ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের মুখী শাহ্ মিসকিন মাজারের কাছে অভিনেতা সমু চৌধুরীকে শুধু গামছা পরে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তার এই ছবি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকে তাকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বলে ভুল ধারণা করেন। তবে, চিকিৎসকদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছেন এবং তিনি কোনো মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন না। মূলত, তিনি একজন মাজারভক্ত এবং ধ্যানের উদ্দেশ্যে মাজারে এসেছিলেন।
উদ্ধার ও চিকিৎসকদের বক্তব্য:
ছবি ভাইরাল হওয়ার পর দ্রুত সমু চৌধুরীকে নিকটস্থ পাগলা থানার মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়। গফরগাঁও উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ডা. জামাল উদ্দিন জানান, “সমু চৌধুরী দেশের একজন বিশিষ্ট অভিনয়শিল্পী। হঠাৎ করে মশাখালি ইউনিয়নের জয়নাল আবেদীন মাজারে তাকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখতে পায় স্থানীয় জনতা। পরে গণমাধ্যমের সংবাদে বিষয়টি ভাইরাল হলে আমাদের নজরে আসে। উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে আমিসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি টিম তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সেখানে উপস্থিত হয়ে সমু চৌধুরীর সাথে দীর্ঘ এক ঘণ্টা কথা বলি। এ সময় তাকে বেশ সুস্থ সাবলীল মনে হয়েছে। তিনি অতীতের কথা মনে করতে পারছেন। তাকে দেখে মোটেও পাগল বা মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হয়নি। আমাদের সামনে তিনি তার পরিবারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেছেন।”
মাজারভক্ত হিসেবে পরিচিতি:
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও জানান, অভিনেতা সমু চৌধুরী একজন মাজারভক্ত মানুষ। তিনি নিজেই চিকিৎসকদের নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি এর আগেও একাধিকবার এই মাজারে এসেছেন এবং এই এলাকার রাস্তাঘাটও তিনি ভালো করে চেনেন। তার বাড়ি যশোর জেলায় এবং তিনি পরিবারসহ ঢাকায় থাকেন। গতকাল সোহরাওয়ার্দী এলাকা থেকে তিনি এই মাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানের মাজার ভ্রমণ করেন। মাজারে এসে এই অভিনেতা প্রশান্তি পান এবং মূলত ধ্যান করার জন্যই তিনি মাঝে মাঝে মাজারে আসেন।
পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ও বর্তমান অবস্থান:
ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন জানান, পরিবারের লোকদের সাথে কথা হয়েছে এবং তারা ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছেন। বর্তমানে সমু চৌধুরী মাজারেই অবস্থান করছেন। পরিবারের সদস্যরা এলে তিনি তাদের সাথে ঢাকায় ফিরে যাবেন বলে জানিয়েছেন। ডাক্তার এবং স্থানীয় প্রশাসনের সামনে তিনি তার জীবনের অনেক স্মৃতিচারণ করেছেন এবং কবিতা আবৃত্তিসহ তার বিভিন্ন অভিনয়শিল্পও দেখিয়েছেন। তিনি পরিবারের সকলের সাথে তাদের সামনে ফোনে কথা বলেছেন, যা প্রমাণ করে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন নন।
পাগলা থানার বক্তব্য:
পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফেরদৌস আলম জানান, “অভিনেতা সমু চৌধুরী একজন সুস্থ-সবল মানুষ। মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়ানোই তার নেশা। বুধবার রাতে এই মাজারে এসে তিনি ধ্যানে লিপ্ত ছিলেন। যেহেতু এক কাপড়ে তিনি ঢাকা থেকে এখানে এসেছেন, সকালবেলা গোসল করার পর তার কোনো কাপড় ছিল না। ফলে গামছা পড়ে তিনি একটি গাছের নিচে শুয়ে ছিলেন। এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে গণমাধ্যম এবং ফেসবুকে তাকে নিয়ে ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়।”
তিনি আরও জানান, তার পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছে। প্রশাসন এবং চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে তাকে ভালো পরিবেশে থাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি জানিয়েছেন আপাতত মাজারেই অবস্থান করবেন এবং পরিবারের সদস্যরা এলে ঢাকায় ফিরে যাবেন।