ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপ না হলে অর্থনীতি পিছিয়ে যাবে: আনিসুজ্জামান

ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপ না হলে আমাদের অর্থনীতির একটা অংশ পিছিয়ে যাবে অর্থাৎ সামগ্রিক উন্নতি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।

বুধবার (৭ মে) হোটেল রেডিসন ব্লুতে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। এদিন বর্তমান পুঁজিবাজারের সমস্যা, উত্তরণ এবং একে সমৃদ্ধ করার জন্য ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে করনীয় বিষয়ে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।

আজ বৃহস্পতিবার চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর, ফারজানা লালারুখ, সিএসইর চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান, পরিচালক মেজর (অব) এমদাদুল ইসলাম, পরিচালক শাহজাদা মাহমুদ চৌধুরী, সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এম সাইফুর রহমান মজুমদার,। এছাড়াও সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসইসি ও সিএসইর অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

সভাতে প্রায় ১১টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মানিত প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন এবং প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- টিকে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, বিএসআরএম গ্রুপ, কেডিএস গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, ফারুক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, দৈনিক আজাদি লিমিটেড, নাহার এগ্রো কমপ্লেক্স লিমিটেড, খাতুনগঞ্জ চেম্বার, জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল চট্টগ্রাম, বিএসএ এপারেলস লিমিটেড, দি লাকি এপারেলস ইন্টারন্যাশনাল (প্রাঃ) লিমিটেড, এপিক প্রোপারটিজ লিমিটেড।

সভায় বেশকিছু প্রস্তাব ও মতামত দেওয়া হয়। সেগুলো হলো- ব্যবসার জন্য সামগ্রিক ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ব্যবসা করার জন্য বিদ্যমান পলিসিগুলোর পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং প্রয়োজনে নতুন করে তৈরি করতে হবে। ব্যবসার জন্য পরিবেশ অর্থাৎ পলিসি, প্রক্রিয়া এবং প্রয়োগিক সব ক্ষেত্রে ব্যবসা বান্ধব হওয়া জরুরী । ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, তখন স্বাভাবিকভাবে আমাদের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে। দেশে ফরেন ডিরেক্ট ইনেভেস্টমেন্ট কিংবা পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ আসার জন্য সর্বস্তরের (সব সংশ্লিষ্ট স্টেকদের) পদ্ধতিগুলো সহজ করতে হবে। ভালো ভালো সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে হবে।

বিদেশী কোম্পানিগুলোকে লিস্টেড করার জন্য পলিসি থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে পদ্ধতিকে সহজ করতে হবে ও সল্প সময়ে করার ব্যবস্থা করতে হবে। ষ্টক এক্সচেঞ্জ, রেগুলেটরি সংস্থা, সব স্টেকসমূহকে যে কোনো কাজের জন্য সম্মিলিতভাবে একই প্লাটফর্মে থেকে কাজ করতে হবে যেন ফান্ডামেন্টাল/মৌলিক ব্যাপারগুলোর একটি ধারাবাহিক সিস্টেমে থাকে, তবে কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যাবে। যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে কম্পালায়েন্স এমনভাবে কার্যকর করা দরকার যেন প্রসেসকে ঠিক রেখে প্রতিটি কাজ দ্রুত সময়ে সম্পন্ন হয়।

পুঁজিবাজার ভাইব্রেন্ট করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের অংশগ্রহণ করার সুযোগ বাড়াতে হবে, প্রোডাক্ট দিয়ে সমৃদ্ধ করতে হবে, অর্থনীতির গতিশীলতার বিবেচনায় কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সিএসই ইতিমধ্যে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ স্থাপনের জন্য ফিজিবল স্টাডি করেছে যেখানে ব্যবসায়িক কমিউনিটি অংশগ্রহণ করেছে কিন্তু এখনও এক্সচেঞ্জ চালু হয়নি। কেন হয়নি এবং কবে হতে পারে সে ব্যাপারে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে ।কেননা কমোডিটি এক্সচেঞ্জ অর্থনীতির অগ্রসরতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক।

ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের বক্তব্য বিস্তারিত শুনেন। একই সথে তিনি বলেন, আপনারা যে ধরনের পরিবর্তন আশা করছেন আমাদের কাজ করার উদ্দেশ্যও তাই। কারন সংস্কার চলমান এবং আজকের এই আলোচনাও এর অংশ।একটি দেশ ও তার সামগ্রিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তার ব্যবসায়িক কমিউনিটির বিশাল ভুমিকা রয়েছে । আমাদের লক্ষ্য ঠিক করতে হবে, সেটা অর্জনের জন্য সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়াটাই জরুরী। আর সেজন্য আপানদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপ না হলে আমাদের অর্থনীতির একটা অংশ পিছিয়ে যাবে অর্থাৎ সামগ্রিক উন্নতি হবে না। এখন পর্যন্ত কি হয়নি সেটা না ভেবে কতদূর এগিয়েছি, আরও কতখানি গেলে আমরা সবাইকে নিয়ে আমাদের লক্ষ্যে পৌছাব সেটা ভাবতে হবে, সে প্রক্রিয়াটা ঠিক করতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশ ২০ বছরে আমূল পরিবর্তন করেছে, আমরা ৫০ বছর পার করেছি কিন্তু অগ্রগতি ততখানি হয়নি, আমাদেরকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে, আমরাও পারব এই মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আজকের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে উল্লেখ্য ডেরিভেটিভস মার্কেট, কমোডিটি মার্কেট, বুরুকেটিকস পদ্ধতি, ট্যাক্স পদ্ধতি, পলিসি তৈরি করা ইত্যাদি সব বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। আলাদা করে দেখলে সব প্রবলেমগুলো একরকম কিন্তু যখন একসাথে দেখা হয় তখন অনেককগুলো বিষয়ে বিবেচনা করে এগিয়ে যেতে হবে। তবে উলেখ্য যে, ইতিমধ্যে কমোডিটি মার্কেট নিয়ে যে কাজ সিএসই সম্পন্ন করেছে সেটা প্রশংসার দাবিদার, বিশেষ করে রিয়েল টাইম রিস্ক মেনেজমেন্ট নিয়ে যে কাজ হয়েছে সেটাও রিমারকেবল এবং আমি অবগত যে, বিএসইসিও সন্তুষ্ট। আমরা আপনাদের মতামতগুলো জানলাম এবং মূলত বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরনের জন্যই এই আয়োজন। আশা করি, আপনাদের মতামত এবং চমৎকার প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করে দ্রুত একটা সঠিক পথ বের করতে পারবো।

কাফি

শেয়ার করুন:-
শেয়ার