ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

আইন মানছে না সিকদার ইন্স্যুরেন্স, ঘোষণা ছাড়াই পরিচালকদের শেয়ার বিক্রয়

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির এক বছর যেতে না যেতেই আইনের তোয়াক্কা করছে না সিকদার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালকরা। নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটির মোট শেয়ারের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সমন্বিত ৬০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানছে না কোম্পানিগুলোর পরিচালকরা। সেই সঙ্গে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শেয়ার বিক্রয় করেছে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার ক্রয় বা বিক্রয়ের জন্য পূর্ব ঘোষণা বাধ্যতামূলক করেছে। তবে এই আইনের তোয়াক্কা না করেই কোনো রকম ঘোষণা ছাড়াই শেয়ার বিক্রয় করেছে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সিকদার ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা। উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ২০ টাকা ৫০ পয়সা দরের শেয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা ৪০ পয়সা পর্যন্ত দর বাড়িয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে দেয়। গোপনে সর্বোচ্চ দামে শেয়ার ধরিয়ে দেওয়ায় বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এমন কান্ডকে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা বলছে বাজার সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৫০ দশমিক ৪০ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালকদের নিকট রয়েছে।

সূত্র জানায়, গত এক মাসের সাধারণ বিমা খাতের কোম্পানি সিকদার ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ধারণে বিশাল পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের অংশের শেয়ার ০৯ দশমিক ৬০ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের পরিমাণ বেড়েছে। তবে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারের পরিমাণ কমে যাওয়ার পেছনে কোনো তথ্য নেই দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে। কোনো রকম ঘোষণা ছাড়াই শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের কর্মকান্ডে উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা।

এবিষয়ে জানতে সোমবার (২৬ মে) সন্ধ্যায় সিকদার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কোম্পানি সচিব আব্দুর রাজ্জাককে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ডিএসই সূত্র মতে, গত ৩১ মার্চ,২০২৫ তারিখে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ছিলো ৬০ শতাংশ। আর ৩০ এপ্রিল,২০২৫ তারিখে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ দশমিক ৪০ শতাংশে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কেমেছে ০৯ দশমিক ৬০ শতাংশ।

এছাড়া, ৩১ মার্চ,২০২৫ তারিখে কোম্পনিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিলো ২ দশমিক ২১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিলো ৩৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আর গত ৩০ এপ্রিল,২০২৫ তারিখে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ১৭ শতাংশে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেড়েছে ১ দশমিক ২২ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেড়েছে ০৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

এছাড়াও, বীমা আইন ২০১০ এর ২১ ধারা এবং তফসিল (১)(খ) অনুযায়ী বাংলাদেশে নিবন্ধিত নন-লাইফ বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন হবে ৪০ কোটি টাকা। যার ৬০ শতাংশ হবে উদ্যোক্তাদের এবং বাকি ৪০ শতাংশ হবে জনসাধারনের। এ হিসাবে ৪০ কোটির ৬০ শতাংশ বা ২৪ কোটি টাকার মালিকানা হবে উদ্যোক্তাদের। তবে নন-লাইফ বীমা কোম্পানি সিকদার ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা-পরিচালকরা গোপনে শেয়ার বিক্রয় করে দেওয়ায় পরিশোধিত মূলধনের ৬০ শতাংশে তাদের মালিকানা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, যখন কোনো কোম্পানিতে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ারধারণের পরিমাণ কমে যায়, তখন তাঁরা ওই কোম্পানির ব্যবসায় মনোযোগ দেন না। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ওই কোম্পানির শেয়ার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে ন্যূনতম শেয়ার যদি উদ্যোক্তা এবং পরিচালকেরা কেনেন বা তাঁদের হাতে থাকে, তাহলে এটি বড় একটি ফান্ড রিলিজ করবে। এটি পুঁজিবাজারে চলমান তারল্য সংকট কমাতে সহায়তা করতে পারে।

উল্লেখ্য, বিএসইসির ৮৮২তম সভায় সিকদার ইন্স্যুরেন্সের আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) অনুমোদন দেওয়া হয়। কোম্পানির প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যে ১ কোটি ৬০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে পুঁজিবাজার থেকে ১৬ কোটি উত্তোলনের অনুমোদন পায়। এর আগে গত ২৬ এপ্রিল বিএসইসি কোম্পানির ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বা সিআইবি প্রতিবেদন পরিচ্ছন্ন না পাওয়ায় আইপিওর আবেদন বাতিল করেছিল। আর গত বছরের (২০২৪) ২৪ জানুয়ারি উভয় পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির লেনদেন শুরু হয়।

এসএম

শেয়ার করুন:-
শেয়ার