ভূমিকা: প্রশ্নের শিকড়ে ফিরে যাওয়া যোগ্য ব্যক্তি কখন অযোগ্য হয়ে পড়ে?
এই প্রশ্নে লুকিয়ে আছে হাজার বছরের রাজনীতি, রাষ্ট্রচিন্তা এবং সমাজব্যবস্থার মূল সংকট। কেউ জন্মসূত্রে রাজা, কেউ নির্বাচনে বিজয়ী, কেউ ধর্মীয় নেতারূপে, কেউ সৈনিক থেকে শাসক। কিন্তু প্রায়শই দেখা যায়—ক্ষমতা তাদের পরিবর্তন করে, কিংবা সিস্টেমই তাদের বিকৃত করে দেয়।
যোগ্যতা তখন শুধু একটি শুরুর দাবি হয়ে থাকে—বাস্তব শাসনে তা হয় বিকৃত, পরিত্যক্ত কিংবা বিক্রিত। এই বিশ্লেষণে আমরা ফিরে যাব রাজতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, ধর্মতন্ত্রের ইতিহাসে। দেখব—কে কিভাবে ‘যোগ্য’ হয়েছিলেন, এবং কেন কালের প্রবাহে ‘অযোগ্য’ হয়ে উঠলেন।
শেষত, আমরা দাঁড়াব বর্তমান বাস্তবতায়—যেখানে একমাত্র প্রশ্ন হবে, মানুষের মুক্তির জন্য কোন তন্ত্র সবচেয়ে প্রয়োজনীয়?
তন্ত্র মানে কী?
তন্ত্র মানে শাসনের কাঠামো। এই কাঠামোই ঠিক করে, কে শাসক হবে, কীভাবে ক্ষমতা অর্জন হবে, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, আর দায়বদ্ধতার ধরণ কেমন হবে।
সাধারণভাবে পাঁচটি তন্ত্র চিহ্নিত করা যায়:
১. রাজতন্ত্র (Monarchy)
২. পরিবারতন্ত্র / বংশতন্ত্র (Dynastic politics)
৩. প্রজাতন্ত্র / গণতন্ত্র (Republic/Democracy)
৪. একনায়কতন্ত্র / সামরিক শাসন (Autocracy/Military rule)
৫. ধর্মতন্ত্র (Theocracy)
আমরা দেখব—এই পাঁচটি তন্ত্রেই ‘যোগ্য’ মানুষ শাসনে আসেন, কিন্তু সময়ের সাথে কেউ অযোগ্য হয়ে পড়েন। প্রশ্ন হলো—কেন?
যোগ্যতার সংজ্ঞা: আমাদের অবস্থান
আমরা যেই যোগ্যতার কথা বলছি, তা চার স্তরের উপর প্রতিষ্ঠিত:
১. নৈতিকতা: ব্যক্তির নীতিবোধ, মানবিকতা, স্বচ্ছতা
২. দক্ষতা ও শিক্ষা: রাষ্ট্রচিন্তা, অর্থনীতি, ইতিহাস, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, সাংস্কৃতিক জ্ঞান
৩. কর্মদক্ষতা: বাস্তব সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতা, প্রশাসনিক সক্ষমতা
৪. জনসম্পৃক্ততা: মানুষের কণ্ঠস্বর শোনা, বেকারত্ব দূরীকরণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান, সামাজিক দায়বদ্ধতা।
এই চারটি উপাদান মিলেই গঠিত হয় প্রকৃত যোগ্যতা। এই যোগ্যতা ছাড়া কেউ নেতা হতে পারেন না—আর যদি হনও, তারা ক্ষমতার ভার বহন করতে পারেন না।
রাজতন্ত্র ও পরিবারতন্ত্রের আয়নায় যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বিবর্তন
রাজতন্ত্র— জন্মগত শ্রেষ্ঠত্ব না ঐতিহাসিক জড়তা?
রাজতন্ত্রের ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত দাবির ওপর—“একজন মানুষ, কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট বংশে জন্মেছে বলেই, সে অন্য সবার চেয়ে অধিক যোগ্য।” এটি আদিতে ঈশ্বরদত্ত বা ঐশ্বরিক অনুমতির দাবির সঙ্গে যুক্ত ছিল।
ইতিহাসের কয়েকটি দৃষ্টান্ত:
• ফারাও (মিশর): নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি দাবি করতেন।
• চীনের রাজবংশ: “Mandate of Heaven”-এর ধারক ছিলেন।
• ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্র: রাজা/রানী ছিলেন রাষ্ট্রপ্রধান এবং চার্চের প্রধান।
• ভারতীয় উপমহাদেশে: মুঘল ও অন্যান্য রাজাদের শাসন ছিল জন্মভিত্তিক উত্তরাধিকার নির্ভর।
কেন তারা যোগ্য ছিলেন (বা মনে করা হতো):
•উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, কূটনৈতিক, সংস্কৃতিতে পারদর্শী
•সেনাপতি ও প্রশাসক হিসেবে প্রস্তুত করা হতো ছোটবেলা থেকে
কেন তারা অযোগ্য হয়ে উঠতেন:
• জন্ম-যোগ্যতা কোনও বাস্তব দক্ষতা বা মূল্যবোধ নিশ্চিত করে না
• অধিকাংশ উত্তরসূরি শাসকেরা অহংকারী, অলস বা নির্মম হয়ে ওঠেন
• জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়ে
• নেতৃত্ব হয় এক বদ্ধবৃত্ত—কোনো বিকল্প বা সংশোধন নেই
রাজতন্ত্র একসময় শৃঙ্খলা এনেছিল, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এটি মানুষের মধ্যে বৈষম্য, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অযোগ্যতার চক্র তৈরি করে। জন্মই নেতৃত্বের মাপকাঠি হতে পারে না—এটি চরম অন্যায় এবং অমানবিক।
পরিবারতন্ত্র — গণতন্ত্রের মুখোশে বংশানুক্রমিক আধিপত্য
পরিবারতন্ত্র হলো গণতন্ত্রের বিকৃত রূপ—যেখানে শাসক নির্বাচিত হলেও, ক্ষমতা এক পরিবারের মধ্যেই ঘুরপাক খায়। এটি আধুনিক কালে রাজতন্ত্রের উত্তরাধিকার।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, উত্তর কোরিয়া, শ্রীলংকা—সবখানেই এই প্রবণতা লক্ষণীয়:
• শেখ পরিবার বনাম জিয়া পরিবার (বাংলাদেশ)
• গান্ধী পরিবার (ভারত)
• ভুট্টো পরিবার (পাকিস্তান)
• কিম বংশ (উ. কোরিয়া)
যোগ্যতা বলে দাবি করা হয়:
• ‘ঐতিহ্য’, ‘অভিজ্ঞতা’, ‘পরিচিতি’, এবং ‘জনসম্পৃক্ততা’
আসলে ঘটে যা:
• পরিবারতন্ত্র রাজনীতিকে একটি ব্যক্তিগত ব্যবসায় পরিণত করে
• দুর্নীতি, আত্মীয়করণ (nepotism), এবং লুটপাট বেড়ে যায়
• যুবসমাজ বা নতুন নেতৃত্ব উঠে আসার সুযোগ পায় না
• দলগত শৃঙ্খলার চেয়ে পারিবারিক আনুগত্য বড় হয়ে দাঁড়ায়
জনগণের ক্ষতি কোথায়:
• একই চক্রের মধ্যে সমস্যার সমাধান অসম্ভব
• উন্নয়ন ও নীতিনির্ধারণ হয় ক্ষমতা রক্ষার কৌশলে, জনগণের কল্যাণে নয়
পরিবারতন্ত্রের মধ্যে জন্ম ও সম্পর্কের যোগ্যতাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। একে গণতন্ত্রের নামে একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন রাষ্ট্রব্যবস্থা বলা চলে।
সংক্ষিপ্ত অন্তর্বর্তী সংলাপ:
রাজতন্ত্র একসময় শৃঙ্খলা এনেছিল
পরিবারতন্ত্র আধুনিক রাজতন্ত্রে রূপান্তরিত হয়েছে
কিন্তু উভয় তন্ত্রেই
যোগ্যতা = বংশ,
যোগ্যতা ≠ শিক্ষা, দক্ষতা, মূল্যবোধ, জনসম্পৃক্ততা।
আধুনিক তন্ত্রে যোগ্যতার মৃত্যুকাহিনি
গণতন্ত্র—সংখ্যার রাজনীতিতে গুণমানের পতন
গণতন্ত্র একসময় মানুষের স্বপ্ন ছিল। স্বাধীন মত প্রকাশ, জন-ইচ্ছার প্রতিফলন, এবং প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের সুযোগ—এসব ছিল এই ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি। কিন্তু ধীরে ধীরে গণতন্ত্র সংখ্যার খেলায় পরিণত হয়, যেখানে “কতজন বলছে” সেটাই ঠিক, “কে কী বলছে” তা নয়।
এই ব্যবস্থায় যোগ্যতা মূল্য পায় তখনই, যখন তা জনপ্রিয় হয়। একসময় নেতৃত্ব পেতে হলে লাগত দূরদর্শিতা, নৈতিকতা ও সেবার ইতিহাস, আজ তা মুছে গেছে নির্বাচনী কৌশল, গণমাধ্যমের প্রভাব এবং অর্থবলের ছায়ায়। আর এই ছায়ার মধ্যেই হারিয়ে যায় প্রকৃত যোগ্যরা—যারা কথা বলেন মানুষের অধিকারের পক্ষে, উন্নয়নের স্থায়ী রূপরেখা নিয়ে।
এইভাবে গণতন্ত্র পরিণত হয় ‘ভোট-সর্বস্ব ব্যবস্থায়’, যেখানে সত্য নয়, আবেগ বিক্রি হয়—যেখানে যোগ্যতা নয়, পরিচিতি আর প্রতিশ্রুতি জিতে যায়। জনগণ বিভ্রান্ত হয় মিডিয়ার নাটকে, রাজনৈতিক ধর্মীয় উস্কানিতে, আর সেখানে দাঁড়িয়ে এক সময়কার যোগ্য ব্যক্তিটিও জনসমর্থনহীন হয়ে পড়ে, হয়ে যায় ‘অযোগ্য’।
একনায়কতন্ত্র—শৃঙ্খলার নামে চিন্তার হত্যাকাণ্ড
একনায়কতন্ত্র আসে সংকটকে পুঁজি করে—“দেশে বিশৃঙ্খলা চলছে”, “বিচারব্যবস্থা দুর্বল”, “রাজনীতি দুষ্টু খেলোয়াড়ে ভরা”—এইসব যুক্তি দিয়ে যখন ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয় একজন বা এক গোষ্ঠীর হাতে, তখনই শুরু হয় এক ভিন্ন খেলাধুলা।
প্রথমে মনে হয়, কেউ একজন দৃঢ় হাতে হাল ধরেছে। উন্নয়ন হয়, শৃঙ্খলা ফিরে আসে, ঘুষ-দুর্নীতি কমে যায়। কিন্তু ধীরে ধীরে দেখা যায়—যে কথা বলছে না, সে-ই টিকে আছে। আর যে প্রশ্ন তোলে, সে ‘অবিশ্বস্ত’, ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’, ‘বিদেশি এজেন্ট’। এইখানেই যোগ্য ব্যক্তি পরিণত হয় অযোগ্যতে। কারণ একনায়কের প্রয়োজন চাটুকার, চিন্তাশীল নয়। রাষ্ট্র তখন চালায় ‘একজনের অভিমত’, দেশের কণ্ঠ হয়ে ওঠে ‘একটা মঞ্চ’—আর সেখানে হাজার চিন্তাশীল মানুষের মধ্যে একজনও টিকে না।
বহু যোগ্য শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, বিজ্ঞানী বা কর্মী—যারা স্বাধীনভাবে চিন্তা করে—তারা এই ব্যবস্থায় হয় নির্বাসিত, নয় নিঃশব্দ।
ধর্মতন্ত্র—নৈতিকতার নামে জ্ঞানের নিধন
ধর্ম, মূলত মানুষের ভিতরকার মূল্যবোধ গঠনের জন্য। কিন্তু রাষ্ট্র যখন ধর্ম দিয়ে পরিচালিত হয়, তখন ধর্ম হয় শাসনের হাতিয়ার। নৈতিকতার জায়গায় আসে ভয়, আত্মোপলব্ধির জায়গায় আসে বিধান। ধর্মতন্ত্রে যোগ্যতা নির্ধারিত হয় ঈশ্বরের নামে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কয়েকজন মানুষের ব্যাখ্যার মাধ্যমে। তারা ধর্মের যে অংশকে চায়, সেটুকু তুলে ধরে; বাকি ইতিহাস, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, সমাজতত্ত্ব—সব হয় ‘নিষিদ্ধ’ জ্ঞান। এখানে যোগ্যতা মানে হয় ‘ধর্মীয় ব্যাখ্যা জানা’, কিন্তু তার সঙ্গে বাস্তব রাষ্ট্র পরিচালনার জ্ঞান, অর্থনীতি বা প্রযুক্তির জ্ঞান—তা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। তাই একজন ধর্মীয় নেতা রাষ্ট্রনায়ক হতে পারেন, অথচ তিনি সমাজের জটিল বাস্তবতা বুঝেন না। যারা বোঝেন, তারা ‘অবিশ্বাসী’ বা ‘ভ্রান্ত’। এই অবস্থায় একসময় যোগ্য ব্যক্তি—যিনি মানুষের মুক্তি, শিক্ষা, সমতা ও আধুনিকতা নিয়ে কাজ করেন—তাকে রাষ্ট্রশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
সম্মিলিত উপলব্ধি:
তিনটি আধুনিক তন্ত্র—গণতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, ধর্মতন্ত্র—প্রথমদিকে মানুষকে আশ্বাস দিয়েছিল পরিবর্তনের, মুক্তির, ন্যায়ের। কিন্তু সময়ের সাথে তারা সকলেই যোগ্যতার পরিবর্তে বেছে নিয়েছে তাদের স্বার্থ রক্ষাকারীদের।
• গণতন্ত্রে যোগ্যতা হারায় সংখ্যার ভারে,
• একনায়কতন্ত্রে হারায় মতপ্রকাশের বন্ধনে,
• ধর্মতন্ত্রে হারায় জ্ঞান ও মানবিকতার অবদমনে।
এই বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠে—তাহলে আমরা কোন পথে যাব? আমরা কোন যোগ্যতা চাই? এবং সে উত্তর খুঁজতেই প্রয়োজন পরবর্তী পদক্ষেপ, যেখানে প্রস্তাব করা হবে এক নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থার রূপরেখা—যেখানে মানুষ, নীতি ও দক্ষতা হবে কেন্দ্রবিন্দু।
তাহলে কেমন তন্ত্র চাই মানুষকে মানুষের মতো বাঁচাতে?
মানুষমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা — এক ‘নৈতিক দক্ষগণতন্ত্র’-এর নকশা
কেন সব তন্ত্র ব্যর্থ হলো মানুষের কাছে?
রাজতন্ত্র বলল, “আমার জন্মই আমার যোগ্যতা”—মানুষ হারালো মর্যাদা
পরিবারতন্ত্র বলল, “আমার বংশই আমার অধিকার”—মানুষ হারালো সম্ভাবনা
গণতন্ত্র বলল, “সংখ্যাই সত্য”—মানুষ হারালো বিচার
*একনায়ক বলল, “আমি আইন”—মানুষ হারালো কণ্ঠ
*ধর্মতন্ত্র বলল, “ভয়েই শান্তি”—মানুষ হারালো স্বাধীনতা
এতগুলো তন্ত্র থাকতেও যদি মানুষ হয় গৃহহীন, বেকার, অপমানিত, নিপীড়িত—তবে প্রশ্ন জাগে, রাষ্ট্র কার জন্য? তন্ত্র কার জন্য?
বিকল্প কী? — এক নতুন প্রস্তাবনা: নৈতিক দক্ষগণতন্ত্র (Moral Meritocracy-based Democracy)
আমরা একটি এমন তন্ত্র কল্পনা করি— যেখানে নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে নৈতিকতা, দক্ষতা, জনদায়িত্ব, এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাস্তব সংযোগ-এর ভিত্তিতে। এই তন্ত্রের চারটি স্তম্ভ হবে:
১. নৈতিকতা:
• রাষ্ট্রনায়ক হতে হলে তার জীবনচরিত, সম্পদের উৎস, ও নীতিনৈতিকতা জনসমক্ষে স্বচ্ছভাবে উন্মুক্ত হতে হবে
• দুর্নীতিমুক্ত ও জনহিতকর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে
২. দক্ষতা:
• রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকা আবশ্যক
• নেতৃত্বে আসার আগে পাবলিক সার্ভিস, নীতিনির্ধারণ, বা সমন্বয় কাজে অভিজ্ঞতা থাকা চাই
৩. গণপ্রতিনিধিত্ব:
• নিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্ম ও নির্বাচনী ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই
• স্থানীয় জনগণকে নেতৃত্ব নির্ধারণে সক্রিয় ও শিক্ষিত ভূমিকা নিতে সক্ষম করে তোলা
৪. মানবিকতা:
• রাষ্ট্র হবে লাভের জন্য নয়, মানুষের জন্য
• সুবিধাবঞ্চিত, প্রান্তিক, সংখ্যালঘুদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
বাস্তবায়নের রূপরেখা (Action Framework)
১. শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার:
নৈতিকতা, গণতন্ত্র, অর্থনীতি ও প্রযুক্তিনির্ভর জীবনমুখী পাঠ্যক্রম চালু
২. রাজনৈতিক সংস্কৃতি সংস্কার:
নেতৃত্বের যোগ্যতা নির্ধারণে নির্বাচন কমিশনের পাশে একটি Merit Assessment Council গঠন
৩. মিডিয়া ও তথ্যপুঞ্জের ভূমিকা:
স্বচ্ছতা ও সচেতনতার জন্য তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা
জনগণকে ভুল তথ্য থেকে রক্ষা করে বাস্তব তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করা
৪. প্রবাসী ও তরুণদের অংশগ্রহণ:
বিশ্বব্যাপী দক্ষ জনশক্তিকে রাষ্ট্র গঠনে অন্তর্ভুক্ত করা
নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তি ও মানবিক চিন্তায় শক্তিশালী করা
চূড়ান্ত উপলব্ধি: মানুষই রাষ্ট্রের কেন্দ্রবিন্দু
মানুষ শুধুই ভোটার নয়, মানুষ হলো রাষ্ট্রের অস্তিত্বের কারণ।
অতএব, যে রাষ্ট্র বা তন্ত্র মানুষের যোগ্যতা, মর্যাদা ও জীবনের গুণগত মান উন্নয়নে প্রতিশ্রুত নয়—তা অযোগ্য রাষ্ট্রব্যবস্থা।
উপসংহার:
যেখানে মানুষ বড়, তন্ত্র নয়—সেই রাষ্ট্রই সত্যিকারের মানবিক রাষ্ট্র। রাজা, পিতা, একনায়ক কিংবা ইমাম নয়—আমাদের প্রয়োজন এমন এক রাষ্ট্রনায়ক, যিনি শিক্ষা, মানবতা, দক্ষতা ও জবাবদিহিতার আলোয় পরিচালিত। এবং সে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আমরা নাম দেব —নৈতিক দক্ষগণতন্ত্র। কে সেই সুন্দর কে!
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন