ক্যাটাগরি: আন্তর্জাতিক

অভিবাসন ইস্যুতে বিক্ষোভ: লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ জারি

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় ক্যালিফোর্নিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহর লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসন বিরোধী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিযানের প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভের মধ্যেই কারফিউ জারি করা হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন ব্যাস মঙ্গলবার রাতে এই ঘোষণা দেন।

মেয়র কারেন ব্যাস জানিয়েছেন, কারফিউটি স্থানীয় সময় রাত ৮টা থেকে পরের দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এবং শহরের মাত্র এক বর্গমাইল (প্রায় ২.৬ বর্গকিলোমিটার) এলাকা জুড়ে এটি প্রয়োগ করা হবে। তিনি বলেন, এই বিক্ষোভে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত বা ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। গত রাতেই ২৩টি দোকান লুট করা হয়েছে এবং ডাউনটাউন এলাকা জুড়ে ব্যাপক গ্রাফিতি হয়েছে, যা ব্যবসা ও সম্পত্তির বড় ক্ষতি করেছে।

মেয়র আরো বলেন, “ডাউনটাউন এলাকায় বসবাস বা কাজ না করলে দয়া করে ওই এলাকা এড়িয়ে চলুন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কারফিউ ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।” তিনি জানান, কারফিউ কয়েকদিন পর্যন্ত বহাল থাকতে পারে তবে তা শহরের মাত্র এক ছোট অংশে প্রযোজ্য।

তিনি আরও স্পষ্ট করেন, যদিও ঘটনার কেন্দ্রস্থল ডাউনটাউনের একটি ছোট অংশ, মিডিয়ায় তা এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন পুরো শহরে সঙ্কট চলছে, যা বাস্তবতা নয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, এই আংশিক কারফিউ ঘোষণা করা হলো এমন সময় যখন ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ অভিবাসন বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে লস অ্যাঞ্জেলেসে টানা পাঁচ দিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, আটলান্টাসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে।

এদিকে, ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম ট্রাম্প প্রশাসনের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মঙ্গলবার রাতে অঙ্গরাজ্যবাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি ট্রাম্পের পদক্ষেপকে ‘ক্ষমতার নির্লজ্জ অপব্যবহার’ বলে অভিহিত করেন। নিউজম বলেন, প্রেসিডেন্ট ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা বৃদ্ধি করে পরিস্থিতি খারাপ করছেন। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে এমনভাবে ব্যবহার করছেন যেন তারা কোনও শত্রু দেশের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে।

নিউজম আরও বলেন, প্রেসিডেন্টের টার্গেট করা মানুষরা সন্ত্রাসী নয়, তারা আমাদের সমাজের সাধারণ সদস্য — রান্নাঘরের কর্মী, মালী, দিনমজুর, দর্জি। এটা শক্তির প্রকাশ নয়, বরং দুর্বলতার পরিচয়। ট্রাম্পের সরকার আমাদের কমিউনিটিকে নিরাপদ করার চেষ্টা করছে না, বরং ভয়ভীতি ছড়িয়ে আঘাত করছে।

তিনি সতর্ক করেন, যদি কাউকে সন্দেহ বা গায়ের রঙের ভিত্তিতে পরোয়ানা ছাড়াই রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া যায়, তাহলে কেউই নিরাপদ নয়। স্বৈরশাসকরা প্রথমে এমন মানুষদের ওপর আক্রমণ চালায় যারা আত্মরক্ষায় অক্ষম, কিন্তু এখানেই থামে না।

অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মঙ্গলবার ফোর্ট ব্র্যাগ সেনাঘাঁটিতে মার্কিন সেনাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নিজের অবস্থানে অটল থাকার বার্তা দেন। তিনি বলেন, আমাদের বীর সেনারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দেশের জন্য বিদেশের মাটিতে রক্ত দিয়েছে, শুধু এটা দেখার জন্য নয় যে, এখন নিজ দেশে তৃতীয় বিশ্বের মতো বিশৃঙ্খলা ও অনুপ্রবেশের কারণে দেশ ধ্বংস হচ্ছে — যেমনটা ক্যালিফোর্নিয়ায় ঘটছে। আমি একজন কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে তা হতে দেব না, এটা কখনোই ঘটতে দেব না।

এমএস

শেয়ার করুন:-
শেয়ার