সমকামিতা-ট্রান্সজেন্ডার প্রশ্রয়ের প্রশ্নই আসে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (পশ্চিমাঞ্চল) সারজিস আলম।
আজ রোববার (১৮ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
পোস্টে সারজিস আলম লেখেন, ‘নারীদের অধিকার রক্ষায় যেকোনো যৌক্তিক দাবিতে সর্বাত্মক সমর্থন থাকবে। কিন্তু সেসবের আড়ালে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যদি সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডার কিংবা এলজিবিটিকিউ এর মতো জঘন্য ও ধ্বংসাত্মক কালচারগুলোকে প্রমোট করা হয়, তবে সেই অপচেষ্টায় আমাদের বাধা হয়ে দাঁড়াতে হবে।’
তিনি লেখেন, ‘পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র ধ্বংস করার এই মরণব্যাধিগুলো যেসব মানসিক বিকারগ্রস্তরা লালন ও প্রমোট করার চেষ্টা করছে, তাদের মানসিক চিকিৎসা করানো হোক। কিন্তু তাদের প্রশ্রয়ের প্রশ্নই আসে না। এটা সেই ক্যান্সার যা ধীরে ধীরে আপনার ঘর থেকে শুরু করে জাতি পর্যন্ত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে। সেই সুযোগ আমরা করে দিতে পারি না।’
তিনি আরও লেখেন, ‘পাশাপাশি পতিতাবৃত্তির মতো মর্মান্তিক নির্যাতন কখনো পেশা হতে পারে না। বরং যারা বাধ্য হয়ে কিংবা ফাঁদে পড়ে এই পেশার সঙ্গে ইতোমধ্যে সম্পৃক্ত হয়েছে তাদেরকে সেই পথ থেকে ফিরিয়ে এনে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল পুনর্বাসন করা হোক।’
এদিকে ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’ কর্মসূচি থেকে নারীর অধিকার নিশ্চিত ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে। গত শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে কর্মসূচিতে পাঠ করা ঘোষণাপত্রে এই দাবি জানানো হয়। ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন জুলাই শহীদ পরিবারের তিন নারী সদস্য। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, চব্বিশের অভূতপূর্ব জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে আজ আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমাদের দাবি একটি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ। যেখানে সব মানুষের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে বৈষম্যবিরোধিতা ও সাম্যের যৌথ মূল্যবোধের ওপর। সমতা ও ন্যায্যতার পথে এ মৈত্রীযাত্রায় আমরা সবাইকে স্বাগত জানাই। আজ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্বজন, মানবাধিকারকর্মী, পেশাজীবী, শিল্পী, গার্মেন্টস শ্রমিক, চা বাগানের শ্রমিক, যৌনকর্মী, প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মী, তৃতীয় লিঙ্গ, তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থী, আদিবাসী, অবাঙালি অন্যান্য প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মানুষ। এতে আরও বলা হয়, কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়েও নারীসহ অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এ অগ্রযাত্রায় নানান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ও পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। নারীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ক্ষেত্রেও তারা বাধা তৈরি করছে। ব্যক্তিগত আক্রমণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা এবং অনলাইনে হয়রানি করে রাজনৈতিক পরিসরে নারীর অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করার তৎপরতা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। বিভিন্ন স্থানে অতর্কিত হামলা, আন্দোলনে বাধা, পরিকল্পিত মব আক্রমণ, মোরাল পুলিশিং, যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, প্রকাশ্যে মারধর এবং নানান ধরনের হুমকি প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, সম্প্রতি নারী অধিকার সংক্রান্ত সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক গঠিত অন্যান্য কমিশনের মতোই এ কমিশনটি গঠিত হয়েছিল। এ কমিশন শ্রমজীবী নারী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারী ও অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ নারীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ৪৩৩টি সুপারিশ পেশ করে। অন্যান্য সব কমিশনের মতোই এ কমিশনের সুপারিশেও ছিল নানা আলোচনা-সমালোচনার উপাদান। কিন্তু আমরা দেখেছি রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকেই অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত সুপারিশগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে গিয়ে এবং গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনার সুযোগ না রেখে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। দেশবাসীর সামনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হচ্ছে। জনসম্মুখে কমিশনের সদস্যদেরকে জঘন্যভাবে অপমান করা হয়েছে।