প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী কাছে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ফোর্স সেল বন্ধসহ একগুচ্ছ দাবি পেশ করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর নেতারা। একই সঙ্গে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি করেছেন বিনিয়োগকারীরা। সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক মো. আবুল কালাম।
সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, বিএসইসির কমিশনার মো. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর উপস্থিত ছিলেন।
বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক মো. আবুল কালাম বলেন, বিনিয়োগকারীরা ফোর্স সেলের কারণে অনেকে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন; ফোর্স সেল কিভাবে বন্ধ করা যায় সেবিষয় তারা কথা বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা পুঁজিবাজারের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছেন। এবং ওনাদের কিছু বক্তব্য ও রেকর্ডপত্র ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর কাছে হস্থান্তর করেছেন। ব্যাক্তিগতভাবে বক্তব্যের মাধ্যমেও বিশেষ বিষয়গুলো নিয়ে এসেছেন, যেমন ৬১৭টি বিও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা, পেনশন ফান্ড এবং লাইফ ফান্ডের টাকা কিভাবে বাজারে এনে তারল্য সৃষ্টি করা যায়; এবিষয় কথা বলেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর অধীনে যে ব্যাংকগুলো আছে; তারা কিভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে তারল্য বাড়াতে পারে সেবিষয় কথা বলেছেন।
সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর কাছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অপসারণ চেয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর নেতারা। তাদের দাবি, এরই মধ্যে মাকসুদ কমিশনের অযোগ্য নেতৃত্বে শেয়ারবাজার ধংসের পথে ধাবিত। এ বাজারকে রক্ষা করতে হলে তার অপসারনের বিকল্প নেই। বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের চলমান শোচণীয় অবস্থার জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যানের অযোগ্যতা প্রধান দায়ী করেছেন।
বিনিয়োগকারীরা বলেন, মাকসুদ শেয়ারবাজার বুঝেন না। এটা শুধু সাধারন বিনিয়োগকারীদের কথা না। এই কথা এখন বিএসইসির সাবেক স্বনামধন্য চেয়ারম্যানসহ স্টেকহোল্ডারদের। তাই মাকসুদের অপসারন করা উচিত।
বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর এসোসিয়েশনের নেতাদের দাবি, পুঁজিবাজারে প্রতিদিন যেভাবে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে চলতে থাকলে শেয়ারবাজার নামের খাতটি মাটির সাথে মিশে যাবে। এ খাতের সংশ্লিষ্টরা নিংশ্ব হয়ে যাবেন। শেয়ারবাজারের সাথে জড়িত মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোও অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে করে চাকরী হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ছেন অনেকে।
বিএসইসি জানিয়েছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য বিএসইসি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিএসইসির সাথে সাথে বর্তমান সরকারও দেশের পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন ও সংস্কারের বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। পুঁজিবাজারের অংশীজনদের মতামত এবং তাদের সাথে নিয়েই বাজারের টেকসই উন্নয়ন ও সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করে বিএসইসি। সংস্কারের চলমান প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দেশের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত, অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় একটি স্বচ্ছ ও সমৃদ্ধ পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে বিএসইসি বদ্ধপরিকর।
এর আগে গত ১১ মে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে পুঁজিবাজার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ৫টি নির্দেশনা দিয়েছে, সেগুলো হলো- সরকারের মালিকানা রয়েছে এমন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে সরকারের শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; বেসরকারি খাতের দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে প্রনোদনাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি রুখতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এসে তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজার সংস্কার করা; পুঁজিবাজারে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের প্রত্যকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ; এবং বড় ধরনের ঋণ প্রয়েজন এমন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে পুঁজিবাজার থেক বন্ড ও ইক্যুইটির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহে আগ্রহী করে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ।
এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বর্তমান রাশেদ মাকসুদ কমিশন কোনভাবেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারছেন না। গত ৮ মাস যাবৎ রাশেদ মাকসুদের অপসারণের দাবিতে বিনিয়োগকারীরা আন্দোলন করলেও অর্থ উপদেষ্টা এর আসকারায় রাশেদ মাকসুদ ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সংস্কারের নামে শেয়ারবাজারে পতন অব্যাহত রাখতে বর্তমান কমিশন সব ধরণের আয়োজন করে রেখেছে বলেই অভিযোগ তুলছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, এই মাকসুদের অপসারনের দাবিতে শেয়ারবাজারের সব শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা একমত। এরইমধ্যে তাকে অপসারনের দাবিতে রাজপথে কাফন ও কফিন মিছিল করেছে বিনিয়োগকারীরা।
কাফি