নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দের সাথে ‘ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) সকাল ১০টায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অডিটোরিয়াম অডি-৮০১ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দের অংশগ্রহণে ‘ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ বিষয়ক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মোহাম্মদ আলিম আখতার খান। এতে সভাপতিত্ব করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল হান্নান চৌধুরী।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন- অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্মসচিব) আব্দুল জলিল, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির কোষাধ্যক্ষ ও উপ-উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর আব্দুর রব খান, মার্কেটিং ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. খন্দকার মো. নাহিন মামুন এবং আইন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার মো. লোকমান হোসেন।
এছাড়াও সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
স্বাগত বক্তব্যে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির কোষাধ্যক্ষ ও উপ-উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর আব্দুর রব খান সেমিনারে উপস্থিত সবাইকে স্বাগত জানান। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বিষয়ক সেমিনার আয়োজনের জন্য নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্ধারণ করায় অধিদপ্তরের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জিং। ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতে অধিদপ্তরের কার্যক্রমের ইতিবাচক দিক সম্পর্কে আলোচনা করেন। পরিশেষে তিনি সেমিনারের সাফল্য কামনা করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনটি ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে যেভাবে ভূমিকা পালন করছে সে বিষয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক(প্রশিক্ষণ ও প্রচার) আফরোজা রহমান। এরপরে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
আলোচনায় অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্মসচিব) আব্দুল জলিল সেমিনারে উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে অধিদপ্তরের কার্যক্রমকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার রক্ষায় সরকারের কাজে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শাস্তি দিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সম্ভব নয়, এটি নিশ্চিতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, ইতোপূর্বে অধিদপ্তর কর্তৃক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সচেতনামূলক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে এবং আগামী দিনে এরূপ কার্যক্রম গ্রহণ অব্যাহত থাকবে। বিদ্যমান আইনের সীমাবদ্ধতা ও জনবলের সংকট সত্বেও সমাজের বিভিন্ন পর্যায় থেকে সমর্থন নিয়ে ভোক্তা অধিকার রক্ষায় অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।
সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. খন্দকার মো. নাহিন মামুন তাঁর বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বিষয়ের সাথে ভোক্তা অধিকারের সম্পর্ক দেখিয়েছেন। একই সাথে ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধের লক্ষ্যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্রে নিজ নিজ বিষয়ের উপর অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগানোর অনুরোধ জানান।
আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার মো. লোকমান হোসেন ভোক্তা অধিকারের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ১৯৬২ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন. এফ. কেনেডি ভোক্তাদের চারটি মৌলিক অধিকার যথা নিরাপত্তার অধিকার, তথ্য প্রাপ্তির অধিকার, পছন্দের অধিকার এবং অভিযোগ প্রদানের অধিকারের কথা উল্লেখ করেন। যা পরবর্তীতে ভোক্তা অধিকার নামে পরিচিতি পায়।
ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় তিনি কিছু পরামর্শ প্রদান করেন যেমন, ভোক্তাকে সেবা প্রদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে তদারকি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ঔষধের ক্ষেত্রে এসেনসিয়াল ড্রাগের লিস্টে অধিক সংখ্যক ঔষধ অন্তর্ভূক্ত করা, অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত তদারকি কার্যক্রম এর পরে ফলোআপ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, রেস্তোরাঁ কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ই-কমার্স এর ক্ষেত্রে পণ্য ডেলিভারি না করা পর্যন্ত সরাসরি বিক্রেতার কাছে যেন ক্রেতার অর্থ না যায় সে লক্ষ্যে এসক্রো সার্ভিস চালু করা ইত্যাদি।
মুক্ত আলোচনায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালক কর্তৃক অংশগ্রহণকারীবৃন্দের ভোক্তা -অধিকার আইন এবং অধিদপ্তরের কার্যক্রম সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই সেমিনারের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বিষয়ে সচেতন করার বিষয়ে সহযোগিতা প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বর্তমান সমাজে বিদ্যমান ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কাজের স্বরূপ তুলে ধরে তা প্রতিরোধে অধিদপ্তরের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন। মহাপরিচালক বলেন, অধিদপ্তর প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা। এই সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে এই সেমিনার।
তিনি বলেন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ হালনাগাদ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এ আইনের বিভিন্ন বিষয়ে মতামত প্রদানের অনুরোধ জানান।
তিনি সেমিনারে শিক্ষার্থীদেরকে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভোক্তাবান্ধব সুস্থ সমাজ গঠিত হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
আলোচনা শেষে মহাপরিচালক শিক্ষার্থীবৃন্দকে ভোক্তা-অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে তথা অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে আহ্বান জানান।
সেমিনারের সভাপতি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল হান্নান চৌধুরী অংশগ্রহণমূলক, জ্ঞানগর্ভ আলোচনাপূর্ণ সেমিনারে উপস্থিত শিক্ষার্থীসহ আয়োজক সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ভোক্তার অধিকার মূলত মানবাধিকার। উন্নত বিশ্বে ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্যের স্বরূপ তুলে ধরে তা প্রতিরোধে গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন। তিনি বলেন শুধু কঠোর আইন প্রয়োগ নয়, শিক্ষার মাধ্যমে সভ্য সমাজ গঠনই পারে ভোক্তা-অধিকার নিশ্চিত করতে। তিনি সকলের সমন্বিত কাজ করার মাধ্যমে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ সহজ হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং সেমিনারে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেমিনারের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।