ক্যাটাগরি: অন্যান্য

যুদ্ধের অর্থনীতি: ব্যয়বহুল বাস্তবতা

যুদ্ধ কেবল রক্ত ও অশ্রুর ইতিহাসই নয়; এটি এক নির্মম অর্থনৈতিক সত্য, যা সমাজ, অর্থনীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি শুধু জানমালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং তা একটি জাতির আর্থিক ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়। আধুনিক বিশ্বে যুদ্ধের প্রভাব এখন আর শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়। ২০২২ সাল থেকে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা চলমান গাজা সংকট তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে সামরিক ব্যয় রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৯.৪% বেশি । এই ব্যয় বৃদ্ধির প্রধান কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা। সুইডেনভিত্তিক এই গবেষণা সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর বিশ্বজুড়ে একশটির বেশি দেশ তাদের সামরিক খাতে খরচ বাড়িয়েছে। বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ভারত ও সৌদি আরব। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ৮৯৫ বিলিয়ন ডলার, চীন ২৬৬.৮৫ বিলিয়ন ডলার, রাশিয়া ১২৬ বিলিয়ন ডলার, ভারত ৭৫ বিলিয়ন ডলার এবং সৌদি আরব ৭৪.৭৬ বিলিয়ন ডলার। মার্কিন কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের মতে, ২০৩৩ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয় ১.১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে।

বিভিন্ন দেশের সরকার প্রায়ই অন্য গুরুত্বপূর্ণ খাতের বাজেট কাটছাঁট করে ক্রমাগত সামরিক নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে কাটছাঁট করার কারণে ভবিষ্যতে সমাজে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে পারে। যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া বা সম্ভাব্য সংঘাত মোকাবেলায় প্রস্তুতির অজুহাতে অনেক দেশ সামরিক নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। এর ফলে জাতীয় বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো খাতগুলোতে বরাদ্দ কমে যায়, যার প্রভাব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর পড়ছে। অর্থাৎ, যুদ্ধ বা সামরিক প্রস্তুতির খরচ কেবল তাৎক্ষণিক নয়, এটি একটি জাতির দীর্ঘমেয়াদি আর্থসামাজিক অগ্রগতির পথেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অবকাঠামোর ধ্বংস যুদ্ধের সরাসরি ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে অন্যতম হলো অবকাঠামোর ধ্বংস। সড়ক, সেতু, বিদ্যুৎকেন্দ্র, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, হাসপাতাল, বিদ্যালয়—এসব মৌলিক কাঠামো যুদ্ধের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কিয়েভ স্কুল অফ ইকোনমিক্স এর তথ্যমতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, ইউক্রেনের অবকাঠামোর সরাসরি ক্ষতির মোট পরিমাণ প্রায় ১৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে (নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত)। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলি হল আবাসন, পরিবহন অবকাঠামো এবং জ্বালানি।

সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বর্তমানে গাজা উপত্যকায়। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে গাজা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শুরুর মধ্যে গাজার ৯২ শতাংশের বেশি আবাসিক ভবন আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে, অর্ধেকের বেশি হাসপাতাল অকার্যকর হয়ে পড়েছে, এবং বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। ২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় বিশ্বব্যাংক এবং জাতিসংঘের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, গাজার কেবল অবকাঠামোর ক্ষতিই ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এত বড় মাত্রার ধ্বংস গাজাবাসীদের জীবন, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিকে এমনভাবে বিপর্যস্ত করেছে যা কয়েক দশকেও পূরণ করা কঠিন হবে।

এইসব উদাহরণ দেখায়, অবকাঠামোর ধ্বংস কেবল তাৎক্ষণিক দুর্ভোগ নয়; এটি একটি জাতিকে বহু বছর পিছিয়ে দেয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা আরও কঠিন, কারণ তাদের আর্থিক সম্পদ এমনিতেই সীমিত থাকে। যুদ্ধ পরবর্তী পুনর্গঠনের জন্য প্রায়শই প্রয়োজন হয় আন্তর্জাতিক সাহায্য, ঋণ ও জাতীয় সম্পদের পুনঃবন্টন, যা ভবিষ্যতের আর্থসামাজিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে। মানব সম্পদের ক্ষতি যুদ্ধের ভয়াবহতা কেবল ক্ষতবিক্ষত দালানকোঠা নয়; এটি ধ্বংস করে দেয় জাতির সবচেয়ে বড় শক্তি—মানব সম্পদকে। যুদ্ধের কারণে প্রাণহানি, আহত এবং বাস্তুচ্যুতির ফলে শ্রম বাজারে বিঘ্ন ঘটে এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন, সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাকের পাশাপাশি গাজা উপত্যকাও মানব সম্পদ ধ্বংসের জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছে। সিরিয়া গৃহযুদ্ধে (২০১১-বর্তমান) এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ আহত বা পঙ্গু হয়েছে (সূত্র: জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা)। এই বিশাল সংখ্যক মানব সম্পদ হারিয়ে দেশটি গভীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটে পড়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে ইউক্রেনের হাজার হাজার শিশু ও যুবক এখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ২০২৩ সালে যুদ্ধ-আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে প্রায় ৭০% মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে।

আফগানিস্তানে তালেবান এবং মার্কিন বাহিনীর দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলে বহু স্কুল ধ্বংস হয় এবং শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা অনেকাংশে থেমে যায়, যা মানব সম্পদের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। ইরাক যুদ্ধের পর (২০০৩-এর পর), জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির তথ্যমতে, প্রায় ৪০% ইরাকি চিকিৎসক ও প্রকৌশলী দেশ ছেড়েছেন। এর ফলে দেশের স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো খাত দুর্বল হয়ে পড়ে। দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, এখনো প্রায় ১৯ হাজার শিশু বিভিন্ন মিলিশিয়া বাহিনীতে কাজ করছে, যা দেশটির ভবিষ্যৎ মানব সম্পদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই গাজায় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ৭০% নারী ও শিশু (সূত্র: আল জাজিরা)। হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন কর্মক্ষম বয়সের।

দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক পরিণতি যুদ্ধের কারণে ঋণের বোঝা বৃদ্ধির বিষয়টি অনেক দেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সরকারগুলোকে বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয় অস্ত্র, সেনাবাহিনী, খাদ্য সরবরাহ, চিকিৎসা, অবকাঠামো পুনর্গঠন ইত্যাদি খাতে। এই ব্যয় মেটাতে অনেক সময় দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজার বা দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়। নিচে কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ দেওয়া হলো—

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাজ্য: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫) চলাকালীন ও পরে যুক্তরাজ্য ব্যাপক যুদ্ধ ব্যয় নির্বাহ করে। এই ব্যয় পূরণ করতে যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকে প্রায় ৪.৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ নেয়। এই ঋণ পরিশোধে যুক্তরাজ্যের প্রায় ৬০ বছর লেগে যায় এবং তারা সর্বশেষ কিস্তি দেয় ২০০৬ সালে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ (২০২২–বর্তমান): এই যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশ্ব ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে তারা বহু বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণ করে যুদ্ধকালীন ও যুদ্ধোত্তর ব্যয় নির্বাহ করতে। একইভাবে, ইউক্রেনকে সহায়তা করতে গিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোও বিশাল বাজেট বরাদ্দ করে যার ফলে তাদের নিজস্ব ঋণের ভার বেড়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধ: ২০০১ সালের পর আফগানিস্তান এবং পরে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র যে যুদ্ধ পরিচালনা করে, তা তাদের প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ডলার খরচে গিয়েছে (ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় এর একটি গবেষণা অনুযায়ী)। এই অর্থ অনেকাংশেই ঋণ নিয়ে সংগ্রহ করা হয়, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়।

সিরিয়া গৃহযুদ্ধ: সিরিয়ার দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ দেশটির অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়। সরকারের আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পেতে দেশটি ইরান ও রাশিয়ার কাছে ঋণগ্রহীতা হয়ে পড়ে। স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বা সরাসরি সংঘর্ষের অংশ না হয়েও, বাংলাদেশ বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক যুদ্ধের আর্থিক অভিঘাতে ঋণের বোঝায় আক্রান্ত হচ্ছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের কারণে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এই মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারকে বিশাল ব্যয় বহন করতে হয়। শুরুতে আন্তর্জাতিক সহায়তা থাকলেও পরবর্তীতে তা কমতে থাকে। ফলে সরকারকে নিজস্ব অর্থায়ন বাড়াতে হয়, যা বাজেট ঘাটতি বাড়িয়ে ঋণ নিতে বাধ্য করে। তাছাড়া ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, চীন-ভারত উত্তেজনা বা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত (রোহিঙ্গা ইস্যু সহ) এ ধরনের আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব বাংলাদেশকে সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বাড়াতে বাধ্য করেছে।

বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ আর কেবল রাজনৈতিক কিংবা ভৌগোলিক বিরোধে সীমাবদ্ধ নেই—এটি সরাসরি বৈশ্বিক অর্থনীতির হৃদয়ে আঘাত করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ইসরায়েল-গাজা সংঘাত এবং হুতি বিদ্রোহীদের রেড সি এলাকায় জাহাজে হামলা বিশ্ববাজারে সরাসরি বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। যুদ্ধ এখন কেবল মানুষের জীবন নষ্ট করছে না, এটি খাদ্য, জ্বালানি, বিনিয়োগ ও মানবসম্পদের উপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।

জ্বালানি ও খাদ্য সংকট: ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই বিশ্ববাজারে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। ইউক্রেন ও রাশিয়া মিলিয়ে বিশ্বের ২৫% গম সরবরাহ করে থাকে। যুদ্ধের কারণে এই সরবরাহ ব্যাহত হলে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে খাদ্যঘাটতি ও মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে মধ্যপ্রাচ্য উত্তপ্ত হয়ে উঠলে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৯৫ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

সরবরাহ চেইনের ভেঙে পড়া: বিশ্ববাণিজ্য মূলত নিরাপদ ও স্বাভাবিক সরবরাহ ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রেড সি অঞ্চলে হুতিদের হামলার ফলে হাজার হাজার কন্টেইনার জাহাজ ঘুরপথে চলতে বাধ্য হচ্ছে, যার ফলে পণ্য পরিবহন ব্যয় বেড়েছে ৪০–৭০ শতাংশ পর্যন্ত (সূত্র: রয়টার্স, ২০২৪)। এর প্রভাব পড়ছে উৎপাদন খরচ ও ভোক্তামূল্যে।

বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা: যুদ্ধ মানেই অনিশ্চয়তা—আর বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তা পছন্দ করেন না। যুদ্ধের সময় বৈশ্বিক পুঁজিবাজারগুলোতে পতন দেখা দেয়। ২০২৩ সালে এমএসসিআই ওয়ার্ল্ড ইনডেক্স প্রায় ৭% কমে যায়। নতুন সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ কমে গেলে উৎপাদন, কর্মসংস্থান এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

উদ্বাস্তু সমস্যা ও শ্রমবাজার: বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ৮০ লক্ষ মানুষ ইউরোপে উদ্বাস্তু হয়। উদ্বাস্তুদের আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থানের চাপ স্থানীয় অর্থনীতির উপর বাড়তি বোঝা তৈরি করে। কিছু দেশে শ্রমবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। যুদ্ধের অভিঘাত সীমান্ত পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এটি শুধু মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে না, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির গতিকেও মন্থর করে। একদিকে যুদ্ধ প্রতিরোধের জন্য বাজেট বাড়ছে, অন্যদিকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ কমছে—এটি একটি আত্মঘাতী প্রবণতা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত, কূটনৈতিক সমাধানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিশ্বে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করা। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ কেবল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নয়, অর্থনৈতিক টেকসই উন্নয়নের জন্যও একান্ত অপরিহার্য।যুদ্ধ ও সংঘাতের অর্থনৈতিক প্রভাব শুধুমাত্র সামরিক ব্যয়ে সীমাবদ্ধ নয়; এটি অবকাঠামো ধ্বংস, মানব সম্পদের ক্ষতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বিঘ্ন এবং মানবিক সংকট সৃষ্টি করে। এই প্রভাবগুলি দীর্ঘমেয়াদে সমাজ ও অর্থনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। অতএব, শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক উপায়ে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

লেখত: মৃদুল কান্তি ধর, কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভ, সাবেক শিক্ষার্থী , ইএমবিএ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, জাবি

শেয়ার করুন:-
শেয়ার