ক্যাটাগরি: জাতীয়

বিপুল বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি নিয়ে দেশে ফিরলেন ড. ইউনূস

চার দিনের ঐতিহাসিক চীন সফর শেষে দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, শনিবার (২৯ মার্চ) রাত ৮টা ১০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

চীনে চার দিনের আনুষ্ঠানিক সফর শেষে গতকাল বিকাল ৪টা ৫৭ মিনিটে দেশের উদ্দেশে বেইজিং ত্যাগ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী মন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের চিফ প্রোটোকল অফিসার হং লেই বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টাকে বিদায় জানান।

চীন থেকে পেয়েছেন বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ঋণ-অনুদান প্রাপ্তি, চিকিৎসা সহযোগিতা, যোগাযোগব্যবস্থা ও অবকাঠামো উন্নয়ন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, বাণিজ্যে ভারসাম্য আনাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস। সফরকালীন চীন সরকার ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক সফরে চীন সরকারের পক্ষ থেকে উষ্ণ আতিথেয়তা পেয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সকালে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়। সেখানে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, বিশ্বকে বদলে দিতে বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখতে হবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু শেখার জায়গা নয়, এটি স্বপ্ন দেখারও জায়গা। আপনি যদি স্বপ্ন দেখেন, তবে তা ঘটবেই। আপনি যদি স্বপ্ন না দেখেন, তবে তা কখনো ঘটবে না। এখন পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে, কেউ না কেউ আগে তা কল্পনা করেছিল। অসম্ভব মনে হলেও শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে অদ্ভুত এবং অকল্পনীয় বিষয়ে স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করেন ড. ইউনূস। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক অধ্যাপক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নিজের ঘর মনে করেন বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। গত ২৬ মার্চ চীনে পৌঁছান ড. ইউনূস।

২৭ মার্চ চীনের হাইনান প্রদেশে আয়োজিত বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলনের ফাঁকে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন। ২৮ মার্চ বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। চীনা প্রেসিডেন্ট ড. ইউনূসের সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের জন্য চীনা বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করবেন বলে জানিয়েছেন। ড. ইউনূস টেকসই অবকাঠামো ও জ্বালানি বিনিয়োগ, বাংলাদেশ ২.০ উৎপাদন ও বাজার সুযোগ এবং সামাজিক ব্যবসা, যুব উদ্যোক্তা এবং তিন শূন্যের বিশ্ব- এসব বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তিনটি বৈঠকেও যোগ দেন। দেশটির শতাধিক শীর্ষ উদ্যোক্তা ও সিইওদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেন।

ইউনূসের এ সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে একটি চুক্তি ও আটটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ চীন সরকার ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। জলবিদ্যুৎ, বন্যা মোকাবিলা ও দুর্যোগ হ্রাস, নদী খনন এবং পানিসম্পদ উন্নয়নের মতো বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারে ‘একমত হয়েছে’ দুই দেশ। চীন সফর প্রসঙ্গে চীনের সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, চীনকে ভালো বন্ধু হিসেবে দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ ও চীনের বিগত ৫০ বছরের সম্পর্ক চমৎকার ছিল, আগামী ৫০ বছর আরও সুদৃঢ় হবে। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করবে। তিনি বলেন, চীন যা অর্জন করেছে তাতে বাংলাদেশের সবাই অনুপ্রাণিত। অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ হলো একটি নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠন করা এবং জনগণ আশা করে, তারা নিজ দেশের উন্নয়নে চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারবে। চীন টানা ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১ হাজার চীনা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এতে সাড়ে ৫ লাখের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। আরও চীনা বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আসবেন এবং স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে একত্রে একটি বৃহত্তর বাজার উন্মুক্ত করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এদিকে বাংলাদেশিদের জন্য চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তিতে নতুন দ্বার উন্মুক্ত হতে চলেছে চীনে।

চীন ইতোমধ্যে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার জন্য কুনমিংয়ের চারটি হাসপাতাল নির্ধারণ করেছে। চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাজমুল ইসলাম জানান, ‘কুনমিংয়ের হাসপাতালগুলোর নির্দিষ্ট ফ্লোর শুধু বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। চিকিৎসা খরচও তুলনামূলক কম।’ তবে চীন ভ্রমণের ক্ষেত্রে উচ্চ বিমান ভাড়াকে একটি বড় বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ সংকট কাটাতে চট্টগ্রাম থেকে কুনমিং রুটে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করেছে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, গতকাল এয়ারলাইনসের কর্মকর্তারা চীন সফররত বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম ও কুনমিংয়ের মধ্যে পরিকল্পিত ফ্লাইট পরিচালিত হলে ভ্রমণ খরচ ও সময় উভয়ই কমে আসবে। এছাড়া কুনমিং ভ্রমণ সহজ করতে ঢাকা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ঢাকা-কুনমিং ফ্লাইটের বিমান ভাড়াও কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে আরও বেশি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার