ক্যাটাগরি: জাতীয়

বাংলাদেশকে বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে দেখবেন ট্রাম্প: ড. ইউনূস

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশকে ‘বিনিয়োগের ভালো সুযোগ’ ও বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে দেখবেন, এমনটিই প্রত্যাশা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে এমনটাই জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস। সোমবার প্রকাশিত গার্ডিয়ানের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিলে ট্রাম্পঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন। তার কাছে এ প্রস্তাবনা উত্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন ড. ইউনূস।

সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আসুন, আমাদের সঙ্গে ডিল (চুক্তি) করুন। তিনি স্বীকার করেন যে ট্রাম্পের প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তবে তিনি দৃঢ়ভাবে জানান, সম্পর্ক ‍উন্নয়নের গণতান্ত্রিক এই প্রক্রিয়া থেমে থাকবে না।

ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইউএসএআইডি তহবিল কাটছাঁট করেছে ও বাংলাদেশের ওপর বিনা প্রমাণে অভিযোগ এনেছে যে, তারা সাহায্যের অর্থ ‘চরম বামপন্থি কমিউনিস্ট’ নির্বাচনে ব্যবহার করেছে। এর ফলে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ঝুঁকির মুখে পড়েছে ও ইউনূসের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইউনূস ট্রাম্পের সঙ্গে ইলন মাস্কের জোটকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। তিনি এই বিলিয়নিয়ারকে বাংলাদেশে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এপ্রিল মাসে মাস্কের বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা রয়েছে, যা বাংলাদেশের অবকাঠামো আধুনিকীকরণের পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইউনূসের এই আহ্বান বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এসেছে। ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইউনুস শেখ হাসিনার ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের উত্তরাধিকার মোকাবিলা করছেন। হাসিনার শাসনামলে ব্যাপক দুর্নীতি, দমন-পীড়ন ও ভঙ্গুর অর্থনীতি বাংলাদেশকে বিপর্যস্ত করে রেখেছিল। হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যে বিদ্রোহ হয়েছিল, তাতে ১,৪০০-রও বেশি ছাত্র-জনতা নিহত হন। এর ফলে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে এবং সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা ভেঙে পড়ে।

ইউনূসের সামনে বাড়তে থাকা অভ্যন্তরীণ চাপগুলো হলো-
নিরাপত্তা শূন্যতা: হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতা হারানোর পর পুলিশ বাহিনী তাদের দায়িত্বে ফিরে যেতে একপ্রকার অনিচ্ছুক, যার ফলে কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ও সংখ্যালঘুদের ওপর হয়রানি বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই শোনা যাচ্ছে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো ঘটনা।

ইসলামপন্থিদের পুনরুত্থান: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নড়বড়ে অবস্থার সুযোগ উগ্রপন্থি ইসলামিস্টদের উত্থান শুরু হয়েছে। হাসিনার আমলে নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরীরের মতো গোষ্ঠীগুলোও প্রকাশে কর্মসূচি পালন করার সাহস দেখিয়েছে।

অর্থনৈতিক বিপর্যয়: হাসিনার শাসনামলে ব্যাংকগুলো লুটপাটের শিকার হয়েছে, যার ফলে সেগুলো দেউলিয়াত্বের মুখে পড়েছে। হাসিনার মিত্রদের দ্বারা ১৭ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করা হয়েছে, যার মধ্যে যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকও রয়েছেন। পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা পিছিয়ে পড়ায় জনগণের অসন্তোষ বাড়ছে।

আবার বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সম্প্রতি ‘অরাজকতা’ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন, যা ইউনূসের শাসন নিয়ে সামরিক বাহিনীর অস্বস্তির ইঙ্গিত দেয়। একই সময়ে বিএনপির মতো বিরোধী দলগুলো অবিলম্বে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করছে।

এই সব বাধা সত্ত্বেও এই নোবেলজীয় অর্থনীতিবিদ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে অবাধ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন ও বাংলাদেশকে হাসিনার ‘ডাকাত পরিবার’ থেকে সার্বভৌমত্ব ফিরে পাওয়ার লড়াই হিসেবে দেখছেন। তবে ট্রাম্পের উদাসীনতা ও অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতার কারণে ইউনূসের গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন বহিঃশত্রু ও অভ্যন্তরীণ হুমকির জটিল পথ পাড়ি দেওয়ার ওপর নির্ভর করছে।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের অনীহা ও অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণে ইউনূসের গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ কি নতুন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে, নাকি পুরনো সংকটগুলো আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে- তা সময়ই বলে দেবে।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার