ক্যাটাগরি: রাজধানী

মসজিদের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে আছে ফ্যাসিস্টের দোসর করিম গ্রুপ

মগবাজারের ঐতিহ্যবাহী দিলু বেপারী ওয়াকফ এস্টেট মসজিদটি ১৯৩২ সালের ওয়াকফকৃত ঢাকার সুপ্রাচীন এক মসজিদ। তবে মসজিদের জমি অবৈধ ও বেআইনিভাবে জোর করে দখল করে আছে বিগত ফ্যাসিস্ট পলাতক সরকারের দোসর করিম গ্রুপ। বিগত অবৈধ সরকারের পেশী শক্তির ব্যবহার করে ৯ বছর যাবত মসজিদটির জমি দখলে রেখেছে এই গ্রুপ। জমি ফিরে পেতে চাইলেই মসজিদ কমিটিকে প্রাণনাশ ও গুমের হুমকি দেয় ফ্যাসিস্ট পলাতক সরকারের পরিচয় দাতা করিম গ্রুপের লোকজন। তবে দখলকৃত জমির সরকারি খাজনা এখনো মসজিদ আদায় করে যাচ্ছে।

সূত্র মতে, ১৯৩২ সালের ওয়াকফকৃত ঐতিহ্যবাহী দিলু বেপারী ওয়াকফ এস্টেট মসজিদটির জমিদাতা শেখ দিলু বেপারী। মসজিদের সামনে বিশাল একটি পুকুর ও বিশাল ধানক্ষেত ছিলো। যা দীর্ঘদিন যাবত ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে মসজিদের কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। এ জমির ধান ও পুকুরের মাছ বিক্রি করে মসজিদের খতিব, ইমাম, মোয়াজ্জিন ও খাদেম সাহেবদের বেতন দেওয়ার জন্য ওসিয়ত করে গিয়েছেন মসজিদের জমিদাতা শেখ দিলু বেপারী। তবে হাতিরঝিল প্রকল্পের কাজের জন্য এই মসজিদের কিছু জায়গা একোয়ার বা অধিগ্রহণ করা হয়।

জানা গেছে, সরকার কর্তৃক একোয়ারকৃত জায়গা অধিগ্ৰহণের পর ডিসি অফিস কর্তৃক মসজিদের সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে। যার পরিমাণ সোয়া ২৪ কাঠা জমি। তৎকালীন সময়ে হাতিরঝিল প্রজেক্ট ডাইরেক্টর মেজর শাকিল মসজিদের জায়গায় অস্থায়ীভাবে প্রজেক্ট নির্মাতাদের থাকার অস্থায়ী আবাসন হিসেবে জায়গাটি ব্যবহার করার অনুমতি চায়। এক বছরের পর মসজিদের জায়গা মসজিদকে বুঝিয়ে দিবে এমন শর্ত থাকে। কিন্তু এক বছর পর মসজিদ কমিটি জায়গা ফিরিয়ে দিতে আবেদন জানালে তিনি তা মসজিদকে বুঝিয়ে দেয়নি। মেজর শাকিল প্রজেক্ট নির্মাণ শেষে বিগত সরকারের দ্বারা অর্থনৈতিক লেনদেনে প্রলুব্ধ হয়ে মসজিদের জায়গা অনৈতিকভাবে দখলদার করিম গুরুপের হাতে উঠিয়ে দেয়। বিগত অবৈধ সরকারের পেশী শক্তির ব্যবহার করে নয় বছর যাবত মসজিদের জমি অবৈধ ও বেআইনি ভাবে জোর করে দখল করে আছে বিগত ফ্যাসিস্ট পলাতক সরকারের পরিচয় দাতা করিম গ্রুপ।

সূত্র জানান, পলাতক সরকারের সঙ্গে করিম গ্রুপের সদস্যরাও এখন পলাতক আছে। কিন্তু তাদের পেশি শক্তি ব্যবহার করে পুরো হাতিরঝিলে চালিয়ে যাচ্ছে করিম গ্রুপের রমরমা ব্যবসা। পুরো হাতিরঝিলে লোকজন পারাপারের নামে নৌ বোট ব্যবসা, চক্রাকার বাস,রেস্টুরেন্ট সিন্ডিকেট, অবৈধভাবে জমি দখল তারা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। মসজিদের পাশের সোয়া চব্বিশ কাঠা জায়গায় রান্নাঘর বানিয়ে ওয়াকফকৃত সোয়া ২৪ কাঠা জায়গা তাদের দখলে রেখেছে।

মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, অবৈধভাবে দখলকৃত জায়গাটি মসজিদের বর্ধিত অংশের কাজের জন্য ব্যবহার্য হিসেবে মসজিদ কাজে লাগাবে। এই জায়গায় হবে কবর স্থান, নির্মাণ হবে মাদ্রাসা ও এতিমখানা। জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর মসজিদ কমিটি এলাকার সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদেরকে মসজিদের জায়গা ফিরিয়ে দিতে নোটিশ জানিয়ে দিয়েছে। ৫ আগস্টের পূর্বে জায়গা ফিরে পেতে চাইলেই প্রাণনাশের ও গুমের হুমকি দিয়ে আসছিল তারা। রাজউকের নাম ভাঙিয়ে এখনো তারা মসজিদের জায়গা মসজিদকে বুঝিয়ে দিচ্ছে না। সেই সঙ্গে তাদের দখলদারিত্ব চালিয়ে রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছে হাতিরঝিলকে ঘিরে। তবে সরকারি খাজনা এখনো মসজিদ আদায় করে যাচ্ছে।

মসজিদ কমিটি বলছে, যুগ যুগ ধরে এই জায়গাটি মসজিদের ওয়াকফকৃত জায়গা। অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মসজিদের এই জায়গা পুনরুদ্ধার করার এই দাবি মগবাজারের সকল মুসল্লিদের প্রাণের দাবি। আজ অবধি অবৈধ দখল দারেরা নানাভাবে টাকা খাইয়ে এখনো বুঝিয়ে দেওয়ার কোন আগ্রহ অনুমান করা যাচ্ছে না বিধায় সকল সচেতন মানুষের উচিত মসজিদের জায়গা ফিরে পেতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার