ক্যাটাগরি: মত দ্বিমত

বাংলার এই দুর্দিনে তারেক রহমান এখনো কেন লন্ডনে?

বলছি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথা। আজ যখন বাংলাদেশ গভীর রাজনৈতিক, সামাজিক এবং নৈতিক সংকটে নিপতিত, তখন তিনি কোথায়? দেশের মাটিতে নন, লন্ডনের নিরাপদ আশ্রয়ে। প্রশ্ন ওঠে-এটা কি মৃত্যুভয়, নাকি মিলিটারি কিংবা সরকারের রোষানলে পড়ার আতঙ্ক? আজ দেশের জন্য প্রয়োজন সাহসী, প্রজ্ঞাসম্পন্ন ও মাঠঘাটে সরব নেতৃত্ব। অথচ, তারেক রহমান এখনো দেশের মাটিতে ফেরার সাহস দেখাতে পারছেন না।

জিয়াউর রহমান বা খালেদা জিয়া কখনো ভাড়াটে সন্ত্রাসীর ওপর নির্ভর করে নেতৃত্ব দেননি। তাঁরা রাজনীতি করেছেন মাটি ও মানুষের সঙ্গে, জীবনবাজি রেখে। তাহলে আজ বিএনপির রাজনীতিতে কেন এত সন্ত্রাসী চরিত্র, দূর-নির্দেশনা নির্ভরতা, আর মাঠের কর্মীদের আত্মবিশ্বাসহীনতা?

যদি তারেক রহমান জেল, হয়রানি, কিংবা জীবনের নিরাপত্তার আশঙ্কায় দেশে না ফেরেন, তাহলে কীভাবে তিনি একটি দেশের শাসনভার নেবেন? রাজনীতি তো শুধু বক্তব্য ও দূরবর্তী নিয়ন্ত্রণ নয়—এটি উপস্থিতি, আত্মত্যাগ, নেতৃত্ব এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সাহসের নাম।

বাংলাদেশের বাস্তবতা অত্যন্ত করুণ। মানুষ ধর্ম পালন করে—নামাজ, রোজা, হজ, ওমরাহ সবই আছে; কিন্তু সমাজে সততা, ন্যায়বোধ, জবাবদিহি নেই। চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রতারণা—এসবই যেন এখন নিত্যনৈমিত্তিক। মানুষ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে, কিন্তু সামাজিক নৈতিকতা ও দায়বদ্ধতা হারিয়ে ফেলেছে। এই চিত্রের মধ্যেই দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্ব আজ বিভ্রান্ত ও জনবিচ্ছিন্ন।

এই পরিস্থিতিতে যদি ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে প্রশ্ন থেকে যায়—তারেক রহমান কি লন্ডনে বসেই বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা করবেন? দেশ চালানোর প্রস্তুতি কি বিদেশে বসে নেয়া সম্ভব? সবকিছু তার পছন্দমতো ‘অনুকূল’ হলে দেশে ফেরার শর্ত রাজনীতিতে কতটা গ্রহণযোগ্য?

বাংলাদেশের মানুষ কি শুধুই রক্ত দেবে? কি শুধুই গুলিবিদ্ধ হবে? আর বসন্তের কোকিলেরা বছরে একবার দেশে ফিরে নেতৃত্বের দাবি করবে? এই কি সেই গণতন্ত্র, যার জন্য এদেশের মানুষ সংগ্রাম করেছে? পাকিস্তানের পতনের পর, একদলীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যদি নতুন আশার জন্ম দিতে পারে, তবে আজও সেই আশা কেন মরে যাবে?

এই দেশের মানুষ প্রতারণায় ক্লান্ত, তারা দৃঢ় নেতৃত্ব চায়। সাহসী সিদ্ধান্ত চায়। তারেক রহমান, আপনি কি প্রস্তুত? যদি প্রস্তুত থাকেন, তবে আজই দেশে ফিরে আসুন, রাজপথে নামুন, মানুষের পাশে দাঁড়ান। আর যদি আপনার শর্তই হয় নিরাপত্তা ও অনুকূল পরিবেশ, তাহলে দয়া করে নেতৃত্ব দাবি করবেন না। কারণ মানুষ আর প্রতারিত হতে চায় না।

এখন সিদ্ধান্ত আপনার—আপনি কী করবেন? সাহসিকতার পথ ধরবেন, না নিরাপদ দুরপরবাসেই থাকবেন?

কারণ এই দেশ আর সময় চায় না। দেশের মানুষ দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে নিপীড়িত, নির্যাতিত, অনিয়ম-অবিচারে জর্জরিত। বছরের পর বছর তারা প্রতিশ্রুতির ছায়ায় বাঁচার চেষ্টা করেছে, কিন্তু প্রতিবারই হয়েছে প্রতারিত। জাতি একসময় আশাবাদী হয়েছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি, নতুন প্রজন্মের তরুণ নেতৃত্বের প্রতি—কিন্তু তারাও জাতিকে হতাশ করেছে।

আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বেও—কিন্তু তিনিও আমাদের হৃদয়ের ভাষা, ১৬ কোটি মানুষের মনের ব্যথা বুঝতে পারেননি, বা তাকে বুঝতে দেওয়া হয়নি। তিনি থেকেছেন এলিটদের ছত্রছায়ায়, দূরে সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর থেকে, এবং সে কারণেই তাঁরও পথভ্রষ্ট হওয়া অনিবার্য হয়ে উঠেছে।

তবু, এখনো সময় আছে। উপায় আছে।

যদি সকল রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের প্রতিনিধিত্বে একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায়, তবে দেশকে ফেরানো সম্ভব সঠিক পথে। সেখানে আপনি, তারেক রহমান, ড. ইউনূসের মতো একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বের ছায়ায় নেতৃত্ব দিতে পারেন—নিরাপত্তার পেছনে না লুকিয়ে, সাহস নিয়ে সামনে এসে।

তবে সেই মহানুভবতার পরিচয় দিতে হলে মনে রাখতে হবে জিয়াউর রহমানের সেই ঐতিহাসিক শিক্ষা:
“ব্যক্তির আগে দল, আর দলের আগে দেশ।”

পারবেন কি আপনি সেই আত্মত্যাগ করতে? পারবেন কি দলের সংকীর্ণ গণ্ডি পেরিয়ে দেশের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে?

তাহলে আসুন, একসাথে দেশ পরিচালনা করি। ভাঙা স্বপ্নগুলো জোড়া লাগাই। বাংলাদেশের ইতিহাসের নতুন পৃষ্ঠা লিখি—সাহস, ন্যায্যতা ও মানুষের ভালোবাসার কালি দিয়ে।

রহমান মৃধা
গবেষক এবং লেখক
সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
শেয়ার