হজযাত্রা সহজ, সুন্দর ও নিরাপদ করতে ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ চালু করে হজযাত্রীদের সার্বক্ষণিক সেবার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, পবিত্র হজ পালন সহজ করার জন্য মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে একটা সুযোগ দিয়েছেন। এই সুযোগ যেন আমরা সর্বোচ্চ কাজে লাগাই। একজন হজযাত্রীও যেন কোনো ধরনের ভোগান্তির শিকার না হন সে প্রচেষ্টা থাকতে হবে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় এ নির্দেশ দেন তিনি।
দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হজ এজেন্সির সংখ্যা এক হাজার ২৭৫টি। এর মধ্যে হজ কার্যক্রমের জন্য যোগ্য এজেন্সি ৯৪১টি, হজযাত্রী নিবন্ধনকারী এজেন্সি ৭৫৩টি এবং লিড এজেন্সি ৭০টি। এসব এজেন্সির দায়িত্ব কী হবে সেটা সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করে বুকলেট আকারে ও অনলাইনে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, সরকারের দায়িত্ব হলো এজেন্সিগুলোর দায়িত্ব পালন যেন সঠিকভাবে হয় তা নিশ্চিত করা, দায়িত্ব পালন না করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। পুরো হজ প্রক্রিয়া হতে হবে সহজ ও স্পষ্ট। সরকারের দায়িত্ব কী, এজেন্সির দায়িত্ব কী- এসব সুস্পষ্টভাবে লিখিত থাকতে হবে।
ড. ইউনূস বলেন, কেউ হারিয়ে গেলে, অসুস্থ হয়ে পড়লে, লাগেজ হারিয়ে গেলে বা অন্য কোনো ধরনের সমস্যায় করণীয় কী, কাকে জানাবে এটার সুস্পষ্ট গাইডলাইন থাকতে হবে। হজযাত্রীদের প্রত্যেকের কাছে এই বুকলেট দিতে হবে। নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ কী নেওয়া হবে সেটাও উল্লেখ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, দেশেই একটি হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার স্থাপন করতে হবে, যাতে করে বাংলাদেশ বসেই সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করা যায়। কল সেন্টারে যেসব অভিযোগ আসবে, সেগুলো এখান থেকে যেন সঙ্গে সঙ্গে মনিটরিং করা যায়। একটি ওয়েবসাইট করে দিতে হবে যেখান হজযাত্রীরা সবাই যুক্ত থাকবেন। তারা তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। কেউ হারিয়ে গেলে সেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তার লোকেশন খুঁজে পাওয়া যাবে।
ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করার জন্য কল সেন্টারে কী ধরনের অভিযোগ আসছে সেগুলো মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, কী ধরনের অভিযোগ আসছে সেগুলো লিপিবদ্ধ করে ফেলতে হবে। এর মধ্যে কতগুলো সুরাহা হলো, কতগুলো হলো না সে তথ্য থাকতে হবে। এই অভিযোগগুলো যেন পরের বছর না আসে সেজন্য আলোচনা করে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
কোনো এজেন্সি দায়িত্ব পালন না করলে তার লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, হজযাত্রীদের অভিজ্ঞতা থেকে এজেন্সিগুলো রিভিউ করতে হবে। এজেন্সির প্রশিক্ষণ আছে কি না সেটা মনিটরিং করতে হবে। কর্মীদের প্রশিক্ষণের ভিত্তিতে এজেন্সিগুলোতে ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও ‘ডি’ ক্যাটাগরি করে ফেলতে হবে। এই ক্যাটাগরির মান পূরণে যে এজেন্সিগুলো ব্যর্থ হবে তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।
হজযাত্রীরা যেন যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের করণীয় সম্পর্কে অবগত থাকতে পারেন এবং কেউ যেন বিভ্রান্ত না হন সেজন্য বিষয়ভিত্তিক ভিডিও তৈরির নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, প্রবলেম সলভিং ভিডিও হতে হবে। অসুস্থ হয়ে পড়লে, হারিয়ে গেলে, কোরবানি দিতে গিয়ে কোনো সমস্যা হলে করণীয় কী- এমন ভিডিও যাত্রীদের দেখিয়ে দিলে তারা মনোবল পাবেন। প্রস্তুত থাকতে পারবেন।
এছাড়া, পরের বছর থেকে হজ ক্রেডিট কার্ড চালু ও লাগেজ ব্যবস্থাপনার জন্য ট্যাগ কপি করে তালিকা করে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, হজ ক্রেডিট কার্ড চালু করে দিলে হজযাত্রীদের ভোগান্তি কমে যাবে। দেশে ফেরার পর যে কার্ডে যে অর্থ থেকে যাবে সেটা নগদ ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। লাগেজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। সেজন্য চেক-ইনের পরে ট্যাগটা কপি করে রাখা যেতে পারে। ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে লাগেজ ট্যাগের তালিকা থাকবে।
এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ২০০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮১ হাজার ৯০০ জন হজের জন্য নিবন্ধন করেছেন। চলতি বছর সরকারি খরচে কাউকে হজে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সভায় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।