রাজনীতি
নির্বাচনের আগে বিচার ও সংস্কার দৃশ্যমান হতে হবে: এনসিপি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে। কিন্তু তার আগে বিচার এবং সংস্কার সরকারকে দৃশ্যমান করতে হবে। এটার জন্য যেটুকু সময় পাওয়া প্রয়োজন, সরকার সে সময়টুকু পেতে পারে।
আজ শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐক্যমত কমিমনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠকের মধ্যবর্তী বিরতীতে বেরিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে আখতার হোসেন বলেন, এনসিপি মনে করে অন্তরবর্তীকালীন সরকার যে এজেন্ডা-ম্যানডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, বিচার এবং সংস্কার দৃশ্যমান করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হবে। নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে কিন্তু তার আগে বিচার এবং সংস্কার কাজ সরকারকে দৃশ্যমান করতে হবে। এটার জন্য যেটুকু সময় পাওয়া প্রয়োজন, সরকার সে সময়টুকু পেতে পারে। কোনভাবেই কাজ ব্যাতিরেকে সময় পেতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত সংবিধানের বিষয়ে আলোচনা করেছি। এখন পর্যন্ত বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, দুদক এবং পুলিশ সংস্কার কমিশনের মত বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে সংবিধানের মাধ্যমে গনতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বরং এখানে প্রধানমন্ত্রীকে একচ্ছত্র ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। তার মধ্য দিয়েই সাংবিধানকিভাবে স্বৈরতান্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবার সুযোগ রয়েছে৷ আমরা ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলছি এবং বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের কথা বলছি। সেই প্রেক্ষাপটে কিভাবে সংবিধান পূনলিখন করা যায় এবং গণপরিষদ নির্বাচনের বাস্তবতা নিয়ে কথা বলেছি।
এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিনাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা আজকে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সাথে বসেছি। সেখানে আমাদের অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ১৬৬ টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে আমরা ১২৯ টির সাথে একমত হয়েছি। যেসব বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি সেগুলোর বিষয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ রয়েছে। মূলত এখন পর্যন্ত আমরা তিনটি বিষয়ে কথা বলেছি। প্রথম বিষয়টি হচ্ছে, প্রটেকশন অব সিটিজেন বা নাগরিকদের নিরাপত্তা। আমরা দেখেছি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরঙ্কুশ অধিকার নিশ্চিত হয়নি। সেসব বিষয়ে আমরা বিস্তারিত কথা বলেছি। দ্বিতীয় বিষয় পিসফুল ট্রানজেকশন অব পাওয়ার বা শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর। আমরা দেখেছি যখনই রাষ্ট্রের পাওয়ার ট্রানজেকশনের সময় এসেছে তখনই দেশে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। একটি নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে আরেকটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর কিভাবে হবে। এই বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। যাতে আমাদের অতীতের যেসব দুঃখ স্মৃতি যেগুলো রয়েছে সেগুলোর পুনরাবৃত্তি আর না হয়। তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে, সংসদ স্থিতিশীলতার নাম করে আর্টিকেল ১৭ দিয়ে কন্ঠরোধ করে রাখা হয়েছে। সেটি নিয়ে কথা হচ্ছে। যেটির মধ্য দিয়ে আমরা একসাথে সংসদে স্থিতিশীলতা, সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা আমাদের সংসদকে কিভাবে আরও বেশি কার্যকর করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় এলডি হলে সংস্কার কমিশনগুলোর প্রস্তাব নিয়ে এই বৈঠক শুরু হয়। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে রয়েছেন জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফররাজ হোসেন ও ড. ইফতেখারুজ্জামান। এনসিপির পক্ষ থেকে থেকে রয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা, যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসেল।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রাজনীতি
কোন ফ্যাসিস্ট অপশক্তি দ্বিতীয়বার ফিরে আসেনি: ড. হেলাল উদ্দিন

কোন ফ্যাসিস্ট পরাজিত অপশক্তি দ্বিতীয়বার ফিরে আসেনি উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনাও ফিরে আসবে না, আসতে পারবে না। এটা শেখ হাসিনার পরিবার নিশ্চিত হয়ে তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়সহ অন্যরা ইউরোপ-আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহন করতে শুরু করেছে। দুদিন আগে হাসিনার ছেলে জয় আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহন করে শপথ নিয়েছে। কারণ তারা নিশ্চিত বাংলাদেশে তাদের আর ফিরে আসা সম্ভব নয়। এদেশের জনগণ তাদেরকে চিরতরে বর্জন করেছে।
শুক্রবার (১৬ মে) সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শাহজাহানপুর পূর্ব থানা আমীর মুহাম্মদ শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রুকন সমাবেশে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সকল সহযোগী সংগঠনের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, যেই নেতা পালিয়ে যায় সে কখনো নেতা হতে পারে না। প্রকৃত অর্থে সে ক্ষমতা লোভী সুবিধাবাদী। ঐ নেতা সংগঠনের সদস্যদের জীবন নিয়ে রাজনীতি করে ফায়দা লুটে নেয়।
ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, জামায়াতে ইসলামী জান্নাতের টিকেট দেয় না, জান্নাতের পথ দেখায়। দ্বীন কায়েমের পথে আহ্বান জানায়। দ্বীন কায়েম হলেই দ্বীন পালন করা যায়। বাংলাদেশে দ্বীন কায়েম না হওয়ার কারণেই মানুষ চাইলেই দ্বীন পালন করতে পারে না। শুধু নামাজ-রোজা করতে পারলেই দ্বীন পালন করা নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসলামের সকল বিধি-বিধান মেনে চলার নামই দ্বীন পালন করা। সুদ-ঘুষ ইসলাম হারাম করলেও এদেশের জনগণ সুদ বা ঘুষ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। কারণ সুদ ভিত্তিক অর্থনীতি ব্যবস্থা চলমান। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে সুদ ভিত্তিক অর্থনীতি ব্যবস্থার পরিবর্তে যাকাত ভিত্তিক অর্থনীতি ব্যবস্থা চালু হবে। ফলে মানুষ সুদ থেকে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় মুক্তি লাভের সুযোগ পাবে। এভাবে ইসলামের সকল বিধি-বিধান মেনে চলা সহজ ও সম্ভব হবে। তাই দ্বীন কায়েমের মাধ্যমেই দ্বীন পালন করতে হবে। এটি একজন মানুষের ঈমানী দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনের নেতৃত্ব দিচ্ছি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এই নেতৃত্বে শামিল হতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শাহজাহানপুর পূর্ব থানা আমীর মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম। এতে প্রধান আলোচক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ফেরাউনের অনুসারী শেখ হাসিনার পতনের পর ফ্যাসিস্ট হাসিনার অনুসারী নব্য ফ্যাসিবাদের আজব আবারো আসতে পারে। সেজন্য গণ-অভ্যুত্থানের বিজয়ে উৎফুল্ল না হয়ে আল্লাহর দেওয়া বিধান বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যে বিভাজনের চক্রান্তে একটি গোষ্ঠী লিপ্ত রয়েছে। এরাই শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের অনুসারী নব্য ফ্যাসিবাদ।
ছাত্র-জনতার রক্তের সাথে বেঈমানী করে কেউ নব্য ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের চেয়েও ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে উল্লেখ করে ড. মাসুদ বলেন, ক্ষমতা দেওয়ার মালিক আল্লাহ, নেওয়ার মালিকও আল্লাহ। আল্লাহ কাউকে ক্ষমতায় বসিয়ে সম্মানিত করে আবার কাউকে ক্ষমতায় বসিয়ে অসম্মানিত, বেইজ্জতিও করে। ক্ষমতার দাম্ভিকতাই অহংকার, সেই অহংকার পতনের মূল। তিনি উপস্থিত রুকন সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, সময় যত অনুকূলে থাকবে তত বেশি উৎফুল্ল না হয়ে আল্লাহর আনুগত্য স্বীকারে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে।
শাহজাহানপুর পূর্ব থানা সেক্রেটারি মো. আনোয়ার হোসেন পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার মুফাসসির মাওলানা আবুল কাশেম গাজী। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন থানা কর্মপরিষদ সদস্য আবদুল খালেক, এস এম আজিম উদ্দিন ও নাহিদ জামাল প্রমুখ
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
রাজনীতি
ইশরাককে মেয়র ঘোষণার দাবিতে নগরভবনের সব গেইটে তালা

ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি চলছে। আন্দোলনকারীরা আজ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) নগর ভবনের সব গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন, যার ফলে কার্যত ভবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
এ কর্মসূচির ফলে আশপাশের এলাকায় যানজটসহ জনদুর্ভোগও চরমে পৌঁছেছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পরও ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব না দেওয়ার মাধ্যমে সরকার ‘আইনের শাসন ও জনগণের রায়’কে অগ্রাহ্য করছে। তারা জানান, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এদিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ ডিএসসিসির বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নগর ভবনে প্রবেশ করতে পারেননি।
আজ সকাল থেকেই ‘ঢাকার সাধারণ ভোটারদের আয়োজনে নগর ভবন অবরোধ, আয়োজনে: নগরবাসী’ ব্যানার নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মিছিলসহকারে আন্দোলনকারীরা নগর ভবনের সামনে জড়ো হন। মূল ফটক, আশপাশের সড়ক ও প্রবেশপথে অবস্থান নেওয়ায় পুরো এলাকায় যান চলাচল প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
নগর ভবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারায় অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করতে পারছেন না। একই সঙ্গে নানা সেবা নিতে আসা নাগরিকরাও হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অনেক কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলেও সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে অফিসে প্রবেশ করতে পারছেন না।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে প্রায় পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। তবে চলতি বছরের ২৭ মার্চ এক ট্রাইব্যুনাল রায়ে ওই নির্বাচনের ফল বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা হয়। এরপর ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চায় নির্বাচন কমিশন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
রাজনীতি
আ. লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি

বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।
সোমবার (১২ মে) বিকেলে সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠনের পর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্য ও ভিন্নমতের মানুষের ওপর হামলা, গুম, খুন, হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন নিপীড়নমূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিরুদ্ধে গত ১৫ জুলাই থেকে ০৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গুম, খুন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী কার্য ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং এসব অভিযোগ দেশি ও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেহেতু উল্লিখিত অপরাধগুলোর অভিযোগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং দেশের ফৌজদারি আদালতে বহুসংখ্যক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেহেতু এসব মামলার বিচারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, বাংলাদেশের সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার লক্ষ্যে গত ০৫ আগস্ট ২০২৪ খ্রি. পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, উসকানিমূলক মিছিল আয়োজন, রাষ্ট্রবিরোধী লিফলেট বিতরণ এবং ভিনদেশে পলাতক তাদের নেত্রীসহ অন্য নেতাকর্মী কর্তৃক সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অপরাধমূলক বক্তব্য প্রদান, ব্যক্তি ও প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের প্রচেষ্টাসহ আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, দলটি এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের মামলার বাদী ও সাক্ষীদের মনে ভীতির সঞ্চার করা হয়েছে ও এভাবে বিচার বিঘ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, যেহেতু সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকাসহ জনমনে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশে সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো বিভিন্ন বেআইনি কার্যকলাপ ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। যেহেতু সরকার যুক্তিসংগতভাবে মনে করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা-১৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটি এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সমীচীন।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
গত বছরের জুলাই অগাস্টের আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। শনিবার (১০ মে) রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্ত আসে। বৈঠক শেষে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেস-সহ আওয়ামী লীগ এর যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
রাজধানী
ভূতুড়ে আ.লীগের কার্যালয় এখন মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল

রাজধানীর গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখন অনেকটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভেতরের সব আসবাব লুট করে নিয়ে যাওয়ার পর এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। পোড়া এই ভবনের নিচতলা শৌচাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেই সঙ্গে মাদকসেবীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। ছয় মাস ধরে মলমূত্র জমে থাকার কারণে উৎকট গন্ধ আশপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। এ জন্য ভবনের সামনের সড়কে নাক চেপেও হাঁটা দায়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
রাজনীতি
একাত্তরের গণহত্যায় অভিযুক্তদের অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান এনসিপির

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে, তাদের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
সোমবার (১২ মে) এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণের ঐতিহাসিক সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়—১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪—কে যথাযথ স্বীকৃতি ও মর্যাদা দেওয়া রাজনীতির পূর্বশর্ত।
এনসিপি জানায়, একাত্তরে যারা জনগণের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন এবং যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় সহায়তার অভিযোগ রয়েছে, তারা যেন নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেন। এ পদক্ষেপ জাতীয় ঐক্য দৃঢ় করতে এবং চব্বিশের অভ্যুত্থানের জনচেতনার বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে দলীয়ভাবে বিচার অন্তর্ভুক্ত করা, এবং জুলাই ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে চলমান ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিভিন্ন দল, মত ও সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু একটি পক্ষ আন্দোলনে দলীয় ও ইতিহাসবিরোধী স্লোগান তুলে জাতীয় ঐক্য পুনর্গঠনের সুযোগকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
এনসিপি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তাদের কোনও সদস্য সাম্প্রতিক আন্দোলনে দলীয় বা ইতিহাসবিরোধী স্লোগান দেয়নি। যেসব আপত্তিকর স্লোগান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, তার সম্পূর্ণ দায় সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নিতে হবে। এনসিপিকে এতে যুক্ত করা অনভিপ্রেত।
বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়, আন্দোলনকারীরা যখন জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন, তখন এক পক্ষ আপত্তি জানালেও তারা তা দৃঢ়ভাবে পরিবেশন করে।
এনসিপি মনে করে, যারা চব্বিশের অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে এগিয়েছেন, তাদের অবশ্যই ‘বাংলাদেশপন্থি’ ভূমিকা ধরে রাখতে হবে।
বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়, অতীতের রাজনৈতিক অবস্থান বা আদর্শগত পার্থক্য যদি বিভাজন ও অনৈক্যের জন্ম দিয়ে থাকে, তবে সংশ্লিষ্টদেরই উচিত জনগণের সামনে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের পথে অগ্রসর হওয়া। কেবল এই ঐক্যের মাধ্যমেই ‘মুজিববাদ’কে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করা সম্ভব বলে মনে করে এনসিপি।
এমএস