বেইজিং ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে বৈশ্বিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। একই সঙ্গে তিনি অংশীদারত্ব জোরদার, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং নতুন প্রতিশ্রুতি গ্রহণের মাধ্যমে নারী ও কন্যাশিশুদের পিছিয়ে না রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) নিউইয়র্কে কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অব উইমেনের (সিএসডব্লিউ৬৯) ৬৯তম অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপনকালে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচারের সংগ্রামে নারীরা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানেও অগ্রভাগে ছিলেন নারীরা, যা মোট বিপ্লবীদের ৬৫ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনতে দায়িত্ব গ্রহণ করে, যা বাংলাদেশের লিঙ্গভিত্তিক কাঠামোকে আমূল পরিবর্তন করে।
শারমীন এস মুরশিদ জানান, বেইজিং ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থেকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে একটি রূপান্তরকামী সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রথমবারের মতো ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হয়েছে, যা নারী ক্ষমতায়নের জন্য সহিংসতা দূরীকরণকে মূল শর্ত হিসেবে বিবেচনা করছে।
এছাড়া, সহিংসতার শিকার নারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সহায়তা দিতে ‘দ্রুত প্রতিক্রিয়া দল’ (কুইক রেস্পন্স টিম) চালু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উপদেষ্টা জাতিসংঘের নারী অধিকার সনদের (সিইডিএ ডব্লিউও) ১৩(ক), ১৬.১(চ), এবং ১৬.১(ফ) অনুচ্ছেদ থেকে বাংলাদেশের সংরক্ষণ (রিজার্ভেশন) প্রত্যাহারের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
সিএসডব্লিউ৬৯ অধিবেশনের অংশ হিসেবে উপদেষ্টা ‘নারী ও কন্যাশিশুদের ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গসমতার জন্য জাতীয় কাঠামো: বেইজিং কর্মপরিকল্পনা পুনরায় প্রতিশ্রুতি, অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন ত্বরান্বিতকরণ’ শীর্ষক মন্ত্রী পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও উত্তম চর্চাগুলো তুলে ধরেন।
তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বেইজিং কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সাফল্য তুলে ধরেন।
সিএসডব্লিউয়ের ফাঁকে উপদেষ্টা মুরশিদ চীন, সুইডেন, মেক্সিকো ও ফিনল্যান্ডের মন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন এবং নারী উন্নয়ন, লিঙ্গ সমতা, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং বাংলাদেশে ‘কেয়ার ইকোনমি’ (সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে যত্ন খাত) বিকাশের বিষয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বাংলাদেশ, নেপাল ও ফিনল্যান্ডের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘যত্ন খাতে বিনিয়োগ: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও লিঙ্গ সমতার পথ’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের সাইড ইভেন্টে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখবেন।
এই ইভেন্টে নেপালের মন্ত্রীরা, বাংলাদেশ, নেপাল ও ফিনল্যান্ডের উচ্চপদস্থ সরকারি প্রতিনিধি, জাতিসংঘের ইউএন উইম্যান, আইএলও, এডিবি, বিশ্বব্যাংক, সুশীল সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি অংশ নেবেন। তিনি তুরস্ক ও তিউনিসিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ গত ১০ মার্চ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অব উইমেনের ৬৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে এবং লিঙ্গ সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক সেবায় বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিতে অংশীদারত্ব সম্পর্কিত বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হতে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসিতে সরকারি সফরে রয়েছেন।