একটি বৈধ উপায় নয়, কারণ এটি কেবল শেয়ারের সংখ্যা বাড়ায় কিন্তু প্রকৃত মূলধন বৃদ্ধি করে না। বিএসইসি চায় কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী করার জন্য প্রকৃত তহবিল সংগ্রহ করুক।

এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ৬৪টি কোম্পানিকে তাদের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের শর্ত পূরণের জন্য পরিকল্পনা জমা দিতে বলেছিল, যাতে তারা স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত থাকতে পারে। ওই বছর কমিশন একটি কমিটি গঠন করে এই ফার্মগুলোর সামগ্রিক অবস্থা যাচাই করতে এবং স্বল্প পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিগুলোর আর্থিক কর্মক্ষমতা উন্নত করার একটি প্রক্রিয়া খুঁজতে বলেছিল। কোম্পানিগুলোকে চিঠি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাদের পরিকল্পনা প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছিল।

বর্তমানে এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১১টি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকার নিচে, ১৫টি কোম্পানির ১০ কোটি টাকার নিচে, ২১টি কোম্পানির ২০ কোটি টাকার নিচে এবং বাকি কোম্পানিগুলোর ৩০ কোটি টাকার নিচে মূলধন রয়েছে। এসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে কিছু ভালো পারফর্ম করলেও বেশ কয়েকটি লোকসানে রয়েছে এবং কয়েকটি তাদের কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো সত্ত্বেও কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম কোনো বৈধ তথ্য বা যৌক্তিক কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে, যা বিনিয়োগকারী এবং বাজার বিশ্লেষকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, এই পরিস্থিতিতে অনেক কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে তেমন আগ্রহ দেখান না। কারণ তারা এই স্বল্প মূলধনের পরিস্থিতিকে এক ধরনের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। বিএসইসির এই নতুন পদক্ষেপ বাজারের শৃঙ্খলা ফেরাতে কতটা কার্যকর হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম অর্থসংবাদ’কে বলেন, কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে; তারা যেন ইমিডিয়েট রোডম্যাপ করে। এটি একটি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত। আর মূলধন বৃদ্ধির বিষয়টি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কে কিভাবে করতে চায় কোম্পানিগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অর্থসংবাদ/কাফি

শেয়ার করুন:-
শেয়ার