সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া সংবাদ ও গুজব খুব দ্রুত ভাইরাল হয়। ক্ষোভের অনুভূতি তৈরি করা সংবাদ শিরোনাম মানুষের মনে দাগ কাটে। চটকদার ভাষায় লেখা মিথ্যা সংবাদ সবাই সহজেই বিশ্বাস করে, এর পর নিজ প্রফাইল থেকে দ্রুত শেয়ার দেয়। ক্লিকবেইট শিরোনাম দেখে সংবাদের সত্যতা যাচাই না করে শেয়ার করায় অবাঞ্ছিত ঘটনাও ঘটে যাচ্ছে।
যারা মানসিক অবসাদ বা অতিরিক্ত মানসিক চাপে ভুগছেন, তাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করা তুলনামূলক সহজ। তাই নিষ্পেষিত জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করেই মিথ্যা সংবাদের পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুষ্কৃতকারীরা বুস্ট করছে।
বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের তুলনায় গুজব কেন দ্রুত ছড়ায়, সে বিষয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ-ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ গবেষণা করেছেন। তাদের আবিষ্কার—গুজব ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে মানুষের রাগ, ক্ষোভ ও আক্রোশ।
শুধু তা-ই নয়, তাদের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল পোস্টের মধ্যে মিথ্যা সংবাদের পরিমাণ বস্তুনিষ্ঠ খবরের চেয়ে অন্তত আট গুণ বেশি। যে খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মনে ক্ষোভ তৈরি করে, অথবা তাদের মতাদর্শের বিপরীতে যায়, সেসব পোস্ট কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া দ্রুত শেয়ার করে অনেকে। বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারলেই মিথ্যা সংবাদ হয়ে যায় ভাইরাল।
২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়ে ফেসবুক ও এক্সে যেসব গুজব ও মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছিল, তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে গবেষণাটিতে।
নির্বাচনের সময় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ফেসবুক ও এক্স থেকে চারটি করে পোস্ট নিয়ে ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল তা নিয়ে চালানো হয় গবেষণা। সেসব পোস্ট ফেসবুকে রাগান্বিত প্রতিক্রিয়া এবং এক্সে নৈতিক ক্ষোভে ভরা হ্যাশট্যাগের ঝড় তুলেছিল। ক্ষোভ বা বিক্ষুব্ধতাকে ধ্রুবক হিসেবে ধরে তা পরিমাপে ব্যবহৃত হয়েছে ‘ডিজিটাল আউটরেজ ক্লাসিফায়ার’ নামের একটি এআই টুল। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফরমের পোস্ট বিশ্লেষণ করে ক্ষোভ বা ক্রোধের অভিব্যক্তির পরিমাণ বের করা এবং তা শ্রেণীবদ্ধ করায় কাজ করেছে এটি। ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং এবং মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমের মাধ্যমে এই টুল কাজ করে।
ডিজিটাল আউটরেজ ক্লাসিফায়ার সরাসরি ফেসবুক ও এক্স থেকে তথ্য ইনপুট নিতে সক্ষম। তথ্যগুলো বিশ্লেষণের মাধমে গবেষকদলটি প্রমাণ করেছে, মানুষের নৈতিক আক্রোশ সৃষ্টিই হচ্ছে মিথ্যা সব পোস্ট ভাইরাল করার মূলমন্ত্র। গুজবের পোস্ট শেয়ার করার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ করেন।
গুজব ও মিথ্যা তথ্য পুরো বিশ্বের নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি মানুষের সহজাত নৈতিকতা ও আক্রোশকে পুঁজি করে মিথ্যা সংবাদ ও গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লুটছে বিশেষ কিছু মহল। প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায়, দুঃখ বা খুশির উপলক্ষ তৈরি করা গুজবের চেয়ে ক্ষোভ কিংবা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি করা গুজব বেশি শেয়ার করা হয়েছে। রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রতি আনুগত্য বা কোনও বিষয় শক্ত নৈতিক অবস্থান থাকলে খবরের নির্ভুলতা যাচাই না করেই পোস্ট শেয়ার করেন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা।