পুঁজিবাজারে মৌলভিত্তিসম্পন্ন, লাভজনক ও স্বচ্ছ কোম্পানি আনতে তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান নূন্যতম ১০ শতাংশ করার অনুরোধ জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠান বিএসইসি চেয়ারম্যান। চিঠির অনুলিপি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও অর্থ উপদেষ্টার একান্ত সচিব বরাবর পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন ধরেই মৌলভিত্তিসম্পন্ন, লাভজনক ও স্বচ্ছ কোম্পানির অভাবে ভুগছে। এর ফলে বাজারের গভীরতা অত্যন্ত সীমিত, যা দীর্ঘমেয়াদে একটি কার্যকর ও স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গঠনের পথে বড় বাধা। এই পরিস্থিতিতে দেশের পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। বাংলাদেশে বহু লাভজনক দেশি ও বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে, যাদের ব্যবসা শক্তিশালী এবং আয়ও উল্লেখযোগ্য। তবে এসব কোম্পানির অধিকাংশই এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো: তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করহারে উল্লেখযোগ্য পার্থক্যের অভাব। ২০২৪ সালের অর্থ আইন-এর তফসিল ২, অনুচ্ছেদ খ-এর দফা ক-এর অ অনুযাযী বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার সাড়ে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বর্ণিত অনুচ্ছেদ ও দফার ক-এর ঈ-অনুযায়ী অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার সাড়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ (সংযুক্তি ১)। তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারে এই ব্যবধান মাত্র ৫ শতাংশ। যা ভালো ও মৌলিকভাবে শক্তিশালী কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওযার ক্ষেত্রে আরও নিরুৎসাহিত করছে।
এতে আরও বলা হয়, যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়, তারা সাধারণত নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করে, সুশাসন মেনে চলে, এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে। করহারে ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে এই দায়িত্ববান আচরণকে পুরস্কৃত করা সম্ভব হবে এবং অন্যান্য ভালো কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করবে। ভালো কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ে, কারণ ভারা টেকসই আয় ও সুশাসনের আশ্বাস পায়। এটি বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করে এবং বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ায়। এছাড়া ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমানও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে। আপাতদৃষ্টিতে কর ছাড় মানেই রাজস্ব ঘাটতি মনে হলেও, তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়লে ব্যবসার পরিধি ও করনির্ভরতা উভয়ই বাড়ে। কর আদায়ে স্বচ্ছতা বাড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদে মোট রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায়। অনেক উন্নয়নশীল ও মধ্য-আয়ের দেশ, যেমন মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত ইত্যাদি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কর সুবিধা দিয়ে সফলভাবে ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারমুখী করেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে অধিকাংশ করপোরেট প্রতিষ্ঠান ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহের সুযোগ তৈরি হলে ব্যাংক খাতের ওপর চাপ কমে আসবে ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি হ্রাস পাবে। অন্যদিকে বেশি সংখ্যক ও বৈচিত্র্যময় কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে বাজারের গুটি কয়েক কোম্পানির মূল্য ওঠানামার ওপর নির্ভরতা কমে যাবে। এতে সূচকের উঠানামায় অস্থিরতা হ্রাস পায়, যা বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক বার্তা দেয়।
দেশি-বিদেশি ও বহুজাতিক কোম্পানিসমূহ যাতে পুঁজিবাজার হতে মূলধন উত্তোলনে উৎসাহিত হয় সেজন্য করসুবিধা প্রদান আবশ্যক যা প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ নানাবিধ খরচ বহন করতে হয বিধায তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের মধ্যে উপরিল্লিখিত করহারের ব্যবধান পূর্বের ন্যায় সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। এই পদক্ষেপ পুঁজিবাজারে গুণগতমানসম্পন্ন কোম্পানির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে, বাজারকে অধিকতর শক্তিশালী, গতিশীল ও স্থিতিশীল করে তুলবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের আর্থিক খাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা যায় বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এসএম