ডিম বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে। অমলেট, পোচ ও সিদ্ধ। এদের মধ্যে সিদ্ধ করাই সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। তবে ডিমকে কেউ নিখুঁতভাবে সিদ্ধ করতে পারেন না।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা ডিম সিদ্ধ করার নিখুঁত উপায় উদ্ভাবন করেছেন। অবাক করার মতো হলেও, এতে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় লাগে।
নিখুঁতভাবে ডিম সিদ্ধ করা অনেক কঠিন। সকালের নাশতায় আমরা অনেকে সিদ্ধ ডিম খেয়ে থাকি।
তবে ডিমের খোসা ছাড়ানোর পর অনেকে হতাশ হয়ে পড়েন। দেখা যায় যে ডিমের কুসুম অনেক শক্ত হয়ে যায়, কিন্তু সাদা অংশটি অর্ধসিদ্ধ থাকে।
সমস্যাটি হলো, ডিমের কুসুম ও সাদা অংশ দুটি ভিন্ন তাপমাত্রায় সিদ্ধ হয়। কুসুম মাত্র ৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সিদ্ধ হয়, তবে সাদা অংশের জন্য প্রয়োজন হয় ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সাধারণত আমরা দুটিকেই একই সঙ্গে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সিদ্ধ করে থাকি। এতে সাদা অংশ নরম ও ঠিকঠাক হয়, কিন্তু কুসুম সম্পূর্ণরূপে শক্ত হয়ে যায়। এটি কিছু মানুষের পছন্দ হতে পারে, তবে যারা নরম ও তরল কুসুম চান, তাদের জন্য এটি হতাশাজনক। অন্যদিকে, ‘সুই ভিড’ নামে একটি পদ্ধতিতে ডিমকে ৬০-৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক ঘণ্টা ধরে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। এতে কুসুম সুন্দরভাবে তরল থাকে, তবে সাদা অংশ জলীয় ও অর্ধসিদ্ধ থেকে যেতে পারে।
তবে নিখুঁত ডিম সিদ্ধ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। আরো চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, এই পদ্ধতিতে সিদ্ধ ডিম শুধু সুস্বাদুই নয়, স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভালো। নতুন পদ্ধতিতে সিদ্ধ করা ডিমে বেশি পরিমাণে পলিফেনল থাকে, যা এক ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ও স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য পরিচিত।
ইতালির ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের বিজ্ঞানী পেলেগ্রিনো মুস্তোর নেতৃত্বে গবেষকরা প্রথমে কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডাইনামিক্স (সিএফডি) ব্যবহার করে ডিম সিদ্ধ করার প্রক্রিয়ার সিমুলেশন তৈরি করেন। এটি এমন একটি বিজ্ঞান, যেখানে তরল ও গ্যাস কিভাবে প্রবাহিত হয়, তা গণনা করা হয়। এতে ভর, গতি ও শক্তির সংরক্ষণ সূত্র অনুসরণ করা হয়।
সিমুলেশনে একটি নতুন পদ্ধতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেটি বেশিরভাগ মানুষের জন্যই অপরিচিত। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘পর্যায়ক্রমিক রান্না’, যেখানে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ফুটন্ত পানিতে ডিম সিদ্ধ করার পর ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস কুসুম গরম পানিতে রাখা হয়। এটি করতে হয় প্রতি দুই মিনিট অন্তর ডিম স্থানান্তর করে। এটি মোট ৩২ মিনিট ধরে করতে হয়। ফলে যারা রান্নাঘরে ডিম ফেলে রেখে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তাদের জন্য এটি আদর্শ পদ্ধতি নয়।
তবে আপনি যদি সময় ও পরিশ্রম দিয়ে থাকেন, তাহলে পুরস্কারও পাবেন দারুণ। বাস্তবে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সিদ্ধ করা ডিম অত্যন্ত উৎকৃষ্ট মানের হয়ে থাকে। গবেষকরা নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ও হাই-রেজোলিউশন মাস স্পেকট্রোমেট্রি ব্যবহার করে এর গঠন, স্বাদ ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করেছেন।
এই পদ্ধতিতে সিদ্ধ ডিমের কুসুম ৬৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস স্থির তাপমাত্রায় থাকে, যা একে সুন্দরভাবে নরম রাখে। ফলাফল দেখিয়েছে যে পর্যায়ক্রমিক সিদ্ধ করা ডিমের কুসুম সুই ভিড পদ্ধতির মতোই নরম থাকে, তবে সাদা অংশটি তরল না হয়ে অর্ধসিদ্ধ ডিমের মতো ঘন হয়।
সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো, রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এভাবে ডিম সিদ্ধ করলে ডিমের কুসুমে অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় বেশি পরিমাণে পলিফেনল থাকে। এই যৌগগুলো মূলত উদ্ভিদজাত। এগুলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহ-নিবারক বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যাভ্যাসে উচ্চ পরিমাণে পলিফেনল গ্রহণ করলে হৃদরোগ, নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সার ও স্নায়ুবিক রোগের ঝুঁকি হ্রাস পেতে পারে।
তাই এসব উপকার পেতে পর্যায়ক্রমিকভাবে ডিম সিদ্ধ করে খেতেই পারেন। এতে আপনারই উপকার।