আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ক্যানসার প্রতিরোধক ওষুধসহ সব ধরনের ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি সুবিধা সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্যানসার প্রতিরোধক ওষুধসহ সব ধরনের ওষুধের কাঁচামাল আমদানি এবং এপিআই (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি সুবিধা সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, জাতীয় উন্নয়নে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব বিবেচনায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আদায় করবে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং বাকি ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে অন্যান্য উৎস থেকে। যেখানে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। যদিও অর্থবছরের মাঝে এসে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে।
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এই ঘাটতির মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা পূরণ করা হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে, আর ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা আসবে বৈদেশিক উৎস থেকে।
মোট বাজেটের মধ্যে পরিচালন ও অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
সরকারি ব্যয়ের খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ ও সার খাতে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। আর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এডিপি ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের দৃষ্টিতে সংকোচনমূলক বাজেট।
এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এবং অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার যখন ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যেও অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতার দিকে পরিচালিত করছে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে। এটি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি আরও নিয়ন্ত্রণ, বেসরকারি বিনিয়োগ ও এফডিআই সুবিন্যস্তকরণ, সম্পূর্ণ আর্থিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং বৈশ্বিক ও দেশীয় অনিশ্চয়তার মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করার মতো কঠিন কাজও রয়েছে।
কাফি