জুলাই-আগস্ট (২০২৪) ছাত্রজনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কাজেই এই সরকার অপরাপর গতানুগতিক রাজনৈতিক দলের গঠিত সরকারগুলোর মতো নয়। তারা দলীয় সরকার নয় বলে তাদের সামনে দলীয় মতাদর্শভিত্তিক কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডাও নেই। তাদের সামনে রয়েছে জাতীয় আকাঙ্ক্ষা, যা আন্দোলনের রাজপথ থেকে উত্থিত ও গৃহীত। যে কারনে প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রচার মাধ্যমের বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে, জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে সংস্কার ও নির্বাচন’ র্শীষক বিভিন্ন সংলাপ। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ছাত্র-জনতা আমাদেরকে দেশের নতুন দিক নিয়ে আলোচনা করার ব্যাপক সুযোগ করে দিয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান রাস্ট্র কাঠামো পূর্ণ গঠনকরার জন্য এক বিরল সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে,আশা করা যায় এর মাধ্যমে ধ্বংসের দারপ্রান্তে পৌছা রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘ সময়ের ফেসিবাদী দুঃশাসন থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সহনশীলতার পথে এগিয়ে যাবে। এই সুযোগ বার বার আসবে না। বিগত ৫৪ বছরে কারণে অকারণে বিভেদবান ক্ষমতাসীনরা জাতিকে সে সুযোগ দেয়নি। জুলাই-অগাস্ট যে কারণে গণবিপ্লব এর রূপ নিয়েছিল, আমাদেরকে সেই বিপ্লবের সার্থকতাকে ধরে রাখতে হলে বিভেদ-বিভাজন না করে,জাতীয় স্বার্থে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা যদি রাস্ট্র কাঠামো পূর্ণ গঠন করতে না পারি আমাদের স্বাধীনতা অরক্ষিত হয়ে যাবে। আমাদের অবচেতনে পরাধীনতার গ্লানীতে ভুগতে হবে। জাতি হিসেবে আমরা মর্যাদাহীন হয়ে পড়ব।
জুলাই গন অভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য নতুন অধ্যায়। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরশাসক ব্যবস্থার থেকে প্রায় হাতছাড়া হতে যাওয়া সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনা আমাদের এযাবৎ কালের শ্রেষ্ঠ অর্জন। যা আজীবন ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বুক ভরা আশা-স্বপ্ন নিয়ে ৭১-এ লক্ষ শহীদের রক্তদান ও মা বোনের পবিত্র ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা একটি নতুন দেশের অস্তিত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আজ সেই স্বপ্নময় স্বাধীনতা রূপান্তরিত হয়েছে গ্লানী ও হতাশায়। সম্মান, জাতীয়তাবোধ, মর্যাদাবোধ, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ এসব কিছুই আজ বিধ্বস্ত। আমাদের বিবেক আজ লুপ্তপ্রায়। সুবিধাবাদ এবং অযোগ্যতার মহড়ায় গোটা জাতি আজ নীরব নিশ্চল অসহায় ও জিম্মি। তাই, ২৪ এসেছে স্বৈরশাসক এর বিরুদ্ধে মানুষের বাক স্বাধীনতা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এক গৌরবময় বিজয় নিয়ে ।
অনেক দেশের ক্ষেত্রে, বিপ্লব বা বড় রাজনৈতিক উত্থান (যেমন ১৮৩০ সালে ফ্রান্সে জুলাই বিপ্লব) প্রায়ই সংস্কার এবং আলোচনার সময়কালকে উদ্বুদ্ধ করে। এই পরিস্থিতিতে, যে সঙ্কট বা অভ্যুত্থানের একটি মুহূর্ত রাজনৈতিক শক্তিগুলিকে একত্রিত হওয়ার, অর্থপূর্ণ সংলাপে জড়িত হওয়ার, এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলি নিশ্চিত করে এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংস্কারের মঞ্চ তৈরি করতে পারে।
গত দুই দশক ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নির্বাচন ব্যবস্থায় অপ্রতুলতা তথা অবিচ্ছিন্ন সংস্কারের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। যারফলে রাস্ট্র ক্ষমতায় যারাই থাকেন তারাই স্বৈরাচারী হয়ে উঠেন। তাঁরা দেশের জনগণ, সংবিধান, আইনের রীতিনীতি অগ্রাহ্য করে জোর করে ক্ষমতা গ্রহণ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে তাঁদের অধীনস্থ করে রাখেন। মিথ্যাকে সত্যে রুপান্তরিত করার অপচেষ্ট চালিয়ে যান। বিগত ষোল বৎসর ঘটনা বহুল অনেক ইস্যু থাকার পরও রাজনৈতিক দলগুলি বা সুশীল সমাজ তেমন কিছু করতে পারে নাই। ২০২৪-এর বিপ্লবে যে পরিবর্তন এর প্রেক্ষাপট তৈরী হয়েছে তা কাজে লাগাতে হবে। এসুযোগ বারবার আসবে না ।
নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সংস্কার বিহীন নির্বাচন এই দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না। দেশের শাসন ব্যবস্থায় এবং নির্বাচনে সংস্কার বিষয়ে পুরো জাতি আজ ঐকমত্য। জাতীয় ঐক্য এবং নির্বাচনী সংস্কার একে অপরের সাথে দৃঢ় সম্পর্কিত দুটি বিষয়। নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে যাতে জনগণের ভোটাধিকারের প্রতি বিশ্বাস এবং অংশগ্রহণ বাড়ানো যায় এবং এর মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট গণতান্ত্রিক ভাবে সুসংগঠিত হয়। ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন একটিকে ছাড়া অপরটি সফল হবে না। ঐক্যবিহীন সংস্কার কিংবা সংস্কারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না। সংস্কার প্রয়োজন কারন বিগত সময়ে দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি, এর অন্যতম প্রধান কারন প্রায় সকল রাজনৈতিক দলগুলিতেই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চালু না থাকা।
বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা আপাত দৃষ্টিতে একটি স্বাধীন ব্যবস্থাপনা। যদিও নির্বাহী বিভাগের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছে বারবার । অতীতে নির্বাচনী সহিংসতা এবং ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার কারণে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের স্বাবলম্বী ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সংস্কারের প্রয়োজন। ভোটিং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং দ্রুত ফলাফল নিশ্চিত করতে আধুনিক প্রযুক্তি র্নিভর নিবিড় পর্যবেক্ষণ দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকল রাজনৈতিক দলের সমঝোতা এবং জনগণের জন্য নিরাপদ নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি। একতরফা নির্বাচনে জনগণের বিশ্বাস বজায় থাকে না এবং যার ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয় ও স্বৈরতান্ত্রিক সরকার আবির্ভূত হয় ।
জনগণের প্রত্যাশার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে জাতিয়-আর্ন্তজাতিক ইস্যুতে ঐক্য এবং সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক যাতে জনগণের কল্যাণে একটি দীর্ঘমেয়াদি এবং সুদৃঢ় নীতি নির্ধারণ করা যায়। জাতীয় ঐক্য একমাত্র তখনই সম্ভব, যখন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের স্বার্থত্যাগ করে জনগণের কল্যাণে একত্রিত হবে।
রাজনৈতিক নেতা ও দলগুলোর মধ্যে সদিচ্ছা এবং পরস্পরের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা তৈরি হওয়া জরুরি। জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি আস্থা সৃষ্টি করতে হবে। যেকোনো রাজনৈতিক আন্দোলন বা আলোচনাইয় মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। সংস্কার এবং জাতীয় ঐক্য এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী এবং সমতাভিত্তিক হবে, এবং রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করবে। স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র, এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনা দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে আরও শক্তিশালী এবং সুদৃঢ় করবে। স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পুনরাবির্ভাব ঠেকাতে রাষ্ট্রের সংস্কার অপরিহার্য।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম যে সকল সংস্কারগুলো প্রয়োজন, সেগুলো সম্পন্ন করার সুযোগ না দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে র্নিবাচন এ বাধ্য করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠছে অনেকে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সবকিছু সংস্কার করা হয়তো সম্ভব নয়। তার জন্য প্রয়োজন সময়ের । ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৯ সালে হওয়ার কথা। অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন যদি করতেই হয়, প্রথমে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন কাঠামোর নির্বাচন হওয়া উচিত। এতে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কতটুকু হয়েছে তা বুঝা যাবে। আর তা না হলে শুধু রাতের অন্ধকারে নয় বরং দিনের আলোর নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। কী জানি অনেকে হয়তোবা তাই চাইছে। ২০২৪-এর জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের ছয় মাসের মাথায় ষোল বৎসরের জঞ্জাল ঠিক হয়ে যাবে বা ঠিক করে ফেলা হবে এমন চিন্তা আকাশ কুসুম কল্পনা বা জুলাই বিপ্লবকে প্রশ্ন বিদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। কোনোভাবেই ফ্যাসিস্টের বিচার ও অর্থবহ সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করা ঠিক হবে না! সকলেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করে রাস্ট্র কাঠামো ঠিক করার দিকে নজর দিতে হবে । প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদ সংস্কার করে শক্তিশালী করতে হবে!
জনগণ সংস্কার চায় এবং চায় এমন একটি নির্বাচনি ব্যবস্থা যেখানে তার ভোট দেবার অধিকার থাকবে এবং সেই ভোট (ক্ষমতার) নির্ধারক হবে, জবাবদিহি ব্যবস্থা থাকবে। সর্বোপরি, ক্ষমতার যেন এককেন্দ্রীকরণ না ঘটে। জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া গণতন্ত্র ও মানবিক মর্যাদা অর্জন কখনোই সম্ভব নয়। নির্বাচন রাজনীতি ব্যবসায় রূপান্তরিত যেন আর না হয় তার জন্য সজাগ থাকতে হবে।
ভাগ্য নির্মাণের সুযোগ বার বার অসে না। সুযোগ পেলেও তা নষ্ট হয়েছ অনেক বার। ২০২৪ সালে আবার আরেকটি সুযোগ এসেছে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে। তাদের গণআন্দোলন স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। যে ছাত্রসমাজ বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে, সে ছাত্রসমাজ নানা কারণে ম্রিয়মাণ হলেও যে হারিয়ে যায়নি, তা জুলাই-আগস্টের ঘটনা প্রমাণ করেছে। জাতি গঠনে তাদের পুরনো ভূমিকাকে তারা নতুন করে উজ্জীবিত ও উপস্থাপিত করেছে। বাংলাদেশের মতো রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত সমাজে অন্তত সংস্কারের বিষয়ে সকল পক্ষকেই জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দলীয় বা গোষ্ঠীগত বিবেচনার বাইরে এসে দাঁড়াতে হবে সকল পক্ষকে। সংস্কার, জাতীয় স্বার্থ ও ঐকমত্যই হবে মূল আলোচ্য বিষয়, দলীয় দ্বন্দ্ব-সংঘাত এক্ষেত্রে যেন প্রাধান্য পেতে না পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে, এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে গ্রহণ করা। তারা যেন যুক্তি ও তথ্য দিয়ে সংস্কার প্রসঙ্গে আলোচনা করে এবং শেষ পর্যন্ত একটি ঐকমত্যে পৌঁছায়। যার ভিত্তিতে তারা নিজেদের মধ্যে এমন একটি অঙ্গীকারে উপনীত হবে যে, জনগণের ভোটের বাইারে কোনো নির্বাচন মানবো না। সংস্কার ও নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যকর্ সমন্বয় সাধিত করে ভবিষ্যতের বাংলাদেশে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য ও ঐকমত্যের পথ প্রশস্ত করবে। রাজনৈতিক ঐক্য না থাকার কারনে কথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী কিছু স্বার্থন্বেসী মানুষ লোভে পড়ে ক্রমশ হিংস্র হয়ে আন্দোলন্রত শিক্ষার্থীদের উপর র্নিবিচারে গুলি চালায় । জাতিসংঘের তদন্তেও যা প্রমানীত কি ভাবে ফেসিস্ট সরকার নিজ দেশের মানুষের প্রতি অবিচার করেছে।
জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা , অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠার পথে সহায়ক হবে। নির্বাচন সংস্কার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে একতাবদ্ধতা দেশকে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড় করাতে সাহায্য করবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হবে, এতে দীর্ঘমেয়াদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। সামাজিক উন্নয়ন এবং জনকল্যাণের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারবে, যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং বেকারত্ব দূরীকরণ। বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনা ও ফেসিস্টের কুশাসন থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, সহনশীলতা ও বৈষম্যহীনতার পথে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে । জনআকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে সংস্কার ও পরিবর্তন, ভবিষ্যতের বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ পুনরায় ফিরে আসার কাল্পনিক আকাঙ্খা রোধ করবে। অতীতের যাবতীয় ভুল ও ব্যর্থতা দূর করার মহত্তর এই সুযোগ নষ্ট হলে আমাদেরকে চড়া মাশুল দিতে হবে। অতএব, আমাদের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথে এই সুযোগে আমাদেরকেই নির্মাণ করতে হবে।
আন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের নিমিত্বে যে ৬টি কমিশন গঠন করেছেন ইতিমধ্যে সবাই তাদের গঠিত সুপারিশ রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। সংস্কারের নিমিত্বে সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি সব দলের প্রতিনিধিত্বে সমন্বয় ও মতামত জরিপে বিশেষ সভা করেছেন, যেখানে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মানে সংস্কার অপরিহার্য এবং তিনি তা সকলের মতামতের ভিত্তিতে করতে চান। এই মর্মে তিনি সকল দলের নেতাদেরকে স্ব স্ব মতামত লিখিত ভাবে প্রদানের কথা স্পষ্ট করেছেন। যেখানে প্রস্তাবের যেকোন প্রসঙ্গে তাদের পূর্ণ বা আংশিক যেকোন ভাবে দ্বিমত পোষনের একতিয়ার রয়েছে । তিনি নিশ্চিত করেছেন সকল দল সংস্কার প্রস্তাবের যে কোন বিষয়ের পক্ষে বিপক্ষে তাদের মতামত দিতে পারে তবে তা অবশ্যই লিখিত ও যথার্থভাবে স্বাক্ষরিত হতে হবে কেননে তিনি তা জনসমক্ষে তুলে ধরতে চান ওয়েবসাইট এ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরে ঐকমত্যে পৌছতে পারলে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে বিশ্বদরবারে তা হতে পারে ২০২৪ এর বাংলার আর এক ম্যগনাকার্টা ।
অধ্যাপক সরওয়ার জাহান, টেকসই উন্নয়ন কর্মী।