ঢাকার অগোছালো রিকশা ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে অভিনব এক উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের একদল উদ্যমী শিক্ষার্থীর নকশা করা আধুনিক ব্যাটারিচালিত রিকশা শিগগিরই পাবে সরকারি অনুমোদন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রীণালয় ইতিমধ্যে এই প্রকল্পে সবুজ সংকেত দিয়েছে।
বুয়েটের গবেষক দলটি বর্তমানে রাস্তায় চলাচলকারী ই-রিকশাগুলোর নিরাপত্তা ও গঠনগত ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে একটি আদর্শ মডেল তৈরি করেছেন। নতুন এই রিকশায় যুক্ত হয়েছে ১৬টি উন্নত বৈশিষ্ট্য, যা এটিকে প্রচলিত মডেলগুলোর চেয়ে বেশি নিরাপদ ও দক্ষ করে তুলবে।
ই-রিকশা চালকদের দক্ষ ও নিয়মমাফিক চলাচল নিশ্চিত করতে প্রস্তুত হচ্ছে ৩০০ জন ‘মাস্টার ট্রেইনার’। এই তালিকায় অগ্রাধিকার পাবেন বুয়েটের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা, যারা ইতিমধ্যে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এতে সহায়তা করবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও ট্রাফিক পুলিশ।
বর্তমানে সিটি করপোরেশন আইন-২০০৯ শুধু প্যাডেল রিকশাকে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য কোনো স্পষ্ট নিয়ম নেই। তাই এই খাতে শৃঙ্খলা আনতে সংশোধন করা হচ্ছে আইন। নতুন প্রবিধানে থাকবে:
রিকশার নিবন্ধন ও লাইসেন্স প্রক্রিয়া
চালকদের বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ
গতি নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা মানদণ্ড
জরিমানা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
বর্তমানে রাস্তায় চলাচলকারী অনিয়ন্ত্রিত ই-রিকশাগুলোকে পর্যায়ক্রমে প্রতিস্থাপন করা হবে। চালকদের নতুন মডেলের রিকশা কেনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও এমআরএ’র সহায়তায় স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হবে। পুরোনো রিকশাগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য দেওয়া হবে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, এটুআই, বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিআরটিএ’র সমন্বয়ে তৈরি হবে একটি ডিজিটাল ডাটাবেইস। এতে রিকশাচালকদের নাম, পরিচয়পত্র, যোগাযোগ নম্বর ও রিকশার বিবরণ সংরক্ষণ করা হবে।
বর্তমানে ঢাকার রাস্তায় ১৫-২০ লাখ অনিয়ন্ত্রিত ই-রিকশা চলাচল করছে, যার বেশিরভাগই নিরাপত্তাহীন ও দুর্ঘটনাপ্রবণ। গত কয়েক বছরে এ নিয়ে বহুবার বিতর্ক ও বিক্ষোভ হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি। তাই এবার সরকার চাইছে অনিয়ন্ত্রিত গতিকে বন্ধ না করে বরং এটিকে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে।
‘সিটি করপোরেশন তিন চাকার স্বল্পগতির ব্যাটারিচালিত রিকশা (ই-রিকশা) চলাচল প্রবিধান ২০২৫’ এর খসড়া ইতিমধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে। শিগগিরই এটি উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের ভাষ্যে, “আমাদের লক্ষ্য ই-রিকশাকে একটি নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থায় রূপান্তর করা। বুয়েটের নকশা করা এই মডেল সেই লক্ষ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
এই উদ্যোগ সফল হলে ঢাকার রাস্তায় যানজট ও দুর্ঘটনা কমার পাশাপাশি রিকশাচালকদের জীবনমানেও আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন।