মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগদান করেছেন মো. সাফায়েত আলম। তবে তার নিয়োগ অবৈধ এবং তাঁর পদে থাকার কোনো অধিকার নেই বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এরই মধ্যে সিইও হিসাবে যোগদানের প্রথম দিনেই ১৭ জন কর্মী ছাঁটাই করেছেন তিনি। যার ফলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) এবং এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (ইডি) সহ প্রথমে ১৯ জনকে টার্মিনেট করে। তবে পরবর্তীতে দুইজনকে এ তালিকা থেকে বাদ দিয়ে বাকি ১৭ জনকে ছাঁটাই করা হয়। কারণ হিসেবে জানা গেছে, গত আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংক নগদে প্রশাসক বসায় বাংলাদেশ ব্যাংক, এই কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছে।
সূত্র জানায়, নগদের অভ্যন্তরীণ নোটিসের মাধ্যমে বলা হয়েছিল কেউ যেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সহযোগিতা না করে। অর্থাৎ যেসব কর্মকর্তা সেই আদেশ অমান্য করেছে তাদেরকে নতুন সিইও যোগদান করে প্রথম দিনেই ১৭ জনকে চাকরিচ্যুত করেছে।
এদিকে একটি সূত্র অর্থসংবাদকে জানায় নগদের নতুন সিইও যোগদানের প্রথম দিনেই গভীর রাতে তার বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়। যদিও পরবর্তীতে ছেড়ে দেয় বলে জানা গেছে।
এদিকে গত আগস্টে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদে প্রশাসক নিয়োগ করলে নিয়োগ প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে উচ্চআদালতের দ্বারস্থ হন মো. সাফায়েত আলম। তবে গত ৭ মে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত নগদে প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে। তারপরই ১২ মে প্রতিষ্ঠানটির নতুন সিইও হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। তবে দায়িত্ব নিয়েই যোগদানের প্রথম দিনে প্রতিষ্ঠানের ১৭ জন কর্মকর্তাকে একযোগে ছাঁটাই করে মো. সাফায়েত আলম। তার এমন কর্মকান্ডে প্রতিষ্ঠানের অন্যান্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এর আগে, গত রবিবার নগদের পরিচালনা নিয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, সিইও হিসেবে মো. সাফায়েত আলম অবৈধ এবং তাঁর পদে থাকার কোনো অধিকার নেই। সাফায়েত আলম জালিয়াতির মাধ্যমে এই পদে বসেছেন বলেও জানান গভর্নর।
গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যাঁর নামে মামলা করেছে, তাঁকে আবারও নগদের সিইও করা হয়েছে। সরকার তো সেটা মানবে না। এটা তো সরকারের পজিশন না। সরকারের পজিশন বাংলাদেশ ব্যাংক যেটা বলেছে, সেটাই। তবে যেহেতু বিষয়টি এখনো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে, এ বিষয়ে এর বেশি কিছু বলা ঠিক নয়।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। প্রশাসক বসানোর পর নিরীক্ষায় উঠে আসে, নগদ লিমিটেডে বড় ধরনের জালিয়াতি সংঘটিত হয়েছে। ভুয়া পরিবেশক ও এজেন্ট দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক জালিয়াতি এবং অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক অর্থ বা ই-মানি তৈরি করা হয়েছে। এসব কারণে ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না।
সাবেক সরকারের আমলে নিয়মের বাইরে গিয়ে গ্রাহক বানানো, সরকারি ভাতা বিতরণসহ একচেটিয়া সুবিধা পায় নগদ। প্রতিষ্ঠানটিতে যখন এসব অনিয়ম সংঘটিত হয়, তখন এর পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ ঘটনায় ২৪ জনকে আসামি করে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এসএম