Connect with us
৬৫২৬৫২৬৫২

মত দ্বিমত

ইউক্রেনের মতো বাংলাদেশও কি এক নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হতে যাচ্ছে?

Published

on

এনসিসি ব্যাংক

ভূমিকা: সংকটের মূল কারণ কী?
বাংলাদেশ এখন এক ভয়ংকর রাজনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক মোড়ে দাঁড়িয়ে।
•শেখ হাসিনার একদলীয় শাসনামলে ভারত তার প্রভাব নিশ্চিত করেছিল।
•কিন্তু এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে ভারত সেই নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে।
•বিএনপি ও অন্যান্য দল নির্বাচনী সরকারের দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
•দেশের ভেতরে অরাজকতা বেড়েছে, সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা ভয়াবহ আকার নিয়েছে।
এই অস্থিরতার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো ভারত তার রাজনৈতিক প্রভাব হারানোর আতঙ্কে আছে, এবং সেটিই বর্তমান সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

১. ভারত কেন এই পরিস্থিতিতে নার্ভাস?
ভারত সবসময় বাংলাদেশকে নিজের কৌশলগত বলয়ে রাখতে চেয়েছে।
•শেখ হাসিনার শাসনে ভারত সরাসরি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা পেয়েছে।
•নির্বাচন, নিরাপত্তা, পররাষ্ট্রনীতি—সবখানে ভারতের আধিপত্য ছিল।
•কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে ভারত সরাসরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
•বাংলাদেশ যদি আওয়ামী লীগ-বিহীন নির্বাচনী সরকারের অধীনে শক্তিশালী সরকার গঠন করে, সেটি ভারতের জন্য হুমকি।
ভারত এখন মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে বাংলাদেশে নিজের প্রভাব ফেরাতে, এবং সেটি করছে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাল দিয়ে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

২. নির্বাচনী সরকারের দাবি ও সহিংসতা: কারা লাভবান হবে?
বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনী সরকারের দাবি করছে।
•শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার এটি কখনো মেনে নেয়নি।
•কিন্তু এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থাকায় ভারতীয় প্রভাব কমে গেছে, আর সেই সুযোগে বিরোধীরা শক্তি বাড়াচ্ছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই সংঘাতের আসল লাভবান কে?
•বিএনপি কি আদৌ ক্ষমতায় আসতে পারবে, নাকি শুধু পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে?
•ভারত কি এই সুযোগে হস্তক্ষেপের নতুন অজুহাত তৈরি করছে?
•চীন কি এই রাজনৈতিক শূন্যতার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে নতুন খেলায় নামছে?
এই উত্তেজনা যদি আরও বাড়তে থাকে, তাহলে দেশ গৃহযুদ্ধের পথে চলে যেতে পারে।

৩. দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর আত্মকেন্দ্রিকতা: সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এখনো দেশের চেয়ে নিজেদের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
•বিএনপি ও অন্যান্য দল একটি স্থায়ী সমাধানের বদলে ক্ষমতার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
•রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থে জনগণের সংকটকে আরও গভীর করছে।
•এই রাজনৈতিক বিভক্তি দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, আর দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে।
দেশের এই ভয়াবহ সংকটেও কোনো দলই সত্যিকারের সমঝোতার জন্য এগিয়ে আসছে না।
ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে দেশ এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, যেখানে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো সুযোগ নিচ্ছে।

৪. ভারত-চীন প্রতিযোগিতা: বাংলাদেশ এখন ভূরাজনৈতিক সংঘর্ষের কেন্দ্রে
ভারতের মাথাব্যথার মূল কারণ:
•বাংলাদেশে যদি আওয়ামী লীগ-বিহীন নির্বাচনী সরকারের অধীনে স্বাধীন সরকার আসে, তাহলে সেটি ভারতের স্বার্থ রক্ষা নাও করতে পারে।
•শেখ হাসিনার অধীনে ভারতীয় স্বার্থ অক্ষুণ্ন ছিল, কিন্তু এখন সেটি অনিশ্চিত।
•ফলে ভারত যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশে নিজেদের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।

চীনের কৌশল:
•ভারতীয় প্রভাব কমায় চীন এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে।
•বাংলাদেশে নতুন ঋণ সুবিধা, সামরিক সহায়তা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করছে।
•চীন চাইবে ভারতের আধিপত্য পুরোপুরি দুর্বল করতে।
ফলাফল: বাংলাদেশ দুই পরাশক্তির লড়াইয়ে আটকে গেছে। যদি ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এটি নতুন প্রক্সি যুদ্ধের ময়দানে পরিণত হবে।

৫. সেভেন সিস্টার ও আঞ্চলিক সংকট: নতুন সংঘাতের ইঙ্গিত?
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট বাড়লে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও অস্থিরতা বাড়তে পারে।
•বাংলাদেশ থেকে অভিবাসনের ঢল নামতে পারে।
•ভারতে বিজেপি সরকার এটি হিন্দু-মুসলিম ইস্যুতে রূপান্তর করতে পারে।
•শরণার্থী সংকট ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও খারাপ করতে পারে।
এর পাশাপাশি, উগ্রবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।
ভারত যদি মনে করে বাংলাদেশে তাদের স্বার্থ হুমকির মুখে পড়েছে, তাহলে তারা সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে।

৬. অর্থনৈতিক ও সামরিক বাস্তবতা: কী হতে যাচ্ছে?
বাংলাদেশ এখন তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে।
•ডলার সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, বিনিয়োগ কমে যাওয়ার ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
•সরকার অর্থনৈতিক সংকট সামাল না দিয়ে সামরিক প্রতিযোগিতায় মেতেছে।
•চীনের কাছ থেকে নতুন সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহের সিদ্ধান্তে ভারত আরও ক্ষুব্ধ।
এটি যদি চলতে থাকে, তাহলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে পুরোপুরি অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে।

উপসংহার: বাংলাদেশ কি নতুন ইউক্রেনের পথে?
বর্তমান বাস্তবতা দেখে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ একটি মারাত্মক রাজনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক ফাঁদে আটকে গেছে।
•শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারতীয় আধিপত্য ছিল নিশ্চিত, এখন সেটি দুর্বল হয়েছে।
•ভারতের হস্তক্ষেপের সুযোগ কমায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি আরও অস্থিতিশীল হয়েছে।
•চীন ও ভারত নতুন করে বাংলাদেশকে নিজেদের বলয়ে টানতে চাইছে, এবং এটি ভয়ংকর সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
•পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
•রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি খাতে সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে, যা পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে উদ্বেগের কারণ।
যদি বাংলাদেশ ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এটি প্রক্সি যুদ্ধের নতুন ময়দান হবে।
যদি ভারতীয় আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়, তাহলে স্বাধীন নীতিনির্ধারণের সুযোগ নষ্ট হবে।
যদি চীন অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তার করে, তাহলে ভারত প্রতিক্রিয়া দেখাবে, যা আরও বিপজ্জনক হতে পারে।
যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে কঠোর হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে, তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।

বাংলাদেশের কৌশল কী হওয়া উচিত?
বাংলাদেশ যদি একটি স্বাধীন ও ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে চায়, তাহলে তাকে কয়েকটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে:
•ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে, যাতে কোনো একটি শক্তির প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা তৈরি না হয়।
•যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে, কিন্তু তাদের অতিরিক্ত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রোধ করতে হবে।
•রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি খাতে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে, তবে তা যেন পশ্চিমাদের উসকে না দেয়।
•অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বহুমুখী বাণিজ্য কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
•রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক মনোভাব গ্রহণ করতে হবে, যাতে জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখা হয়।

বাংলাদেশের মূল সমস্যা: দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও শিক্ষা খাতের অবক্ষয়
একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের জন্য সর্বপ্রথম দুর্নীতি নির্মূল করা জরুরি।
•বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূল শত্রু হলো দুর্নীতি, যা দেশের সম্পদ লুটপাট করছে।
•রাজনৈতিক দলগুলো কেবল নিজেদের ক্ষমতার লড়াইয়ে ব্যস্ত, কিন্তু দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করছে না।
•দেশকে দারিদ্র্য ও সন্ত্রাসমুক্ত করতে হলে অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে জনগণের সম্পদ লুটপাটের বদলে সঠিকভাবে বিনিয়োগ হয়।
•শিক্ষা খাতের অবক্ষয় থামিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে, কারণ শিক্ষাই একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে।
যদি রাজনৈতিক দলগুলো স্বার্থপরতা ত্যাগ না করে, তাহলে বাংলাদেশ কখনোই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না।
জাতীয় ঐক্য, সুশাসন ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ছাড়া দেশ একটি গভীর খাদের দিকে ধাবিত হবে।

তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী?
বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে:
•বাংলাদেশ কি নতুন ইউক্রেন হবে, নাকি সময় থাকতেই নিজেদের রক্ষা করতে পারবে?
•সরকার কি সঠিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, নাকি ভুল পথে হাঁটবে?
•ভারত-চীন প্রতিযোগিতার মাঝে বাংলাদেশ কি নিজেদের স্বাধীনতা বজায় রাখতে পারবে?
•পশ্চিমা বিশ্ব ও রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক কেমন হবে?
যদি ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশ আরেকটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে, যা ইতিহাসে একটি নতুন রাজনৈতিক বিপর্যয় হিসেবে লেখা থাকবে।
যদি বাংলাদেশ বিচক্ষণ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করতে পারে, তাহলে এটি দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত শক্তিতে পরিণত হতে পারে।
কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন স্বচ্ছ নেতৃত্ব, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

শেয়ার করুন:-

মত দ্বিমত

কথা ছিলো, কিন্তু কেউ কথা রাখেনি: বিশ্বব্যবস্থার প্রতিশ্রুতিহীনতা ও বাংলাদেশের অন্তর্গত প্রশ্ন

Published

on

এনসিসি ব্যাংক

রাতের আকাশে আগুন ছড়িয়েছে আবার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানে বোমা বর্ষণ করেছে। গুঁড়িয়ে গেছে কেমিক্যাল স্থাপনা, দাউ দাউ করে জ্বলছে আগ্নেয় প্রতিশোধের আগুন। ইউক্রেনের যুদ্ধ থামেনি; রাশার গর্জন এখনও ইউরোপের কানে বিদ্যুৎ হয়ে বাজে। আর ইসরাইল গাজায় চালাচ্ছে নিধনযজ্ঞ—হামাসের লড়াইয়ের নামে, সাধারণ মানুষের প্রাণহানি আজ অজস্র। অথচ প্রতিশ্রুতি ছিলো-শান্তির, ন্যায়ের, মানবাধিকারের। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

চীন নিশ্চুপ, কৌশলে ব্যস্ত। ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় তার বলয় রচনা করছে, আর বাংলাদেশের কাঁধে জমে উঠছে সীমান্ত হত্যা, পানি সমস্যা, অর্থনৈতিক শ্বাসরোধ। দেশের ভেতরে চলছে এক অসহ্য অস্থিরতা, এক ভয়াবহ সামাজিক এবং নৈতিক ভাঙন। এই হলো আমাদের বাস্তবতা। এই হলো সেই পৃথিবী, যার দিকে তাকিয়ে এখন প্রশ্ন ওঠে—এ কোন পৃথিবী আমরা দেখতে পাচ্ছি? কী কথা ছিলো আর কী করছি?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানুষ স্বপ্ন দেখেছিলো এমন এক রাষ্ট্রের, যেখানে মানুষ শুধু মানুষ হিসেবেই বাঁচবে। যেখানে রাষ্ট্র তাদের রক্ষা করবে, সম্মান দেবে, পথ দেখাবে। সেই স্বাধীনতা দিবসে, সংবিধান রচনার মুহূর্তে, দেশের প্রতিটি ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকের হৃদয়ে ছিলো একটাই বিশ্বাস—এই রাষ্ট্র কথা রাখবে। কিন্তু আজ, বারবার ফিরে আসে সেই প্রশ্ন—কেউ কথা রাখেনি, কিন্তু কেনো?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশ আজ যেন এক ব্যবহৃত ভূখণ্ড। কখনো ভারতের রাজনৈতিক বলয়ে, কখনো চীনের অর্থনৈতিক রাস্তার পাশে, কখনো পশ্চিমা বিশ্বে ‘স্ট্যাটেজিক পার্টনারশিপ’-এর শর্তাধীন অবস্থানে—আমরা আছি, কিন্তু আমরা নিজেরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, তা জানি না। এই রাষ্ট্র কি শুধুই দুর্নীতি করেই খুশি? নাকি এখনও কোনো বিকল্প পথের সন্ধান চায়?

বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামো, বিশেষত বিসিএস ক্যাডারগণ—যাঁদের হবার কথা ছিলো জনগণের সেবক, ন্যায়বিচারের রক্ষক—তাঁরাও আজ আর সেই দায়িত্ব পালনে অগ্রগামী নন। আজ তাঁদের ভূমিকা প্রায়শই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে সিস্টেমকে রক্ষা করা, জনগণের মুখে তালা পরানো এবং ক্ষমতার নির্দেশ পালন করার মধ্যে। এটাই কি তাঁদের জাতিগত অ্যাসাইনমেন্ট ছিলো?

আর যদি বহিঃশত্রু এসে দাঁড়ায় সীমান্তে, যদি দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে, যদি বাংলাদেশ কোনো বৃহৎ শক্তির চাপে পড়ে—তাহলে কি বাংলার সাগর, বাংলার আকাশ, বাংলার এই ভূখণ্ড প্রস্তুত আছে আত্মরক্ষার জন্য? শুধু অস্ত্র দিয়েই তো রক্ষা হয় না কোনো দেশ; রক্ষা হয় মানুষ দিয়ে, মানুষের সম্মান দিয়ে, নেতৃত্বের সততা দিয়ে। আর সেসবের কি এখন সামান্য অবশিষ্ট আছে?

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংকট হলো—তা নিজেকে নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করতে জানে না। না রাষ্ট্র, না নাগরিক—কেউই নিজেদের জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে রাজি নয়। আর তাই এই প্রশ্ন, যা আজ শুধু এক ব্যক্তির নয়, এক জাতির, এক সময়ের: বাংলাদেশ কি শুধুই ব্যবহারযোগ্য শরিক হিসেবে থাকবে? না কি সে তার নিজের পরিপূর্ণ আত্ম-নির্ভর অস্তিত্ব খুঁজে নেবে?

আমরা এখন এমন এক যুগে প্রবেশ করেছি, যেখানে রাষ্ট্ররা নিজেদের কথা রাখে না, বিশ্বনেতারা কথা রাখে না, এমনকি আন্দোলনকারীরাও মাঝে মাঝে নিজেদের স্বপ্ন থেকে সরে যায়। তাই এই লেখার উদ্দেশ্য শুধু শোক প্রকাশ নয়, বরং তা এক রাজনৈতিক ও নৈতিক পুনরাবিষ্কারের আহ্বান।

সত্যি বলতে, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এখন কৌশলের অংশ। যুদ্ধের নামে শান্তি, মিত্রতার নামে ব্যবহার, উন্নয়নের নামে শোষণ—এই হলো বৈশ্বিক রাজনীতির নতুন ব্যাকরণ। আর এ ব্যাকরণ বোঝার দায় এখন আমাদের। একমাত্র জনগণই পারে এই মুখোশ ছিঁড়ে ফেলে রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যবস্থাকে নতুন প্রশ্নে দাঁড় করাতে—কথা রাখবে কে? কবে? আর রাখবে কি আদৌ?

এই প্রশ্নে আমাদের থেমে গেলে চলবে না। আমাদের ইতিহাস আছে—স্বাধীনতা যুদ্ধ, গণঅভ্যুত্থান, ভাষা আন্দোলন। আমাদের সংগ্রাম আছে। দরকার আছে কেবল একটি দৃশ্যমান জাতীয় পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা—যেখানে কথার চেয়ে কাজ, প্রতিশ্রুতির চেয়ে দায়িত্ব বড় হয়ে উঠবে।

অতএব, এই জাতির সামনে এখন শুধু একটিই করণীয়—নিজেদের কথা নিজে রাখতে শেখা। কারণ আর যদি কেউ কথা না রাখে, তবে আমাদেরও বাঁচার আর কোনো কথা থাকবে না।

রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

প্রবাস

টোকাই যখন রক্ষক, আর সেনাবাহিনী হয়ে দাঁড়ায় দর্শক: একটি রাষ্ট্রদ্রোহের জবাব কোথায়?

Published

on

এনসিসি ব্যাংক

বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি কি শুধু রাজনীতিবিদদের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য জন্ম নিয়েছিল? এই প্রশ্নটি আজ কেবল বুদ্ধিবৃত্তিক নয়—এটি একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা ও জাতির অস্তিত্বঘন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে রয়েছে লুটপাট, অন্যদিকে রয়েছে নির্বিকারতা। একদিকে দুর্নীতিতে হাবুডুবু খাওয়া প্রশাসন, অন্যদিকে নিজের রক্ত দিয়ে, হাড়-মাংস দিয়ে এই রাষ্ট্রকে রক্ষা করে চলেছে যে জনগণ—বিশেষত সেই ‘টোকাই’ শ্রেণি—তারা আজও জানে না, রাষ্ট্রটা আদৌ তাদের জন্য কিনা।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

২০২৪ সালের জুলাইয়ে যখন এক নতুন ইতিহাস রচিত হয়—স্বৈরাচার পতনের জন্য গোটা জাতি রাস্তায় নামে, তখন সশস্ত্র বাহিনী কিংবা রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কাঠামো এক বিরাট প্রশ্নের মুখে পড়ে। দীর্ঘকাল ধরে যে বাহিনীর পিছনে জনগণের অর্থে রাষ্ট্রীয় বাজেটের বৃহত্তর অংশ ব্যয় হয়, যারা রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষার প্রতীক বলে বিবেচিত, তারা তখন কেন নীরব ছিল? শুধু নীরব নয়—প্রকৃতপক্ষে তারা একটি অবৈধ ও গণবিচ্ছিন্ন শাসনের রক্ষাকবচ হিসেবেই কাজ করেছে বছরের পর বছর। অথচ যাদের নামে আমরা একসময় ‘অনুন্নত’ বলতাম, যাদের কোনো রাজনৈতিক স্ট্যাম্প নেই, যাদের অস্ত্র কেবল রাগ আর ক্ষুধা—সেই ‘টোকাই’ শ্রেণির মানুষেরাই দেশের ভবিষ্যৎ বদলের প্রধান চালিকা হয়ে উঠেছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তাহলে সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা কোথায়?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই প্রশ্নের উত্তর শুধু একটি বাহিনীর গায়ে কালি লাগানো নয়। এটি জাতির সামনে একটি মূল প্রশ্ন উপস্থাপন: রাষ্ট্র কার? রক্ষার দায়িত্ব কাদের? জনগণের পয়সায় যাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র কিনে দেওয়া হয়, তারা বিপদের সময় কোন ভূমিকায় থাকে? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া না গেলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আর কোনো প্রতিষ্ঠানিক ন্যায়বিচার বা গঠনমূলক রাষ্ট্রচিন্তা টিকে থাকবে না।

স্বৈরতন্ত্রের দীর্ঘ যাত্রায় দেখা গেছে—সেনাবাহিনী কখনোই জনগণের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। তারা শুধু রাষ্ট্রক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে চেয়েছে—এমনকি সেটা যদি স্বৈরাচারী ও বিদেশপন্থী শাসকদের পক্ষে হয় তবুও। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মিশর, পাকিস্তান বা মিয়ানমারের চেয়ে কোনো আলাদা দেশ নয়। বরং বাংলাদেশের সেনাবাহিনী আরও দক্ষতায় স্বৈরতন্ত্রকে কাস্টমাইজড করে টিকিয়ে রেখেছে—সীমান্তে অস্ত্র নয়, কাঁধে বাণিজ্যের ব্যাগ নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন হয়েছে।

অন্যদিকে, এই দেশের সবচেয়ে নিরস্ত্র ও নিরুপায় মানুষরাই যখন রাজপথে রক্ত দেয়, লাশ পড়ে, গুম-খুন সহ্য করে দেশ রক্ষা করে—তখন রাষ্ট্র তাদের কী দিয়েছে? রাষ্ট্র কখনো তাদের ‘নিরাপত্তা বাহিনী’ বলেছে? না, রাষ্ট্র তাদের ‘উসকানিদাতা’, ‘জঙ্গি’, ‘রাজাকার’ বা ‘বাম চরমপন্থী’ আখ্যা দিয়েছে। অথচ ইতিহাস সাক্ষী—বাংলাদেশের সবচেয়ে বিপ্লবী ও প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করেছে এই টোকাই শ্রেণির মানুষরাই, যারা প্রশাসন, কূটনীতি কিংবা বড় পুঁজির সুবিধা ছাড়াই দেশপ্রেমকে বাস্তবতার মাটিতে নামিয়ে এনেছে।

এই ভয়ানক বৈপরীত্যের জবাব কে দেবে?

রাজনীতিবিদরা? যাদের অধিকাংশের অস্তিত্বই জনগণের নামে অথচ জনগণবিরোধী অপকৌশলের ওপর দাঁড়িয়ে? যারা নিজের দলীয় পৃষ্ঠপোষকতাকে রাষ্ট্রের চেয়ে বড় করে দেখে? না, তারা পারবে না। কারণ তারা নিজেরাও সেনা-আধিপত্য, আমলাতন্ত্র আর বিদেশি অনুগ্রহের কাছে আত্মসমর্পণ করে নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধা হাসিল করতে চায়। যারা রাজপথে রক্ত দেয় না, তাদের হাতে ‘নাগরিক চুক্তি’ স্বাক্ষরের নৈতিকতা নেই।

সেনাবাহিনী দেবে? তারা তো পেশাগতভাবে প্রশিক্ষিত, কিন্তু নৈতিকভাবে শূন্য। যদি সেনা কর্মকর্তা রাস্তায় পড়ে থাকা টোকাইদের জীবনের চেয়ে নিজের ব্যারাকের নিরাপত্তাকে বড় করে দেখে, তাহলে সেই সেনাবাহিনীর অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তোলা সময়ের দাবি।

রাষ্ট্রের মালিক কারা—জনগণ, সেনা, নাকি ধনিক চক্র? টোকাই জাতির বিচারের সময় এসেছে

বাংলাদেশের সংবিধান বলে, “এই প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ।” কিন্তু বাস্তবতা বলে ভিন্ন কিছু। যদি জনগণই রাষ্ট্রের মালিক হতো, তাহলে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের কণ্ঠস্বর আজ এভাবে নিষ্পেষিত হতো না। যদি এই দেশের আসল মালিক হতো কৃষক, মজুর, গার্মেন্ট শ্রমিক কিংবা রাস্তার টোকাই—তাহলে একতরফাভাবে জাতির উপর চেপে বসা সরকার কিংবা বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী আমলা-জেনারেল-পুঁজিপতিদের এমন রক্তচোষা শাসন চালানো সম্ভব হতো না।

আসলে বাংলাদেশ এখন আর কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়, বরং এটি একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন কর্পোরেট কোম্পানি, যেখানে রাজনীতি মানে ঠিকাদারি, প্রতিরক্ষা মানে সীমান্ত বাণিজ্য আর আমলাতন্ত্র মানে বিদেশি পরামর্শে জনগণকে কাবু করার কৌশল। এই কোম্পানির মালিকানা রয়েছে কিছু পরিবারের হাতে, যাদের নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী, যাদের বিলাসিতার জন্য বাজেট, যাদের অপকর্ম ঢাকার জন্য আদালত ও মিডিয়া প্রস্তুত। আর এই ‘নতুন কোম্পানি রাষ্ট্রে’ সবচেয়ে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে জনগণ—বিশেষ করে যাদের রক্ত ঘামে এই রাষ্ট্রের উৎপাদনশীলতা তৈরি হয়েছে।

এখন প্রশ্ন: যদি জনগণ রাস্তায় নামে, নির্বাচন চায়, অধিকার চায়—তাদের পিঠে গুলি চলে কেন? কেন সেনাবাহিনী তখন চুপ থাকে? কেন মিডিয়া তখন বলে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’? এই প্রশ্নগুলো কোনো কবিতা বা চেতনার কথা নয়—এগুলো রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় স্বরূপ উন্মোচনের প্রশ্ন।

জুলাই ২০২৪-এর গণজাগরণ তার সর্বোচ্চ সত্য দিয়ে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে—সেখানে প্রতিরক্ষা বাহিনী নিষ্ক্রিয়, পুলিশ প্রশাসন দুর্নীতিপরায়ণ আর টোকাইদের হাতেই দেশ বাঁচে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রপ্রতিরক্ষা ও রাষ্ট্রনির্মাণ—দুটোরই আসল মালিক এখন ‘অবৈধভাবে’ পথের মানুষ হয়ে উঠেছে।

এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে জনগণ এখন জবাব চায়:
•    যারা বেতন নেয় দেশের প্রতিরক্ষার নামে, তারা কোথায় ছিলেন?
•    যারা কথায় কথায় ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র কথা বলেন, তারা কার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন—দেশের, না ক্ষমতাবানদের?
•    যারা বারবার নির্বাচন ছিনিয়ে নিয়েছে, তারা কী সত্যিই রাষ্ট্রকে ভালোবেসে ক্ষমতায় ছিল, নাকি এটা ছিল লুটপাটের লাইসেন্স?

এত বছরের রাষ্ট্রচক্র আর শোষণ যন্ত্রপাতির বিপরীতে যে টোকাই শ্রেণি রাজপথে দাঁড়িয়েছে, তার নৈতিক শক্তি কত বিশাল, তা বুঝতে হলে দেখতে হবে—তারা কোনো পদ, পদবী, ক্ষমতা বা বৈদেশিক অনুদানের জন্য রাজপথে নামেনি। তারা নেমেছে কেবল নিজের ভবিষ্যতের জন্য, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। এই শক্তি যদি আজ অবধি গণ্য না হয়, তাহলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

সেনাবাহিনী, আমলাতন্ত্র এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব—এই ত্রয়ী যদি এই সংকটেও জবাব না দেয়, তাহলে সেই নীরবতা নিজেই রাষ্ট্রদ্রোহের প্রমাণ হয়ে থাকবে।

এই রাষ্ট্রের নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’—কিন্তু এখন এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘লুটপ্রজাতন্ত্রী কোম্পানি’। আর এই লুটের সাম্রাজ্যে যারা রক্ত দিয়ে দেয়, তারাই এখন ন্যায়বিচার চায়। এই চাওয়া কোনো আবেগ নয়, এটি ইতিহাসের দাবি।

টোকাই জনগণের রাষ্ট্র ফেরতের ঘোষণা—একটি নতুন রাষ্ট্রচেতনার রূপরেখা

যে রাষ্ট্রে শ্রমজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী, পথবাসী, ফুটপাতের ফেরিওয়ালা, ভ্যানচালক, ক্ষুধার্ত মা কিংবা বস্তির শিশু রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে একটুও ভূমিকা রাখতে পারে না, সেই রাষ্ট্র কোনোভাবেই গণপ্রজাতন্ত্রী হতে পারে না। এ এক নিছক প্রতারণা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণায় বলা হয়েছিল, “এই রাষ্ট্র হবে গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়ের ভিত্তিতে।” কিন্তু কী নির্মম ট্র্যাজেডি—আজ থেকে ৫৪ বছর পরও সেই রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় গালাগালি হলো ‘টোকাই’—মানে রাষ্ট্রহীন নাগরিক!

তাদের না আছে নাগরিক মর্যাদা, না আছে আইনি সুরক্ষা, না আছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা ভোটাধিকার। অথচ তারা শুধু বাঁচে না, দেশকেও বাঁচিয়ে রাখে। জুলাই অভ্যুত্থানে রাষ্ট্র যখন হোঁচট খাচ্ছিল, জেনারেলরা যখন মৌন, আমলারা যখন বিভ্রান্ত আর বড় রাজনৈতিক দলগুলো যখন চেয়ারে কে বসবে সেই হিসেব কষছিল—তখন এই ‘টোকাই’ জনগণই রাস্তায় নামল, রক্ষাকবচহীন, খাবার ছাড়া, আশ্রয়হীন, কিন্তু সাহসে ভরপুর। তারা না থাকলে এই রাষ্ট্র হয়তো আজও চোরের হাতেই পড়ে থাকত।

তাই এখন আর সময় নেই ‘দায়’ এড়িয়ে যাওয়ার। এবার সময় এসেছে রাষ্ট্রকাঠামো পুনর্গঠনের। পরিস্কার করে বলি—এটি কেবল ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন নয়। এটি রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার অনিবার্য ইতিহাস-প্রসূত প্রয়োজন।

একটি চারস্তর বিশিষ্ট ন্যায্য রাষ্ট্রকাঠামোর দাবি:

১. রাষ্ট্রক্ষমতার উৎস হবে সরাসরি জনগণ—মৌখিকভাবে নয়, কার্যকরভাবে। যার মানে, স্থানীয় সরকার থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত গণপর্যবেক্ষণ ও জনগণের প্রত্যাহার অধিকারে সাজানো প্রশাসনিক কাঠামো গড়া। আজ যারা ভোট দেয়, তারা পাঁচ বছর পরও তার প্রভাব ফেলতে পারে না—এটা গণতন্ত্র হতে পারে না।

২. দুই মেয়াদের প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি চালু করা—যাতে এককেন্দ্রিকতা আর দলীয় ভাড়াটে ব্যবস্থার অবসান ঘটে। জনগণ যাতে সরকারপ্রধানকে সরাসরি নির্বাচনে ঠিক করতে পারে, এবং আবার প্রত্যাহার করতেও পারে, সেই অধিকার তাকে দিতে হবে। শেখ হাসিনা অথবা কোনো দলের হাতে অনির্দিষ্টকালের ক্ষমতা থাকা দেশের জন্য আত্মঘাতী।
৩. বিচার বিভাগ ও সেনাবাহিনীকে সাংবিধানিক জবাবদিহিতার আওতায় আনা—আমরা আর কোনো ‘অদৃশ্য শক্তি’র চোখ রাঙানিতে দেশ চালাতে চাই না। জনগণের অর্থে বেতন নেওয়া প্রতিরক্ষা বাহিনীকে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, লুটপাটকারীদের নিরাপত্তা নয়। বিচারপতি ও জেনারেলরা যদি জনগণের মুখোমুখি হন না, তাহলে তারা জনগণের নয়, ফ্যাসিবাদের হাতিয়ার।
৪. টোকাই জনগণের সমগ্রিক নাগরিকত্ব ঘোষণা—রাস্তার শিশু, বস্তির মা, ময়লা কুড়ানো কিশোরী, গার্মেন্টে কর্মরত কিশোরী—এই রাষ্ট্র তাদের নয় বলেই প্রতিদিন তাদের জীবন এমন বিপন্ন। এদের জন্য স্বতন্ত্র নাগরিক সুরক্ষা কমিশন, বিনা ব্যয়ে শিক্ষা ও চিকিৎসা, এবং রাজনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে নির্ধারিত সংরক্ষিত আসন চাই। শুধু ‘দয়া’র নামে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ নয়—রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এই জনগণের স্থান নিশ্চিত করতে হবে।

রাষ্ট্রের প্রশ্নে নতুন সংলাপ চাই—পুরাতন মুখ, পুরাতন দল নয়

বাংলাদেশের রাজনীতি এখন পুরাতনদের হাতে জিম্মি—তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে এই লুটের কাঠামোর লাভভোগী। তারা যদি এই কাঠামো বদলাতে পারত, এত বছরেও পারত। তারা পারে না, কারণ তারা চায় না। কাজেই নতুন রাষ্ট্রচেতনা গড়তে হলে নতুন নেতৃত্ব চাই—যে নেতৃত্ব দলগত নয়, শ্রেণিগত; যে নেতৃত্ব ধানমণ্ডি থেকে নয়, পথঘাট থেকে উঠে এসেছে।

এবার নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে দরকার—
•    লজ্জাহীন সত্য বলার মত সাংবাদিকতা
•    বয়ানের আড়ালে না লুকিয়ে সরাসরি বাস্তব প্রশ্ন তোলার মতন বুদ্ধিজীবী
•    এক্সেলশিট নয়, হৃদয়ে রাষ্ট্রচিন্তা করার মত অর্থনীতিবিদ
•    ‘শত্রু নয় প্রতিবেশী’ ভিত্তিক স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি
•    এবং সবশেষে, এক অভূতপূর্ব জনআন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা একটি ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র।

শেষ কথাঃ এই রাষ্ট্র ‘টোকাই’দের ফিরিয়ে দেবে কি না, সেটাই এখন ইতিহাসের পরীক্ষা

আমরা যাদের টোকাই বলি, তাদের কাছে আজ ইতিহাসের পাসওয়ার্ড রয়েছে। তারা যদি আর একবার উঠে দাঁড়ায়—এইবার শুধু রাজপথে নয়, কাঠামোর ভিতরেও প্রবেশ করে—তবে এই রাষ্ট্র কেবল বদলাবে না, নতুন রাষ্ট্র হবে।

এই লেখায় আমি সেই তীব্র সত্যটি তুলে ধরলাম। এখন আপনারা বলুন—এই জনতার ঘাম আর রক্তের দাম কী হবে?
দরকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। শুধুমাত্র প্রশাসন নয়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবশ্যই জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে, তাদের দাসত্ব ত্যাগ করে নাগরিকদের সেবা দিতে হবে। আর রাজনীতির ময়দান থেকে সকল প্রকার দুর্নীতি, স্বার্থপরতা ও দলীয় ষড়যন্ত্র মুছে ফেলা ছাড়া এই কাজ অসম্ভব।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত ইতিহাস, সংগ্রামের স্মৃতি এবং গণতন্ত্রের অটুট ভিত্তি ফিরিয়ে আনা ছাড়া ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য দেশকে নিরাপদ করা সম্ভব নয়। এ পথে সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে—চাই সেটি রাজনীতিবিদ হোক, প্রশাসক হোক, সেনাবাহিনী হোক বা সাধারণ মানুষই হোক।

এখন আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত—সৎ ও দৃঢ় নেতৃত্বের তলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা, সকলের অধিকার রক্ষা নিশ্চিত করা, প্রশাসনের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা, এবং স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সুশাসন স্থাপন করা।

যখন এসব আদর্শের ভিত্তি দৃঢ় হবে, তখন টোকাই জনগণের সংগ্রাম সত্যিকার অর্থে সফল হবে, সেই সংগ্রাম দেশের ভবিষ্যতকে আলোকিত করবে, আর দীর্ঘদিন অবহেলিত এই দেশের নাগরিকরা তাদের অধিকার ফিরে পাবে।

লেখক, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

কয়লার কোন অংশ পরিষ্কার করবেন আর ডায়মন্ডের কোন অংশে বাদ দিবেন?

Published

on

এনসিসি ব্যাংক

বাংলাদেশে গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ হিসেবে অভিহিত করা হলেও, আজ তা যেন একরকম দৃশ্যমান বিভ্রান্তির কারখানায় রূপ নিয়েছে। পাঠকের চোখ যখন জিজ্ঞাসু হয়— ‘সত্য ঠিক কোথায়?’—তখন বোঝা যায় যে এই স্তম্ভটি নিজেকে জিইয়ে রাখার নামে নিজের ভিতরেই ফাটল ধরাচ্ছে। সংবাদপত্রের চকচকে প্রিন্ট কিংবা স্টুডিওর আলোয় ঝলমলে টকশোগুলোর আড়ালে যে অদৃশ্য নাটাই রয়েছে, তা চালায় এক সুপরিকল্পিত ক্ষমতার চক্র। রাজনীতি, বাজার আর তথ্যানিয়ন্ত্রণে পারদর্শী অভিজাত শ্রেণি—এই ত্রিমুখী ছায়া একত্রে পড়েছে রিপোর্টিংয়ের ভাষায়, সংবাদ বাছাইয়ের নিয়মে, আর সম্পাদকীয় নীতির অভ্যন্তরে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই অবস্থায় ‘কয়লার কোন অংশ পরিষ্কার করবেন আর ডায়মন্ডের কোন অংশে বাদ দিবেন?’—এই বাক্যটি শুধুই রূপক নয়, বরং আমাদের সামনে দাঁড় করায় এক গভীর নৈতিক প্রশ্ন। তথ্য যদি আর জনগণের অধিকার না থাকে, বরং ‘ব্যবস্থার মালিকানা’ হয়ে ওঠে, তবে হীরার আলোও হয়ে যায় ক্ষমতার ঝলকানি, আর কয়লার ভিতর চাপা পড়ে যায় সেই ঘষে ওঠা সম্ভাব্য সত্য—যার উদ্ভাস ছিল একসময় সংবাদমাধ্যমের বিবেক।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সমীক্ষা আজ দেখাচ্ছে, বাংলাদেশের জনগণ ক্রমাগত আস্থা হারাচ্ছে সংবাদমাধ্যমের ওপর থেকে। Reuters Institute-এর ২০২৪ সালের ডিজিটাল নিউজ রিপোর্ট অনুযায়ী, মাত্র ৩২ শতাংশ পাঠক বিশ্বাস করেন যে সংবাদমাধ্যম সত্য তুলে ধরে, যেখানে ৬৪ শতাংশ মনে করেন তারা প্রায়শই বিভ্রান্তিকর বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্যের মুখোমুখি হন—বিশেষত টিভি টকশো ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে। এই আস্থাহীনতা একদিকে সেন্সেশনালিজমের জোয়ার, আরেকদিকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বিলুপ্তি—এই দুইয়ের যুগপৎ চাপে তৈরি হয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সংবাদ পরিবেশনের নামে এখন অধিকাংশ মাধ্যম যেন ‘বুম-জার্নালিজম’ নামক চমক-নির্ভর খেলায় মত্ত। রিপোর্টার আর জবাবদিহির মুখোমুখি নয়, বরং কনটেন্ট ক্রিয়েটর আর মনোযোগ-কাড়ার প্রতিযোগী হয়ে উঠেছে। যে সাংবাদিকতা এক সময়ের শোষিত মানুষের কণ্ঠ ছিল, তা আজ যেন একটি করপোরেট ব্র্যান্ডিং প্ল্যাটফর্ম, যার মূল গ্রাহক পলিটিক্যাল কর্পোরেশন।

রাষ্ট্রীয় আইন ও বিধিনিষেধের জালে এই চতুর্থ স্তম্ভটিকে বন্দি করা হয়েছে—একটি নিঃশব্দ, নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতার আড়ালে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (২০১৮), ব্রডকাস্ট বিল, কিংবা সাম্প্রতিক সাইবার নিরাপত্তা আইন—এই সব কিছু যেন সাংবাদিকতার গলায় বেঁধে দেওয়া একেকটি অদৃশ্য শিকল। ২০২৩ সালে মাত্র এক বছরে ১২১ জন সাংবাদিককে রাষ্ট্রবিরোধী কিংবা তথ্যপ্রযুক্তি আইনে অভিযুক্ত করা হয়েছে—এই তথ্য দিয়েছে ‘আর্টিকেল ১৯’। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন পরিসংখ্যান নয়, বরং এক বিস্তৃত নিঃশব্দীকরণের প্রতিচ্ছবি।

আজ সংবাদ কক্ষের নীতিগত সিদ্ধান্ত আর কেবল সাংবাদিকের বিবেক বা পেশাদারিত্ব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। বরং তা নির্ধারিত হয় রাজনৈতিক যোগাযোগ, কর্পোরেট মালিকানার স্বার্থ আর বিজ্ঞাপনদাতার মুখরক্ষার প্রয়োজনীয়তা দ্বারা। বড় দৈনিকগুলোর অনেক সম্পাদকই স্বীকার করেন, যে কোনো সংবেদনশীল রিপোর্ট প্রকাশের আগে ‘উপরে জানানো’ বাধ্যতামূলক এক আনুষ্ঠানিকতা হয়ে উঠেছে।

এই বাস্তবতায় সত্য ক্রমশ রূপ নিচ্ছে এক নির্মিত দৃশ্যপটের—যেখানে চকচকে প্রতিবেদনে আছে নির্ঝঞ্ঝাট নির্বাচন, নিখুঁত উন্নয়ন, ইউনিয়ন পর্যায়ের ভোটারদের উৎসাহ; অথচ গায়েবি মামলা, বিরোধী দলের গ্রেপ্তার, কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্লিপ্ততা তলিয়ে যায় একটি শিল্পিত ক্যামেরা ফ্রেমের বাইরে। প্রশ্ন থেকে যায়—এটি কি বাস্তবতার প্রতিবিম্ব, না কি একটি মনস্তাত্ত্বিক ইন্দ্রজাল?

তবুও অন্ধকারে কিছু আলো জ্বলে। মূলধারার বাইরে কিছু সাহসী কণ্ঠ রয়েছে যারা—নির্ভীকভাবে রিপোর্ট করছে গুম, নির্যাতন, অর্থ পাচার কিংবা ভূমিদস্যুতার মতো ইস্যুতে।

এই মুহূর্তে শুধু সাংবাদিক না, পাঠকেরও দায়িত্ব রয়েছে। তথ্য যাচাই করা, উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনা, ফ্যাক্টচেকিং-এর কৌশল আয়ত্ত করা—এগুলো এখন নাগরিক দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। কারণ গণতন্ত্রের ভিত্তি যদি হয় প্রশ্ন করার অধিকার, তবে সেই প্রশ্নের উৎস হতে হবে সচেতন ও দ্বিধাহীন বিবেকে।

আজ আমাদের দাঁড়াতে হবে প্রশ্নের মুখোমুখি— ‘কয়লার কোন অংশ পরিষ্কার করবেন?’—অর্থাৎ কোন কাঠামোর অভ্যন্তরে চাপা পড়া সত্যটিকে পুনরুদ্ধার করবেন? আর ‘ডায়মন্ডের কোন অংশে বাদ দিবেন?’—অর্থাৎ কোন রাজনৈতিক নান্দনিকতা ও মিডিয়া-নির্মিত ঝলকানিকে উন্মোচন করবেন, যেখানে সত্য নেই, আছে কেবল প্রচারণার শূন্যতা?

বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা আজ আর নীতির চর্চার জায়গা নয়। এটি হয়ে উঠেছে এক নাট্যধর্মী সংঘর্ষের মঞ্চ—যেখানে ক্ষমতা ও প্রতিপক্ষ একে অপরকে ঠেলছে ধ্বংসের দিকে, আর মাঝখানে থেমে গেছে জনগণের নিঃশ্বাস। ঢাকার রাজপথে যখন আন্দোলনের নামে তালাবদ্ধ হয় নগর ভবন, তখন গরিব মানুষের পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়, ময়লার পাহাড়ে ঢেকে যায় শহর, আর নিরব বাতিতে অন্ধকার হয়ে পড়ে গলির মাথা।

সম্প্রতি ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভবন তালাবদ্ধ করার ঘটনাটি যেন এই নাট্যকলার সর্বশেষ দৃশ্য। একদিকে প্রতীকী প্রতিবাদ, অন্যদিকে জনসেবা ৩০–৪০ শতাংশ কমে যাওয়ার মতো বাস্তব ক্ষতি। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার খোলা ক্ষোভ—একটা প্রত্যাশাহীন রাষ্ট্রের হতাশ কণ্ঠ। আন্দোলনের নাটক ঢাকা দিচ্ছে লন্ডনের ঐতিহাসিক বৈঠকের বার্তা, যেখানে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের ঐকমত্য ছিল এক সম্ভাবনার ইঙ্গিত—আজ তা ঢেকে গেছে ঢাকার নাট্যগুরুত্বে।

এই রাজনীতিতে ক্ষমতাসীনদের অপব্যবস্থা যেমন ভয়াবহ, তেমনি বিরোধীদের আত্মঘাতী সিদ্ধান্তও কম দায়ী নয়। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে গণতন্ত্র ফেরানোর দাবি, কিংবা স্থানীয় সরকারে থেকে প্রতীকী আন্দোলনের নামে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ানো—এসব পদক্ষেপ রাজনৈতিক পরিপক্বতা নয়, বরং আত্মপ্রতারণার এক নতুন ভাষ্য।

গণমাধ্যম, যার কাজ এসব অসংগতি তুলে ধরা, সে নিজেই আজ অনেক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক প্রপাগান্ডার বাহক। একদিকে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র সরকারপ্রেমের মহড়ায়, অন্যদিকে কিছু অনলাইন পোর্টাল ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নের নেপথ্যচালক।

সেই সূত্রেই আবার ফিরে আসি—‘কয়লার কোন অংশ পরিষ্কার করবেন?’—এ প্রশ্নটি কেবল সংবাদপত্রের নয়, বরং গোটা রাজনৈতিক কাঠামোর বিবেকের প্রশ্ন।

আর ‘ডায়মন্ডের কোন অংশ বাদ দিবেন?’—এটি কেবল শ্লোগান ও প্রচারণার নয়, বরং সেই জনগণের নিঃশব্দ কান্নার প্রতিধ্বনি, যাদের নামেই চলে রাজনীতি, কিন্তু যাদের জীবনই থেকে যায় অন্ধকারে।

যে দেশে নেতৃত্বের চাইতে নাটক, সত্যের চাইতে প্রচারণা, আর সংগঠনের চাইতে কৌশল বেশি মূল্য পায়—সেই দেশে গণতন্ত্র কেবল হীরার মতো চকচকে ভ্রান্তি হয়ে থাকে। আর সংবাদমাধ্যম হয়ে পড়ে শুধুই এক নকল আয়না—যার মুখে সত্য নেই, আছে কেবল প্রতিচ্ছবির অপসংস্কৃতি।

তাই, ফিরে আসি সেই প্রশ্নে—‘কয়লার কোন অংশ পরিষ্কার করবেন?’ এটা শুধু মিডিয়ার প্রশ্ন নয়, রাজনৈতিক কাঠামোরও প্রশ্ন। আর ‘ডায়মন্ডের কোন অংশ বাদ দিবেন?’—এটি শুধুই শ্লোগানের বাহারে মিশে যাওয়া জনগণের বেদনার অন্তঃস্বর।

কিন্তু কথা তো এখানে থামে না। আমরা সারাক্ষণ ‘জনগণ’ বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলি, কিন্তু একবার থেমে, চোখ বন্ধ করে কি জিজ্ঞেস করি— ‘এই জনগণ আসলে কী চায়?’

আরো গভীরে গিয়ে, আমি কি নিজেকে কখনও জিজ্ঞেস করেছি— ‘আমি কী চাই?’ আমি কি চাই সত্য? নাকি এক চমকপ্রদ গল্প, যেখানে জবাবদিহির বদলে থাকে অভিনয়? আমি কি চাই পরিবর্তন, না চাই এক ধরনের জৌলুসপূর্ণ স্থবিরতা?

একটি রাষ্ট্রে যদি নেতৃত্বের চেয়ে কৌশল বেশি গুরুত্ব পায়, যদি সত্যের চেয়ে প্রচারণা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়, যদি সাংগঠনিক দৃঢ়তার বদলে নাটক চলে— তবে সেখানে গণতন্ত্র থাকে না, থাকে কেবল এক ভয়ানক দৃশ্যপট— যার মাঝে আমরা সবাই হাঁটছি, হয়তো ভাবছি— ‘সম্ভবত আমরা ঠিক আছি।’ কিন্তু… আসলে কি?

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

ভালোবাসার বদলে যাওয়া রূপ: একটি ট্রেক, একটি হৃদয়, আর এই সময়ের প্রেম

Published

on

এনসিসি ব্যাংক

‘তুমি নেই—তবু আছো।’ এই বাক্যটি কেবল একটি স্মৃতির নয়, এটি একটি সময়ের প্রতিচ্ছবি। একাকীত্বে জন্ম নেওয়া প্রেম, স্মার্টফোনে গড়ে ওঠা সম্পর্ক, আর মেঘের ভিতর দিয়ে হাঁটা কোনো এক গভীর টান—সব মিলেই যেন আমাদের বর্তমান ভালোবাসার মানচিত্র।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আজকের দিনে প্রেম কি আর চিঠিতে লেখা থাকে? এক সময়কার অপেক্ষা, হেঁটে দেখা করতে যাওয়া কিংবা গোপনে চোখাচোখি—এসব যেন রূপকথার গল্প হয়ে গেছে। এখন প্রেম জন্ম নেয় ইনবক্সে, টিকে থাকে রিয়েকশনে, এবং শেষ হয় ‘সিন’ হয়ে থাকার মধ্য দিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেছিলেন, ‘ক্লাসে দেখা হয় কম, কিন্তু ইনবক্সে কথা হয় বেশি। ভালোবাসা এখন একধরনের নীরব চ্যাট হিস্টোরি।’

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এটা কি খারাপ? একদিক থেকে না। প্রেম যেমন সময়ের সন্তান, তেমনি মানুষের মনের দরজা খোলারও নতুন উপায়। তবে সম্পর্ক হয়ে উঠছে কিছুটা দ্রুতগামী, অস্থায়ী এবং অনিশ্চিত।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই সময়ে প্রেম অনেকটাই যেন একটি পাবলিক ইভেন্ট।
ফেসবুকে ‘রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস’ না বদলালে সম্পর্কটাই সন্দেহের মুখে পড়ে। একসঙ্গে ছবি না দিলে প্রশ্ন উঠে— ‘তোমরা কি এখনো একসাথে?’ আর ইনবক্সে মেসেজ ‘দেখা গেছে’ কিন্তু উত্তর নেই—তখন জন্ম নেয় এক অদৃশ্য দূরত্ব।

ভালোবাসা এখন যেন অনুভবের জায়গা থেকে সরে এসে পরিণত হয়েছে এক ধরনের সামাজিক অভিনয়ে। কে কার সঙ্গে, কোথায় ঘুরতে গেল, কে কাকে কী উপহার দিল—এসবের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে কে কিভাবে ‘শো’ করছে তার ভালোবাসা।

সোশ্যাল মিডিয়ার এই বাহ্যিক চাপ যেন প্রেমকে ভেতর থেকে নয়, বরং বাইরে থেকে প্রমাণ করার একটা বাধ্যবাধকতা তৈরি করেছে। প্রেমের গভীরতা নয়, এখন যেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে—প্রেমটা কে কতটা ‘দেখাতে’ পারছে

সময়ের এক বড় পরিবর্তন এসেছে নারীর অবস্থান নিয়ে। প্রেম এখন আর ‘ছেলেটাই সিদ্ধান্ত নেবে’ এমন নয়। একজন তরুণী কর্পোরেট কর্মী বলেছিলেন, ‘ভালোবাসি, তবে নিজের ভবিষ্যৎ আগে দেখি। আমি আর নিজের জীবন কারও আবেগে সমর্পণ করতে চাই না।’ এমন আত্মবিশ্বাসী অবস্থান প্রশংসার দাবি রাখে, তবে পুরুষদের অনেকে এখনো পুরোনো কাঠামোয় আটকে আছে। ফলে সম্পর্কের সমতা এবং বোঝাপড়ায় নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিচ্ছে।

বর্তমানে প্রেম অনেকটাই ‘কমফোর্ট জোন’-নির্ভর হয়ে উঠেছে। মানসিক চাপ, অস্থিরতা বা দ্বন্দ্ব এলেই ভেঙে যায় সম্পর্ক। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শামসুল হক বলেন, ‘মানুষ এখন সম্পর্ক চায়, কিন্তু আত্মত্যাগ চায় না। যেখানে সামান্য অসুবিধা এলেই সরে যায়, সেখানে প্রেমের গভীরতা দুর্লভ।’ তবুও এমন মানুষ আছে যারা প্রেমকে লড়াইয়ের মতো করে ধরে রাখে। যারা অপেক্ষা করে, যারা বোঝে—ভালোবাসা মানে শুধু ভালো লাগা নয়, বরং জীবনকে ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তুতি।

আমার এক প্রিয় বান্ধবী, যার জীবনদর্শন আর প্রকৃতিপ্রেম আমাকে বহুবার নাড়া দিয়েছে, একবার নিজের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার সঙ্গে শেয়ার করেছিল। জীবনের এক সন্ধিক্ষণে, যখন সে প্রেমের মানে খুঁজছিল নিজের ভেতরেই, তখন সে একা বেরিয়ে পড়েছিল নেপালের পথে—অন্নপূর্ণা পর্বতমালার দিকে। তার সেই ভ্রমণের গল্প—তার চোখে দেখা প্রকৃতি, তার হৃদয়ে গাঁথা অনুভূতি—আমার মধ্যে এমন এক প্রভাব ফেলেছিল, যা এক সময় কলমে ধরা দেওয়ার দাবি রাখে। সেই অভিজ্ঞতাকেই আমি তুলে ধরছি এই লেখায়—আমার নয়, তার আত্মসন্ধানী যাত্রার গল্প; তবে এই গল্পের শব্দ ও ছায়া আমি নিজের মতো করে বুনেছি।

পৃথিবীর দক্ষিণ এশীয় উচ্চভূমিতে, হিমালয়ের কোলঘেঁষা এক ভূখণ্ডে সে যাত্রা করেছিল। পোখরা, মানাং, আর থোরাং লা পাস—এই তিনটি নাম হয়তো অনেকের কাছে নিছক ভ্রমণগন্তব্য, কিন্তু তার কাছে ছিল আত্মার রূপান্তরযাত্রার তিনটি অধ্যায়। তার বর্ণনায় প্রকৃতি কেবল দৃশ্য নয়, এক শিক্ষক; আর পথচলা শুধুই পদচারণা নয়—এক ধ্যানমগ্ন আত্মসমীক্ষা।

শুরু হয়েছিল পোখরা থেকে। শান্ত ফেওয়া লেকের ধারে বসে সে যেন আবিষ্কার করেছিল—প্রকৃতির নিঃশব্দতা অনেক সময় প্রেমের ভাষা হয়ে ওঠে। সেখান থেকেই শুরু এক অজানা টানের দিকে, এক অন্তর্জাগতিক অভিযাত্রা।

উচ্চতাজনিত অসুস্থতা, হিমশীতল বাতাস, আর শরীরের ক্লান্তি—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল যেন এক গভীর একাকীত্বের মধ্যে সে হাঁটছে। তবুও, ছোট্ট একটি তিব্বতীয় মন্দিরে বসে তার মনে হয়েছিল: “যাকে ভালোবাসি, সে হয়তো দূরে—তবুও তার উপস্থিতি আমার নিঃশ্বাসে মিশে আছে। ঠিক এই বাতাসের মতো।”

১৭,৭৬৯ ফুট উচ্চতায় পৌঁছানো—যেখানে শরীর বারবার থেমে যেতে চায়, কিন্তু মন বলে—“আরো এক ধাপ।” তার ভাষায়, এটা ছিল ঠিক প্রেমের মতো—যেখানে সব কষ্ট পেরিয়ে, এক মুহূর্ত আসে আত্মিক তৃপ্তির; চোখে জল, ঠোঁটে হাসি, আর এক নির্ভার অনুভব: ‘সে পাশে নেই, তবুও যেন অনুভব করি—সে আমার মধ্যে রয়েছে, আমার পথচলায়।’

ভালোবাসা কি হারিয়ে গেছে? না। ভালোবাসা এখনো আছে—ফেসবুক পোস্টে, হোয়াটসঅ্যাপের অপেক্ষায়, কিংবা পাহাড়ের চূড়ায় নিঃশ্বাস নিতে নিতে। শুধু আমরা বুঝতে পারছি না তার নতুন রূপ। আমরা এখনো বলি, ‘তুমি আমার মনে সারাক্ষণ।’ কিন্তু সেটা হয়তো বলা হয় না সরাসরি—লিখে রাখি কোথাও, চুপচাপ মনে রাখি, অথবা গোপনে এক পাহাড়ি ট্রেকের পথে তাকে স্মরণ করি।

‘তুমি নেই—তবু আছো। কোনো ছবিতে নয়, কোনো শব্দে নয়, এমনকি কোনো চিঠির পাতায়ও না। তুমি আছো আমার নিঃশ্বাসে, আমার সকাল আর রাতের মাঝখানে…’

এই প্রেমের অনুভব একা কারো নয়, এটা আমাদের সময়ের অভ্যন্তরীণ গল্প। এক সময়, এক মানুষ, এক ভালোবাসা—আর এক জীবনের রূপান্তর।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

নেতৃত্বের নামে প্রতারণা আর নয়, আলো চাই সত্যের হাতে

Published

on

এনসিসি ব্যাংক

যখন একটি জাতি ক্লান্ত, প্রতারিত ও দিশেহারা—ঠিক তখনই কিছু দৃশ্য ইতিহাসে লেখা হয়, যেগুলোর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হয়ত তখনকার মানুষই বুঝতে পারে না। লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে এক হাস্যোজ্জ্বল করমর্দন, একদিকে ‘বহুল প্রতীক্ষিত’ বলে কেউ যাকে অভিহিত করেছে, অন্যদিকে একে কেউ বলছে ‘সাজানো নাটকের সূচনাঙ্ক’। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তারেক রহমানের মধ্যকার এই বৈঠক কী এক যুগান্তকারী মেলবন্ধন, না কি এটি ছিল কেবল একটি অবসরের আলাপ, যার ভেতর জমে আছে গভীর অবিশ্বাস, হিসাব, আর কৌশলের রাজনীতি— এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো এখনও অধরা, নিশ্চিত সফলতা ভাবাও এখনই বোকামি। তবে বলা যায়—দীর্ঘ টানেলের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এক ফোঁটা আলো চোখে পড়ছে। কিছু একটা ঘটতে চলেছে, এমন আশা অমূলক নয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

দেশের রাজনীতিতে এই বৈঠক যেন বহুবছরের জমে থাকা উত্তেজনার উপর এক মুহূর্তের বরফজল। বিএনপি, যার নেতৃত্ব দীর্ঘ ষোল বছর ধরে আন্দোলন করেও শেখ হাসিনার প্রশাসনকে হটাতে ব্যর্থ হয়েছে, তার ভেতরে যে অসন্তোষ ও আশঙ্কা গেড়ে বসেছিল, সেটির মূল উৎসই ছিল ড. ইউনূসের উপর একপ্রকার দ্বিধাগ্রস্ত দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ, এই প্রাজ্ঞ অথচ বিতর্কিত অর্থনীতিবিদ এখন কেবল আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব নন, তিনি এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান। এবং এই প্রধানকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়েছে সেই ছাত্রবিপ্লব, যে বিপ্লবের সঙ্গে বিএনপি নিজে নেই—আছে জামায়াত, আছে ইসলামী দলগুলো, আর আছে একটি নতুন অদৃশ্য রাজনৈতিক বলয়, যা ‘পশ্চিমমুখী আস্থা’ এবং অভ্যন্তরীণ শক্তির সমঝোতার মধ্যে ভারসাম্য খোঁজে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই দ্বিধার জায়গাটিতেই জন্ম নেয় রাজনৈতিক সংকট। বিএনপি দেখে, তাদের জীবনের সর্বোচ্চ লড়াইটি ফলপ্রসূ হয়নি, বরং ছাত্রদের নেতৃত্বে পাল্টে যাচ্ছে খেলার মাঠ। তারচেয়েও বড় কথা, মাঠের রেফারি নেই—আছে এমন এক অদৃশ্য খেলা, যেখানে নিজেকে রেফারি ভাবা মানুষটিও সুযোগ পেলে গোল দিয়ে দেয়। ড. ইউনূস যখন বলেন এপ্রিলে নির্বাচন চান, তখন বিএনপি মনে করে তিনি ক্ষমতা দীর্ঘায়ু করতে চান। কিন্তু আবার, ক্ষমতার জন্য ড. ইউনূসের যেমন বিএনপিকে দরকার, তেমনি বিএনপিরও তাঁকে ছাড়া চলে না। এই পরস্পর-নির্ভরতাই শেষ পর্যন্ত তাঁদের এক মঞ্চে আনে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তবু প্রশ্ন থেকে যায়—এপ্রিলেই কি নির্বাচন হবে? নাকি বিচার ও সংস্কারের নামে প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘ হবে? বৈঠকে এই বিষয়ে কোনো স্বচ্ছ উত্তর দেওয়া হয়নি। মুখে বলা হয়েছে আশ্বস্ত করা হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক ব্যাকরণে ‘আশ্বাস’ শব্দটির ওজন ঠিক কতখানি, তা বাংলাদেশে বসবাসকারী যে-কোনো নাগরিক জানেন।

রাজনীতিতে দ্বিধা, চাতুর্য, এবং চুপচাপ ছুরি চালানো—এসব তো পুরনো খেলা। নতুন যা, তা হল সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তি। যেখানে ইউটিউবাররা জনমত গঠন করে, আর রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সমালোচনা এড়াতে না পেরে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে চায়। বিএনপির ক্ষেত্রে এই পরিপ্রেক্ষিত আরও ভয়াবহ, কারণ একদা জনপ্রিয়তা থাকলেও ‘চাঁদাবাজি ও দখলবাজি’র ছায়ায় পড়ে জনগণ থেকে তারা অনেক দূরে চলে গেছে। সুতরাং দলটিকে বাঁচাতে হলে ভেতরের কয়েকটি নেতার মুখ বন্ধ করতে হবে, কিছু নেতাকে টকশো থেকে সরাতে হবে, আর জনগণের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়তে হবে। তির্যক বিদ্রুপ নয়, বরং ইতিবাচক রাজনৈতিক ভাষা এখন সময়ের দাবি।

অন্যদিকে ড. ইউনূস, যিনি একদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের মহানায়ক, আর অন্যদিকে অদৃশ্য রাজনৈতিক কাঠামোর বর্তমান মুখ—তাঁর জন্যও হিসাব সহজ নয়। কারণ তিনি একা নন, তিনি একটি বড়ো বলয়ের প্রতিনিধি। তাঁর ওপরে আস্থা যেমন আছে, তেমনি আছে গভীর সন্দেহ। কাজেই এই ধরনের বৈঠকে একটি করমর্দনের চিত্র যতই উষ্ণ হোক, তার ভেতরে জমে থাকা স্নায়ুচাপ ও সন্দেহের ইতিহাস মুছে যায় না।

তবে একটি বিষয় সবাই মানবেন: এই সব অনিশ্চয়তার মধ্যে একমাত্র স্থিতির নাম বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ সময় ধরে নীরব এই নেত্রী যেন এখন এক জাতীয় অভিভাবকের মতো, যিনি ঘরের জানালা খোলা রেখে প্রতিটি পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করছেন। এই লন্ডন বৈঠক যদি কোনো ইতিবাচক আশার প্রতীক হয়, তাহলে বলা যায়—এটি তাঁরই প্রজ্ঞার ফসল।

তবে আশা আর বিশ্বাসের মধ্যেকার রেখা খুব সূক্ষ্ম। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হল—সতর্কতা, শুদ্ধিকরণ এবং সব পক্ষের মধ্যে ন্যূনতম পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। সোশ্যাল মিডিয়া, চৌকস ছাত্রনেতা, পুরনো রাজনৈতিক খেলোয়াড়, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ আজ এক নতুন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এখানে একদলকে নিঃশেষ করে অন্যদল টিকে থাকতে পারবে না। সবাইকে নিয়ে যদি না এগোনো যায়, তাহলে যা আসবে তা হতে পারে শুধুই বিভ্রান্তি, আরেকটা পতনের গল্প।

বাংলাদেশের রাজনীতির অধিকাংশ চালক আজও সেই পুরনো, দুর্নীতিগ্রস্ত, ব্যক্তি-কেন্দ্রিক, হিংসাশ্রয়ী চেতনার উত্তরাধিকার বহন করেন। এদের হাতে দেশের প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব নয়। কারণ, এরা জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করে না, বরং জনগণকে ব্যবহার করে। এদের ভাষণে দেশপ্রেম আছে, কিন্তু চরিত্রে নেই। উন্নয়ন বললেই উড়ালসেতু বোঝে, মানুষ বোঝে না। পরিকল্পনা বললেই চোখ থাকে লুটপাটে, ভবিষ্যৎ গড়ায় না। এই দলীয় অন্ধকারে বসে কেউ যদি টানেলের শেষে আলো দেখে, সে আলো তখনি সত্যি হবে যখন জনগণও পথ দেখতে শিখবে।

এখন দরকার এমন এক চিন্তা-দিশা, যেখানে নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দু হবে সততা ও দক্ষতা। যেখানে উন্নয়ন মানে হবে—প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য উৎপাদন, স্বনির্ভর শিল্প কারখানার বিস্তার, শিক্ষায় প্রযুক্তির বাস্তব ব্যবহার এবং নতুন প্রজন্মের নৈতিক ও কর্মচঞ্চল চরিত্র গঠন। এই চারটি স্তম্ভ ছাড়া বাংলাদেশ একটি ‘নতুন দেশ’ হিসেবে জন্ম নিতে পারবে না।

সুতরাং, টানেলের সেই আলো কেউ বাইরে থেকে এনে ধরিয়ে দেবে না। সেই আলো আমাদের নিজেদের জ্বালাতে হবে—সততার আগুনে, মেধার শিখায়, এবং মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের জ্যোতিতে।

এটাই হতে পারে সেই “নতুন পথের ঠিকানা”, যার দিকে তাকিয়ে এখনো কোটি মানুষ শ্বাস ধরে বসে আছে। যারা সত্যিকারের মুক্তি চায়, তাদেরকে আর অন্ধকারের আয়নাঘরে বদ্ধকরে রাখা সম্ভব নয়।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

এনসিসি ব্যাংক এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার10 minutes ago

এনসিসি ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এনসিসি ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ...

এনসিসি ব্যাংক এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার23 minutes ago

চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নাম সংশোধনে সম্মতি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের প্রস্তাবিত নাম সংশোধনে সম্মতি দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য...

এনসিসি ব্যাংক এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার32 minutes ago

ফার্স্ট ফাইন্যান্সের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির পর্ষদ সভা আগামী ২৯ জুন, বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত...

এনসিসি ব্যাংক এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার37 minutes ago

মেঘনা লাইফের পর্ষদ সভার তারিখ নির্ধারণ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির পর্ষদ সভা আগামী ৩০ জুন, বিকাল...

এনসিসি ব্যাংক এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার1 hour ago

জিএসপি ফাইন্যান্সের সর্বোচ্চ দরপতন

সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৪০১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯২টির দর কমেছে। আজ সবচেয়ে...

এনসিসি ব্যাংক এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার2 hours ago

দর বৃদ্ধির শীর্ষে ইন্দো-বাংলা ফার্মা

সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৪০১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৩৬টির শেয়ারদর বেড়েছে। এর...

এনসিসি ব্যাংক এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার2 hours ago

লেনদেনের শীর্ষে লাভেলো আইসক্রিম

সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসি। ডিএসই সূত্রে এই...

Advertisement
AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
এনসিসি ব্যাংক
কর্পোরেট সংবাদ2 minutes ago

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ ১০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার10 minutes ago

এনসিসি ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন

এনসিসি ব্যাংক
আইন-আদালত15 minutes ago

বিদেশে এস আলমের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজের নির্দেশ

এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার23 minutes ago

চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নাম সংশোধনে সম্মতি

এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার32 minutes ago

ফার্স্ট ফাইন্যান্সের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা

এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার37 minutes ago

মেঘনা লাইফের পর্ষদ সভার তারিখ নির্ধারণ

এনসিসি ব্যাংক
আন্তর্জাতিক37 minutes ago

তেহরানে জোরালো হামলার নির্দেশ, পাল্টা হুঙ্কার ইরানের

এনসিসি ব্যাংক
শিল্প-বাণিজ্য48 minutes ago

গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড পেলো পিএইচপি শীপ ব্রেকিং এন্ড রিসাইকেলিং ইন্ডাস্ট্রিজ

এনসিসি ব্যাংক
জাতীয়52 minutes ago

মব ঠেকাতে ব্যর্থ হলে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার

এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার1 hour ago

জিএসপি ফাইন্যান্সের সর্বোচ্চ দরপতন

এনসিসি ব্যাংক
কর্পোরেট সংবাদ2 minutes ago

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ ১০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার10 minutes ago

এনসিসি ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন

এনসিসি ব্যাংক
আইন-আদালত15 minutes ago

বিদেশে এস আলমের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজের নির্দেশ

এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার23 minutes ago

চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নাম সংশোধনে সম্মতি

এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার32 minutes ago

ফার্স্ট ফাইন্যান্সের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা

এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার37 minutes ago

মেঘনা লাইফের পর্ষদ সভার তারিখ নির্ধারণ

এনসিসি ব্যাংক
আন্তর্জাতিক37 minutes ago

তেহরানে জোরালো হামলার নির্দেশ, পাল্টা হুঙ্কার ইরানের

এনসিসি ব্যাংক
শিল্প-বাণিজ্য48 minutes ago

গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড পেলো পিএইচপি শীপ ব্রেকিং এন্ড রিসাইকেলিং ইন্ডাস্ট্রিজ

এনসিসি ব্যাংক
জাতীয়52 minutes ago

মব ঠেকাতে ব্যর্থ হলে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার

এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার1 hour ago

জিএসপি ফাইন্যান্সের সর্বোচ্চ দরপতন

এনসিসি ব্যাংক
কর্পোরেট সংবাদ2 minutes ago

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ ১০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার10 minutes ago

এনসিসি ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন

এনসিসি ব্যাংক
আইন-আদালত15 minutes ago

বিদেশে এস আলমের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজের নির্দেশ

এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার23 minutes ago

চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নাম সংশোধনে সম্মতি

এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার32 minutes ago

ফার্স্ট ফাইন্যান্সের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা

এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার37 minutes ago

মেঘনা লাইফের পর্ষদ সভার তারিখ নির্ধারণ

এনসিসি ব্যাংক
আন্তর্জাতিক37 minutes ago

তেহরানে জোরালো হামলার নির্দেশ, পাল্টা হুঙ্কার ইরানের

এনসিসি ব্যাংক
শিল্প-বাণিজ্য48 minutes ago

গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড পেলো পিএইচপি শীপ ব্রেকিং এন্ড রিসাইকেলিং ইন্ডাস্ট্রিজ

এনসিসি ব্যাংক
জাতীয়52 minutes ago

মব ঠেকাতে ব্যর্থ হলে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার

এনসিসি ব্যাংক
পুঁজিবাজার1 hour ago

জিএসপি ফাইন্যান্সের সর্বোচ্চ দরপতন