ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

প্রতিবারের মতো এবারও বাজেটকে অভিনন্দন জানালো ডিএসই

চরম সংকটে থাকা পুঁজিবাজার ঘিরে বাজেটে যে আশার আলো খুঁজছিলেন বিনিয়োগকারীরা, তা পূরণ হয়নি। টানা দরপতন আর কমে যাওয়া লেনদেনে বিপর্যস্ত পুঁজিবাজারে প্রত্যক্ষ কোনও প্রণোদনা না থাকায় বিনিয়োকারীদের হতাশা আরও বেড়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিলো বাজেটে শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে কার্যকর ও স্পষ্ট উদ্যোগ থাকবে, থাকবে মূলধনি মুনাফা বা লভ্যাংশ আয়ে কর রেহাই। কিন্তু এসব কিছুই মেলেনি ঘোষিত বাজেটে। অথচ প্রতিবারের মতো ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটকে পুঁজিবাজারবান্ধব বলে মন্তব্য করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ফ্যাসিস্ট সরকারের বাজেটেও বিনিয়োগকারীদের জন্য কার্যকরী কোনো উদ্যোগ না থাকলেও তখনও বাজেটকে অভিনন্দন জানিয়েছিলো ডিএসই। পুঁজিবাজারের মূল শক্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো উদ্যোগ না থাকলেও প্রতিবার বাজেটকে সমর্থন ও অভিনন্দন জানানোকে-‘হয়তো ডিএসই কিছু না বুঝে নইলে সরকারকে খুশি করাতেই’ এমনটি করে বলে মন্তব্য করেছে শেয়ারবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন। এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ডিএসইর চেয়ারম্যান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ উপদেষ্টাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানায়। সেই সঙ্গে বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব বলে মন্তব্য করেন।

এরআগে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপ না করাসহ কয়েকটি দাবি করেছিলো ডিএসই। কিন্তু বাজেটে তার কোনটিই রাখা হয়নি। অথচ বাজেট ঘোষণার পরেই সমর্থন জানিয়ে অভিনন্দন জানায় ডিএসই। সেসময় ডিএসই জানায়, উন্নয়ন ও উৎপাদনমুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থনীতিকে গতিশীল করার কৌশল নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, উন্নয়ন ও উৎপাদনমুখী পরিকল্পিত কর্মপন্থা ও ব্যবস্থাপনা কৌশল বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়াও, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সরকার পুঁজিবাজারকে আন্তর্জাতিককরণের লক্ষ্যে নানাবিধ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেটে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুঁজিবাজারের সহায়ক ইকোসিস্টেম ও সার্বিক সুযোগ সুবিধার উন্নয়ন করার জন্য আগের বছরের বাজেটের শেয়ারবাজারবান্ধব নীতি বলবত রাখায় ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে আবারো অভিনন্দন জানাচ্ছে।

এদিকে, দীর্ঘদিনের পতনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ নেমে এসেছে পাঁচ বছর আগের অবস্থানে। রাজপথে নামা বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা আশা করেছিলেন, নতুন সরকারের বাজেটে বাজারকে চাঙা করতে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের বাজেট প্রস্তাবে প্রত্যক্ষভাবে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনও উল্লেখযোগ্য প্রণোদনা দেখা যায়নি।

বাজেট পরবর্তী ডিএসইর প্রতিক্রিয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সমালোচনা করে বলেন, ডিএসই বরাবরই সরকারের খুশি করতে ব্যস্ত। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বাজেটে কোনো প্রকার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তবুও ডিএসইিএটাকে পুঁজিবাজারবান্ধব বলে মনে করছে। এটি নতুন নয়, ডিএসই সুযোগকে কাজে লাগায়। এরআগেও ফ্যাসিস্ট সরকারের বাজেটেও কোনো প্রকার উদ্যোগ না রাখলেও এমনকি ডিএসইর প্রস্তাব না রাখলেও তাতে সমর্থন ও অভিনন্দন জানিয়েছিলো।

তবে বাজেটে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারে পার্থক্য বাড়ানো, ব্রোকারেজ হাউজের লেনদেনে উৎসে কর হ্রাস এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব।

বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করহার শর্তসাপেক্ষে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার হবে সাড়ে ২৭ শতাংশ। তবে নির্ধারিত কিছু শর্ত পূরণ করলে এই ব্যবধান ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শর্ত হলো— সব ধরনের লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন করা এবং নির্ধারিত সীমার বেশি লেনদেন নগদে না করা।

ব্রোকারেজ হাউজের প্রতি ১০০ টাকার লেনদেনে বিদ্যমান ৫ পয়সা উৎসে কর কমিয়ে ৩ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি, মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার ১০ শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশে আনার ঘোষণা এসেছে বাজেটে।

তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব উদ্যোগ মূলত প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে প্রণোদনা হিসেবে বিবেচিত হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীর সরাসরি উপকারে আসবে না। স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ মূলধনি মুনাফা ও লভ্যাংশ আয়ে কর অব্যাহতির প্রস্তাব দিলেও তা বিবেচনায় নেয়নি সরকার।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আগে তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু অর্থ উপদেষ্টা তা পুরোপুরি আমলে নেননি। ফলে বাজারে ভালো কোম্পানি আনার যে প্রয়াস, তাতে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাজার সংস্কারের নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তার বাস্তবায়ন চলছে ধীরগতিতে। এতে শেয়ারবাজারের মন্দা আরও প্রকট হয়েছে। বাজেট-পরবর্তী সময়ে বাজারে এসব ঘোষণার কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।

এসএম

শেয়ার করুন:-
শেয়ার