ক্যাটাগরি: আন্তর্জাতিক

ডালাসে হামের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত: আক্রান্ত তরুণী ছিলেন ‘পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত’

ডালাস কাউন্টি হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস (DCHHS) ডালাসে হামের প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের খবর জানিয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তি একজন ২৫ বছর বয়সী নারী, যিনি হামের জন্য পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত ছিলেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ এই খবর নিশ্চিত করেছে।

DCHHS-এর তথ্যমতে, আক্রান্ত ওই নারী গত ৩০ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম ছিলেন। তিনি ইতোমধ্যে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সম্ভাব্য সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত ও সতর্ক করতে কাজ শুরু করেছেন।

হামের সম্ভাব্য সংক্রমণস্থল হিসেবে দুটি স্থানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে:

  • ‘লেমা কফি, ১০২৩ ইস্ট ফিফটিন্থ স্ট্রিট, প্লানো, টেক্সাস’
  • ‘ফার্স্ট ব্যাপটিস্ট চার্চ, ৩৬৬৫ ডব্লিউ প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ হাইওয়ে, প্লানো, টেক্সাস’

হাম: একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ একসময় মনে করা হতো হাম বুঝি ইতিহাসের পাতায় চাপা পড়েছে, কিন্তু বাস্তবতা বলছে, এই ভাইরাস এখনো জীবন্ত এবং মারাত্মকভাবে সক্রিয়। এটি একটি অত্যন্ত সংক্রামক রোগ। একজন আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন, যা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাতাসে ভেসে বা কোনো পৃষ্ঠে অবস্থান করতে পারে।

হামের লক্ষণ: শুরুর দিকে এটিকে সাধারণ সর্দি-জ্বর বলে ভুল হতে পারে। জ্বর, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া ও চোখ লাল হওয়া—সব মিলিয়ে অনেকটা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো। কিন্তু এরপরই আসে হামের বিশেষ চিহ্ন: লালচে, দাগযুক্ত র‍্যাশ, যা মুখ থেকে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। কখনো মুখের ভেতরেও ছোট ছোট সাদা দাগ দেখা যায়, যেগুলোকে কোপলিক স্পট (Koplik spots) বলা হয়। একবার র‍্যাশ দেখা দিলে তা সাধারণত এক সপ্তাহ থেকে যায়, আর এ সময় শরীরও দুর্বল হয়ে পড়ে।

হামের জটিলতা ও ঝুঁকি: নবজাতক, গর্ভবতী নারী এবং দুর্বল রোগপ্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য হাম হতে পারে প্রাণঘাতী। হামের জটিলতা হিসেবে কানের সংক্রমণ, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া এবং মারাত্মক মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনসেফালাইটিস) পর্যন্ত হতে পারে।

প্রতিরোধ ও ভ্যাকসিন: হাম পুরোপুরি প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। মাত্র এক বা দুই ডোজ এমএমআর (মিজলস, মাম্পস, রুবেলা) ভ্যাকসিনেই আজীবন সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। প্রথম ডোজেই প্রায় ৯৩ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ডোজে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৭ শতাংশে। তবে টিকাদান অনীহা, ভুল তথ্য বা ভীতি থেকে অনেকেই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন না, যার ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও কেন আক্রান্ত হয়? একটি প্রশ্ন থেকেই যায়: ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও কেউ আক্রান্ত হয় কীভাবে? উত্তর হলো—সবার দেহে একই রকম প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় না। কেউ কেউ প্রথম ডোজ নেওয়ার পরও পুরোপুরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারেন না। আবার অনেকেই দ্বিতীয় ডোজ নেন না। এমন কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রও আছে, যেখানে দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ না করায় সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হয় না। তবে আশার কথা, পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত কেউ আক্রান্ত হলেও সাধারণত তাদের উপসর্গ অনেকটাই মৃদু হয়।

চিকিৎসা: হামের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত হলে সাধারণত জ্বর কমানোর ওষুধ, প্রচুর তরল, বিশ্রাম এবং সহায়ক চিকিৎসাই দেওয়া হয়। তাই রোগ হলে চিকিৎসা নেয়ার থেকে প্রতিরোধই সবচেয়ে ভালো পথ।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার