ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আজ রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ওমানের মাস্কাটে অনুষ্ঠাতব্য অষ্টম ভারত মহাসাগর সম্মেলনে (আইওসি) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আইওসি সম্মেলনের এক ফাঁকে এই বৈঠকটি হবে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ভারতে বসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য দেশে কিছুটা অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছে। যার ফলে ঢাকা ও দিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের দূতদের তলব-পাল্টা তলবের মুখে পড়তে হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দিল্লির প্রতিক্রিয়া ঢাকাকে ব্যতীত করেছে।
ঢাকার একাধিক কূটনৈতিক সূত্র বলছে, দুই নিকট প্রতিবেশীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ এবং অস্বস্তি দূর করার বিষয়ে গুরুত্ব দেবে উভয়পক্ষ। শেখ হাসিনাকে থামানোর পাশাপাশি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত দিতেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে পারেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
এছাড়া, তৌহিদ-জয়শঙ্করের আলোচনায় সীমান্ত প্রসঙ্গ, ভিসা চালু, তিস্তা, গঙ্গা চুক্তির নবায়নসহ দু’দেশের চলমান বিভিন্ন ইস্যু থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক অঙ্গন সংশ্লিষ্টদের অভিমত, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে ঢাকা-দিল্লির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরি হয়। বিশেষ করে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ এবং কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার ঘটনা যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো পরিবেশ তৈরি করে।
তবে গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের পর সাম্প্রতিক সময়ে দুই নিকট প্রতিবেশীর সম্পর্কে আস্থা বাড়ার মতো একটি উদ্যোগ দৃশ্যমান বা চোখে পড়েছে। গত ৫ জানুয়ারি ভারত ও বাংলাদেশ একে-অপরের দেশে আটক মোট ১৮৫ জন জেলেকে নিজ দেশে ফেরত দিয়েছে। একই সঙ্গে দুই দেশ আটক হওয়া নৌযানগুলো হস্তান্তর করেছে। দিল্লির বিদেশ সচিবের ঢাকা সফরের পর এটি ছিল দুই দেশের সম্পর্কের বড় পরিবর্তন।
সেই পরিবর্তন কিংবা তার কিছুদিন পরও কিছু কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করে ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কে বরফ গলার ইঙ্গিত মিলছিল। কিন্তু সেই বরফ গলার আগে চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝিতে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণসহ সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আবার দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। সে সময় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলবের ২৪ ঘণ্টা না যেতে ভারতও নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনার নুরাল ইসলামকে তলব করে।
সম্প্রতি শেখ হাসিনার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শেখ হাসিনার বক্তব্যের কারণে এমন ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেজন্য শেখ হাসিনাকে যেন থামানো হয় সেই বার্তা দিতে ঢাকায় ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে তার হাতে একটি প্রতিবাদপত্র তুলে দেওয়া হয়। ঢাকায় ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলবের এক দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে দিল্লি।
শুধু তাই নয়, ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পরদিন এক প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরকার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের এহেন প্রক্রিয়া ভালোভাবে নেয়নি ঢাকা। ঢাকা বলছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ বক্তব্য প্রদান ‘অপ্রত্যাশিত’ ও ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ওমান সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে দুই দিনব্যাপী ইন্ডিয়ান ওশেন কনফারেন্সের আয়োজন করেছে। সম্মেলনের তত্ত্বাবধানে রয়েছে ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন। সম্মেলনে অন্তত ২৭টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অংশগ্রহণ করার কথা।