অর্থনীতি
কাগজে চামড়ার দাম বাড়লেও বাজারে বাড়েনি, হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

এবারের ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে রাস্তায় ফেলে রাখা বা পুঁতে ফেলার ঘটনা গত বছরের তুলনায় কম হলেও, কাঁচা চামড়ার ন্যায্য দাম না পাওয়ার অভিযোগ এবারও ছিল তীব্র। ছোট মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, ফড়িয়াদের কাছে জিম্মি হয়ে তারা কম দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
অন্যদিকে, আড়তদারেরা বলছেন, লবণ মাখানো ছাড়া কাঁচা চামড়ার নির্ধারিত কোনো দাম নেই। অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী না জেনে নিম্নমানের চামড়া কিনেছেন বলেই তারা কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি করতে পারেননি। তবে আড়তের মালিকদের দাবি, এমন ঘটনা খুব কমই ঘটেছে।
চামড়ার নির্ধারিত ও প্রকৃত বাজার মূল্য:
এ বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৬০-৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা গত বছর ছিল ৫৫-৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে এই দাম ছিল ৫৫-৬০ টাকা (গত বছর ৫০-৫৫ টাকা)। খাসির লবণযুক্ত চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২-২৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এছাড়া, ঢাকায় কাঁচা চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে সর্বনিম্ন ১ হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, ঢাকায় মাঝারি আকারের গরুর ২৫ বর্গফুটের একটি লবণযুক্ত চামড়ার দাম হওয়ার কথা ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬২৫ টাকা।
তবে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, পুরান ঢাকার পোস্তাসহ বিভিন্ন এলাকার তথ্য অনুসারে, ঈদের দিন লবণ ছাড়া বড় ও মাঝারি গরুর কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায়। তুলনামূলক ছোট ও কিছুটা খারাপ মানের চামড়ার দাম ছিল মাত্র ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। ঢাকার বাইরে এই দাম আরও কম ছিল।
মৌসুমি ব্যবসায়ীরা হতাশ:
সরকার নির্ধারিত দাম না পেয়ে খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়েছেন। ঝিনাইদহের মৌসুমি কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ফিজার মোল্লা বলেন, “আড়তদারেরা মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় চামড়া কিনছেন। নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসায়ীর হাতে চামড়ার ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ থাকায় আমরা সিন্ডিকেটের ফাঁদে পড়েছি।”
ফেনীর পরশুরামে কোরবানির গরুর চামড়া নদীতে ফেলার অভিযোগে রোববার রাতে শুক্কুর আলী (৪৩) নামে এক মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। শুক্কুর আলী জানিয়েছেন, ৬০০ টাকা দিয়ে চামড়া কিনে বিক্রি করতে না পারায় তিনি তা নদীতে ফেলে দিয়েছেন। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায়, আর ছাগলের চামড়া মাত্র ১০ টাকায়। অনেকে ছাগলের চামড়ার দাম না পেয়ে নদীতে ফেলে দিয়েছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।
আড়তদার ও সরকারের বক্তব্য:
ঢাকার পোস্তা এলাকায় কাঁচা চামড়ার আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি মঞ্জুরুল হাসান বলেন, “চামড়ার দাম না পাওয়ার মূল কারণ সময়মতো লবণ দিয়ে সংরক্ষণ না করা। এতে অনেক চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট চামড়ার জন্য আড়তদারেরা ভালো চামড়ার দাম দেবেন কীভাবে?”
ঢাকার আড়তদারদের দাবি, লবণ ছাড়া ভালো মানের এক পিস চামড়া ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় কেনেন তাঁরা। লবণযুক্ত হলে কিনবেন ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়।
মৌসুমি ব্যবসায়ীদের চামড়ার দাম না পাওয়ার বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “আমরা যে দাম নির্ধারণ করেছিলাম, তা লবণসহ চামড়ার দাম। অভিজ্ঞতাহীন কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া নিয়ে আধা পচা করে ফেলছে। আধা পচা চামড়া ৭০০-৮০০ টাকা বিক্রি হলেও তো অনেক বেশি।”
কেনাবেচা ও সংরক্ষণ পরিস্থিতি:
সারা দেশ থেকে ঢাকায় কাঁচা চামড়া পরিবহনে সরকার ১০ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা মেনে গতকাল পর্যন্ত ঢাকার বাইরে থেকে পোস্তার আড়ত কিংবা সাভারের ট্যানারিগুলোতে চামড়া আসেনি। বিএইচএসএমএ সূত্রে জানা যায়, ঈদের দিন থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চার দিনে ঢাকার পোস্তায় মাত্র ৮০ হাজার পিস চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে। আড়তদারেরা রাজধানীর ভেতর থেকে কাঁচা চামড়া কিনে নিজেরা লবণ দিয়ে এগুলো সংরক্ষণ করেছেন। সরকার-নির্ধারিত সময় শেষে ১৭ তারিখ থেকে লবণযুক্ত চামড়া কেনা শুরু হবে। আড়তদারদের পাশাপাশি ট্যানারিগুলোও নিজেদের চামড়া কেনা শুরু করবে।
২৫ লাখের বেশি চামড়া সংরক্ষণ:
গত বছর দেশে মোট ১ কোটি ৪ লাখ গরু, ছাগল ও মহিষ কোরবানি হয়েছিল। এ বছর তা কিছুটা কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার কোরবানির তথ্য সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। এবার দুই সিটিতে মাত্র ৬ লাখ ৩২ হাজার ৮৩৪টি কোরবানি হয়েছে, যা গত বছরের অর্ধেক।
তবে, কোরবানির সংখ্যা যা-ই হোক, এবার ট্যানারির মালিকদের ৮০-৯০ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে। এর বিপরীতে সরকারের দেওয়া লবণ দিয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ২৫ লাখের বেশি চামড়া সংরক্ষণের হিসাব পাওয়া গেছে।
তথ্য অনুসারে, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং কোরবানির ৭ লাখ ৭৪ হাজার গরু, মহিষ ও ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেছে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৪ পিস গরু, মহিষ ও ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া বরিশাল বিভাগে ১ লাখ ৬৭ হাজার, রংপুর বিভাগে ২ লাখ ৮১ হাজার, রাজশাহী বিভাগে ২ লাখ ৮৭ হাজার এবং সিলেট বিভাগে ২ লাখ ৯ হাজার চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে। সাভারের ট্যানারিপল্লিতে ৩ লাখ ৮৬ হাজার চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে।
দাম নির্ধারণ বর্গফুটে, বিক্রি পিসে:
চামড়ার দাম বর্গফুটে নির্ধারণ হলেও বিক্রি হয় সাধারণত পিস হিসাবে। মৌসুমি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে আড়তদার ও ট্যানারির মালিক সবাই পিস হিসাবেই চামড়া কেনেন। এক্ষেত্রে ছোট-বড় চামড়ার দামে কিছুটা পার্থক্য হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পোস্তার একজন আড়ত মালিক জানান, “আমরা দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসা করছি। চামড়া দেখলে অনুমান করতে পারি কত ফুট হবে। সে অনুসারেই দামদর করে চামড়া কিনে থাকি। সাধারণত ২ লাখ টাকা দামের গরুর চামড়া ২৭ থেকে ২৮ বর্গফুট হয়। লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হলে তার দাম আসে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা।”

অর্থনীতি
১৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৪২ কোটি ডলার

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ১৬ দিনে ১৪২ কোটি ১০ লাখ (১.৪২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (এক ডলার ১২১ টাকা ধরে) প্রায় ১৭ হাজার ১৯৪ কোটি ১০ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম ১৬ দিনে ১৪২ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। গত বছরের একই সময়ে (২০২৪ সালের জুলাইয়ের ১৬ দিন) এসেছিল ১৩১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ে তুলনায় ১০ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা প্রায় এক হাজার ২৩৪ কোটি টাকার বেশি এসেছে।
এর আগে সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠান প্রায় প্রায় ২৮১ কোটি ৮০ লাখ (২.৮২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার বেশি। জুন মাসে প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা এক হাজার ১৪৭ কোটি টাকা।
এটি একক মাস হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগের মাস মে’তে দেশে এসেছে ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তারও আগে মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত পুরো সময়ে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার আসে। পারের মাস মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে আসে ২৭৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এবং সবশেষ জুন মাসে এসেছে ২৮২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।
অর্থনীতি
তুলাসহ গার্মেন্টসের বিভিন্ন কাঁচামালে উৎসে কর বাতিল

তুলাসহ তৈরি পোশাকের বিভিন্ন কাঁচামাল পণ্যে উৎসে কর প্রত্যাহার করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (করনীতি) এ কে এম বদিউল আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আয়কর আইন, ২০২৩ (২০২৩ সনের ১২নং আইন) এর ধারা ৩৪৩ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, উৎসেকর বিধিমালা, ২০২৪ এর বিধি ৮ এর উপ-বিধি অনুযায়ী পণ্যসমূহ আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকৃত পণ্য মূল্যের ওপর উৎসে কর সংগ্রহের হার ০ শতাংশ (শূন্য শতাংশ) নির্ধারণ করা হলো।
পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- তুলা (বাছাই করা তুলা, আঁচড়ানো তুলা), সিনথেটিক স্টেপল ফাইবার, অ্যাক্রেলিক, আর্টিফিশিয়াল স্ট্যাপল ফাইবার ইত্যাদি।
চলতি বছর তুলা আমদানিতে দুই শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করেছিল এনবিআর। এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন ব্যবসায়ীরা।
বিটিএমএর তথ্যানুযায়ী, সংগঠনটির এক হাজার ৮৫৮টি সুতাকল, উইভিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং বস্ত্রকল রয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার। দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাকশিল্পের সুতা ও কাপড়ের ৭০ শতাংশের জোগানদাতা হচ্ছে বস্ত্র খাত।
এই উৎসে কর বা আগাম আয়কর প্রত্যাহারের ফলে দেশের স্পিনিং ও টেক্সটাইল মিলগুলোর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এআইটি আরোপের ফলে ব্যবসা পরিচালনার খরচ বেড়ে যায় এবং রপ্তানিমুখী পোশাক খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ক্ষুণ্ন হয়। এই সিদ্ধান্তে টেক্সটাইল মিল ও স্পিনারদের কার্যকর মূলধনের ওপর চাপ কমবে এবং তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটি সময়োপযোগী একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই পদক্ষেপ শিল্পকে আরও প্রতিযোগিতামূলক রাখতে সহায়ক হবে।
ছাড়ের আওতায় রয়েছে ৫২০১ থেকে ৫৫০৭ পর্যন্ত এইচএস কোডসমূহ, যা কাঁচা তুলা ও স্পিনিং প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত সিনথেটিক ফাইবার অন্তর্ভুক্ত করে। এনবিআরের প্রথম সচিব (কর নীতি) স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই কর মওকুফ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।
এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, স্থানীয় স্পিনিং মিলগুলোর কাঁচামাল আমদানিতে আগাম আয়কর প্রত্যাহার শুধু একটি কর নীতির পরিবর্তন নয়; এটি একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত, যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং একটি শক্তিশালী, প্রতিযোগিতামূলক ও টেকসই টেক্সটাইল শিল্প গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) দীর্ঘদিন ধরেই ফাইবার আমদানিতে এআইটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিল, কারণ তারা বলছে রপ্তানি সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রতিষ্ঠানগুলো কর অব্যাহতির আওতায় থাকায় ইনপুট ট্যাক্স ও প্রকৃত আয়ের মধ্যে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়।
অর্থনীতি
৫ আগস্ট সারাদেশে ব্যাংক বন্ধ

সারাদেশে আগামী মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ব্যাংক বন্ধ থাকবে। দিনটি ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে সরকার ঘোষিত ছুটির দিন হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেশের সব তপশিলি ব্যাংক বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ সাইট সুপারভিশ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
বাংলাদেশ সরকার, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গত ২ জুলাই জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সে উপলক্ষে দেশের সব অফিস-আদালতের মতোই তপশিলি ব্যাংকগুলোকেও ছুটির আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট সরকারি ছুটির দিন হিসেবে দেশের সব তপশিলি ব্যাংক বন্ধ থাকবে। অতএব, সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে এবং আর্থিক লেনদেন পরিকল্পনা করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের ইতিহাসে ৫ আগস্ট ২০২৪ একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। দীর্ঘদিনের দমনপীড়ন, ভোট কারচুপি, লুটপাট ও স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে আওয়ামী লীগ অবশেষে ক্ষমতা হারিয়েছে। শেখ হাসিনা, যিনি একযুগ ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে ধরে ছিলেন, শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণের বিজয় হয়েছে, আর বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফিরে আসার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
অর্থনীতি
এনবিআরের আরও ৩ কর পরিদর্শক বরখাস্ত

বদলির চিঠি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় আজ বৃহস্পতিবার আরও তিনজন কর পরিদর্শককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান পৃথক তিনটি আদেশ সই করেন। গত কয়েক দিনে সব মিলিয়ে ২৭ জন কর কর্মকর্তা–কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হলো।
আজ যারা বরখাস্ত হয়েছেন, তারা হলেন আয়কর, গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের আবদুল্লাহ আল মামুন; কর অঞ্চল-৬–এর কর পরিদর্শক রুহুল আমিন এবং কর অঞ্চল-২–এর কর পরিদর্শক লোকমান আহমেদ।
আদেশ অনুসারে পাঁচজন উপ–কর কমিশনারের বদলির আদেশ অবজ্ঞাপূর্বক প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায় এবং এর মাধ্যমে বদলি আদেশ অমান্যকারীদের সমর্থন করায় তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় কার্যধারা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮–এর ৩৯(১) ধারা অনুসারে তাদের এনবিআরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগপূর্বক সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। তারা সাময়িক বরখাস্তকালীন বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।
গত মাসে এনবিআরে আন্দোলনের জেরে কয়েক দিন ধরে এনবিআরের বিভিন্ন পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বরখাস্ত করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল বুধবারও উপকমিশনার থেকে নিরাপত্তাপ্রহরী পদের ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়। গত মঙ্গলবার ১৪ জন শুল্ক, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে সরকার। তাঁদেরও বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, গত মাসে এনবিআরে যে আন্দোলন হয়েছে, তারা সবাই ওই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। কেউ কেউ নেতৃত্বও দিয়েছেন। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন হয়। বরখাস্ত হওয়া মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এনবিআর ঐক্য পরিষদের সভাপতি এবং ঢাকার কর অঞ্চল-৮–এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা সহসভাপতি পদে আছেন।
গত মাসে রাজস্ব খাতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ২৮ ও ২৯ জুন সারা দেশে কাজ বন্ধ করে দেন তারা। এরপর ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করেন তারা। এরপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। আন্দোলন প্রত্যাহারের পরের এই পর্যন্ত তিনজন সদস্য ও একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। কাজ বন্ধ রাখার দায়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া এনবিআরের ২ জন সদস্যসহ ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। তাদের অধিকাংশই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা—এই দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর পর থেকে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে যৌক্তিক সংস্কারে দাবিতে প্রায় দেড় মাস আন্দোলন করেন।
অর্থনীতি
রিজার্ভ ফের ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ফিরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বুধবার (১৬ জুলাই) পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার ডলার বা ৩০ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম-৬) অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ২ হাজার ৪৯৯ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার, অর্থাৎ প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী দেশের রিজার্ভের পরিমাণ এখন আবারও ৩০ বিলিয়ন (৩০.০২ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়েছে।
এর আগে গত ৩ জুলাই পর্যন্ত দেশে মোট রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার, বিপিএম-৬ অনুযায়ী ছিল ২৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার। ওই সময় ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ছিল ২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
জুলাই মাসের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সদস্যদের ২ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার দায় পরিশোধ করেছে। এত বড় অঙ্কের দায় পরিশোধের পরও রিজার্ভে বড় ধাক্কা লাগেনি। বরং রিজার্ভ স্থিতিশীল রয়েছে এবং ১৬ জুলাই শেষে তা দাঁড়ায় ২৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলারে। বিপিএম-৬ অনুযায়ী হিসাব করলে সেই সময় রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক থাকায় রিজার্ভে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।