দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হলেও স্বাধীন হতে পারেনি পুঁজিবাজারের স্টেকহোল্ডাররা। বিগত কমিশনের ন্যায় বর্তমান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনেরও সামনে ভূয়সী প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জসহ (ডিএসই) অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা। যারা আড়ালে বর্তমান কমিশনের যোগ্যতার ঘাটতিসহ বিভিন্ন সমালোচনায় মূখর থাকেন। রবিবার (৯ মার্চ) আরেক দফায় তেমনটি ঘটেছে।
এদিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এক প্রকার বর্তমান কমিশনকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। অথচ আড়ালে ডিএসইর সব শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরাসহ অন্যসব স্টেকহোল্ডাররা এই কমিশনের যোগ্যতা নেই বলে সমালোচনা করে।
বৈঠকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ), শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজ, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ও সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিন বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মমিনুল ইসলাম বিএসইসির চেয়ারম্যান-কমিশনারদের চলমান কার্যক্রমকে প্রশংসা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সমালোচনা করেছেন।
ডিএসইর এমন আচরনেই হয়তো এক সাংবাদিক ডিএসইর চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, আপনাদের (স্টেকহোল্ডারদের) কমিশন বিদায় নেওয়ার পর মূল্যায়ন থাকে একরকম, আর ক্ষমতায় থাকাকালীন তাদের নিয়ে মূল্যায়ন থাকে আরেক রকম।
এদিন ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের যে তদন্ত কার্যক্রম চলছে, এই কাজের সঙ্গে আমরা সম্পূর্ণ একাত্মতা প্রকাশ করছি। সংকট পরিস্থিতিতে কিভাবে বাজারের আস্থা ধরে রাখা যায় এবং অতি দ্রুত সংকট কাটিয়ে ওঠা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীরা যেভাবে বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে দাবি দাওয়া আদায়ের প্রচেষ্টা করেছিল, সেটি কোনভাবেই কাম্য নয়, আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিগত বছরগুলোতে যে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে তার বিশদ তদন্ত ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলমান যে বিচার কার্যক্রম এর সাথে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করছি। আমরা মনে করি বিএসইসিতে অনেকে আছেন, যারা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন। আমরা মাননীয় চেয়ারম্যান ও কমিশনার বৃন্দের কাছে অনুরোধ করেছি এই সৎ এবং নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা যাতে এই মুহূর্তে আতঙ্কিত না হয় তারা যেন তাদের দৈনন্দিন কাজটি সুস্থভাবে করতে পারে সেটার বিষয় তারা যেন পদক্ষেপ নেন। উনারা আশ্বস্ত করেছেন ওই কাজটি অলরেডি শুরু হয়েছে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, আমরা তাদের বলেছি, আপনারা শক্ত হাতে হাল ধরেন। এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ করা যাবেনা। আমরা সবাই সম্মিলিত ভাবে এটা মোকাবিলা করবো বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, আমরা বাজারের সাথে আছি, ছিলাম এবং থাকবো। এই বাজার আমাদের। বাজারে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি বিচারিক বিষয়, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তবে আমরা অনুরোধ করেছি কারো প্রতি যেন অবিচার না করা হয়। আমরা দাবি জানিয়েছি নির্দোষ কাউকে যেন সাজা দেওয়া না হয়। একই সঙ্গে কর্মকর্তা কর্মচারীরা যোগদান করেছেন এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। তারা যেন কাজটা চালু রাখেন এবং কমিশন ধীরে ধীরে সকল ভয় ভীতি কাটিয়ে সকল কর্মকর্তা- কর্মচারীরা এক সঙ্গে কাজ করেন সেই অনুরোধ আমরা তাদের কাছে জানিয়েছি।