ক্যাটাগরি: জাতীয়

পানিদূষণে শীর্ষে গার্মেন্টস, দ্বিতীয় চামড়াশিল্প

আমাদের পানি, জীবনধারণের অপরিহার্য উপাদান, আজ বিষাক্ত বর্জ্যের ভারে ন্যুব্জ। এক ভয়ংকর চিত্র উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়— পানিদূষণের প্রধান হোতাদের মধ্যে শীর্ষে আসীন পোশাক শিল্প (গার্মেন্টস), আর দ্বিতীয় স্থানে কলুষিত করছে চামড়া শিল্প। এই দুই শিল্পখাতের বর্জ্যই দেশের ৬৭ শতাংশ পানি দূষণের জন্য দায়ী। দরিদ্র আর স্বল্প আয়ের মানুষেরা বাধ্য হচ্ছেন এই বিষ মিশ্রিত পানি পান করতে, ব্যবহার করছেন কৃষিকাজে। পরিণতি— জনস্বাস্থ্য আজ মারাত্মক হুমকির মুখে।

রাজধানীর এক আলোচনা সভায় ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এই উদ্বেগজনক তথ্য তুলে ধরে। ‘বাংলাদেশে পিফাস (পিএফএএস) দূষণ ও জনস্বাস্থ্য’ শীর্ষক এই সভায় বিশেষজ্ঞরা একমত হন যে, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক পিফাস নিষিদ্ধকরণ নীতিমালা গ্রহণ করা জরুরি।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস. মুরশিদ। ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিউবার্ট বোম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-র সহ-আহ্বায়ক এমএস সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে।

সভায় পিফাস দূষণের ভয়াবহতা তুলে ধরে শাহিদ হাসান এক বিস্তারিত অবস্থানপত্র উপস্থাপন করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শারমীন এস. মুরশিদ আক্ষেপ করে বলেন, “পিফাস দূষণে আমরা জর্জরিত। একসময় আর্সেনিক নিয়ে গবেষণা হয়েছে, আন্দোলন করেছি। এখনো আমাদের দেশের মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে।” তিনি আরও বলেন, ভূপৃষ্ঠের পানি রক্ষা করা ছিল সরকারের দায়িত্ব, কিন্তু নীতির দুর্বলতা আর দূরদর্শিতার অভাবে আজ আমরা দূষিত পানি পান করছি।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের হিউবার্ট বোম এই দূষণকে শুধু বাংলাদেশের নয়, একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি সরকারকে দ্রুত এই দূষণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং কেমিক্যাল আমদানির রেজিস্ট্রেশন কঠোরভাবে নিরীক্ষণের কথা বলেন।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. সাখাওয়াত হাসান জীবন দ্রুত শিল্পায়নের সাথে সাথে দূষণ মোকাবেলার পদক্ষেপের অভাবের কথা তুলে ধরেন। দূষণকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি সবুজ শিল্পায়নের ওপর জোর দেন তিনি।

গণসংহতি আন্দোলনের মূখ্য সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি স্বাস্থ্যখাতকে কেবল চিকিৎসার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, ব্যবসার স্বার্থে শ্রমিক ও পরিবেশের মানদণ্ড মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা উচিত।

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল শিল্পবর্জ্য থেকে নির্গত পিফাস-এর ভয়াবহতাকে তুলে ধরেন, যা নীরবে আমাদের পানি ও ভূমিকে বিষাক্ত করে তুলছে এবং জনস্বাস্থ্যকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলছে। তিনি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে এই দূষণ মোকাবেলায় সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান।

আলোচনায় বক্তারা একবাক্যে এই ভয়াবহ পানিদূষণ রোধে জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেন, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশে জীবন ধারণ করতে পারে।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার