প্রায় দুই বছর আগে সব ইলেকট্রনিক ডিভাইসে এক চার্জার ব্যবহারের বিষয়ে একটি অস্থায়ী চুক্তি করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশ। এবার ইইউ’র অধীনে থাকা সব দেশ ‘এক চার্জার, এক ইউনিয়ন’ শীর্ষক চুক্তিপত্রে সই করেছে। এখন থেকে মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, ডিজিটাল ক্যামেরা, হেডফোন, বহনযোগ্য ভিডিও গেম কনসোল, পোর্টেবল স্পিকার, কি-বোর্ড ও মাউসের চার্জ দেওয়ার ক্ষেত্রে ইউএসবি সি চার্জার ব্যবহার নির্মাতাদের জন্য বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি সেসব চার্জার ইউএসবি পিডি চার্জিং প্রটোকল সমর্থিত হতে হবে।
তবে বর্তমানে ল্যাপটপ, ড্রোন ও ওয়্যারলেস চার্জিং সিস্টেম থাকছে এই নিয়মের বাইরে।
তুলনামূলক দ্রুত তথ্য ও বিদ্যুৎ বহন করতে সক্ষম ইউএসবি সি পোর্ট। নষ্ট হওয়ার প্রবণতাও অপেক্ষামূলক কম। পোর্টটি সর্বজনীন ব্যবহারের জন্য বেছে নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যাতে সব ডিভাইসের জন্য এক চার্জার ব্যবহার করা যায়।
সে জন্য ইউএসবি পাওয়ার ডেলিভারি সিস্টেম সমর্থিত হতে হবে সব ডিভাইস ও চার্জার। এতে ব্যবহারকারীদের একাধিক চার্জার ও কেবল বহনের ঝামেলা কমবে এবং ই-বর্জ্য তৈরি হবে না।
ই-বর্জ্য কমানোর পাশাপাশি আলাদা চার্জার কেনার পেছনে ব্যবহারকারীদের খরচ বাঁচানোও ছিল সিদ্ধান্তটির পেছনে বড় কারণ। প্রযুক্তি নির্মাতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, ভোক্তাদের যাতে তারা ডিভাইসের চার্জিং সম্পর্কে বিস্তারিত লিখিত তথ্য প্রদান করে।
নতুন চার্জার উৎপাদন কমিয়ে বার্ষিক ৯৮০ টন ইলেকট্রনিক বর্জ্যের পরিমাণ কমানো যাবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। পাশাপাশি প্রতিবছর সাশ্রয় হবে ২৫০ মিলিয়ন ইউরো। অপ্রয়োজনীয় চার্জার উৎপাদন বন্ধ হলে কাঁচামাল, যেমন—প্লাস্টিক, ধাতু ইত্যাদির ব্যবহারও কমে আসবে। এতে কমবে পরিবেশের ওপর চাপ। চার্জার রিসাইক্লিংয়ের ওপরও বাড়তি নজর দেওয়া হবে বলে বিবৃতি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ইউএসবি সি নীতিমালার বড় প্রভাব পড়েছে স্মার্টফোন নির্মাতাদের ওপর। বেশির ভাগ অ্যানড্রয়েড স্মার্টফোন এখনই ইউএসবি সি ব্যবহার করলেও কিছু স্মার্টফোনে এখনও রয়ে গেছে মাইক্রোইউএসবি চার্জিং পোর্ট। ব্যবহৃত স্মার্টফোনের বাজারেও বেশির ভাগ ডিভাইস নয় ইউএসবি সি সংবলিত।
অনেক ডিভাইস ইউএসবি সি পোর্ট সমর্থিত হলেও ইউএসবি-পিডি চার্জিং সমর্থিত নয়। প্রচুর স্মার্টফোন শুধু নির্মাতার নিজস্ব চার্জিং সিস্টেম সমর্থন করে। ইউরোপে স্মার্টফোন রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে আছে চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুর। তারা ইউরোপের নতুন নীতিমালা কতটুকু মেনে চলবে, তা সময়েই বলবে। আগামী দিনে নীতিমালার প্রভাব পড়বে ল্যাপটপেও। বর্তমানে বেশির ভাগ ল্যাপটপেই নেই ইউএসবি সি পোর্ট চার্জিং। ল্যাপটপের ক্ষেত্রে এই নীতিমালা কার্যকর হবে ২০২৬ সালের ২৮ এপ্রিলের পর। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব দেশে এই নীতিমালা কার্যকর করা এখন সদস্য দেশগুলোর দায়িত্ব।
ইউএসবি সি নীতিমালা প্রণয়নে বিপাকে পড়েছে টেক জায়ান্ট অ্যাপল। যেহেতু তাদের বেশির ভাগ আইফোন ইউএসবি সি সমর্থিত নয়। সম্প্রতি অ্যাপল তাদের আইফোন ১৫ সিরিজে লাইটনিং পোর্ট ছেড়ে ইউএসবি সি পোর্ট ব্যবহার শুরু করেছে। কিন্তু আইফোন ১৪ সিরিজ নতুন নিয়ম অনুযায়ী ইউরোপের বাজার থেকে সরিয়ে নিতে হবে। এর মধ্যেই সুইজারল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বাজার থেকে আইফোন ১৪ মডেলটি সরিয়ে নিয়েছে তারা। অ্যাপল শুরু থেকেই নীতির বিরোধিতা করে আসছিল। তাদের মতে, এই নিয়ম নতুন উদ্ভাবনকে নিরুৎসাহিত করবে।
দক্ষিণ এশিয়ায় স্মার্টফোনের বিশাল বাজার আছে ভারতে। সে দেশের নীতিনির্ধারকরাও ২০২৬ সালের মধ্যে স্মার্টফোন ও ল্যাপটপে ইউএসবি সি পোর্টকে সর্বজনীন হিসেবে নীতিমালা প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন। ইউএসবি সি পোর্ট বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তটি ভারতের নীতিনির্ধারকদের সামনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্তের পরপরই উপস্থাপন করা হয়েছে। চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত স্মার্টফোন নির্মাতারা সময় পাবে প্রস্তুতি নেওয়ার। এরপর ২০২৬ সাল থেকে ইউএসবি সি পোর্ট বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার অথবা তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত আসেনি।