ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

কার স্বার্থে বেক্সিমকোর শেয়ার ফ্লোরপ্রাইসে রেখেছে রাশেদ মাকসুদ কমিশন

পুঁজিবাজারে টানা পতন ঠেকাতে শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যসীমা বা ফ্লোর প্রাইস আরোপ করেছিল শিবলী রুবাইয়াত কমিশন। এতে শেয়ারের দর নির্ধারিত মূল্যের নিচে না নামলেও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর একটি বড় অংশের শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে যায়। পূর্বের কমিশন নানা নাটকীয়তার পর ধাপে ধাপে শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর থেকে সর্বনিম্ন মূল্যসীমা তুলে দেয়। তবে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকোর শেয়ারে এখনো মাকসুদ কমিশন বহাল রাখে ফ্লোরপ্রাইস। একই বাজারে দুই রকম নিয়ম এখনো বহাল রেখেছে বর্তমান কমিশন। দায়িত্বে আসার ৬ মাস হতে গেলেও কার স্বার্থে বেক্সিমকোর শেয়ারে বাড়তি সুবিধা বহাল রেখেছে রাশেদ মাকসুদ কমিশন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারও ফ্লোরপ্রাইস দিয়ে রেখেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পূর্বের কমিশন আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ সালমান এফ রহমানের সুবিধার্থে তাঁর প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড বা বেক্সিমকোর শেয়ারে সর্বনিম্ন মূল্যসীমা বা ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখে। কয়েক ধাপে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর থেকে সর্বনিম্ন মূল্যসীমা তুলে দেওয়া হয়। তবে শেয়ারবাজারের দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকোর শেয়ারে এ সুবিধা অটুট থাকে। সেই সঙ্গে ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখা হয় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শেয়ারে। তবে কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ দায়িত্বে এসেও কোম্পানিটির সুবিধা বহাল রেখেছে। এক বাজারে দুই নিয়ম কার স্বার্থে বহাল রেখেছে রাশেদ মাকসুদ কমিশন তা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ সর্ষের মধ্যে ভূত আখ্যা দিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর মুক্ত হয়নি বলে মন্তব্য করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থসংবাদকে বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান নিয়োগের পর ফ্লোরপ্রাইসের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সব কোম্পানির উপর থেকেই ফ্লোরপ্রাইস তুলে নেওয়া হয়েছে তবে কয়েকটির উপর বহাল রয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক পুঁজিবাজারে দুই নিয়ম কেন? এটা বৈষম্য। পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিলো। যাতে একটি শেয়ারের মূল্য নির্ধারিত দামের নিচে না নামে সে জন্য। তবে একটা সময় এর নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেলে বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ফ্লোর প্রাইস তুলে দিতে বাধ্য হয় সাবেক কমিশন। কয়েক দফায় ফ্লোর প্রাইস পত্যাহার করলেও সর্বশেষ বেক্সিমকো ও ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের বহাল রাখে। তবে নতুন কমিশন দায়িত্বে আসার ৬ মাস হতে গেলেও এই দুই কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস পত্যাহার না করার কারণ জানা নেই। যেখানে পুঁজিবাজারের সকল কোম্পানি ফ্লোর প্রাইস মুক্ত সেখানে আলাদা করে এই দুই কেম্পানির সুবিধা দেওয়াতে রাশেদ কমিশনের কি স্বার্থ আছে জানা নেই। বাজারে বৈষম্য না রেখে বিতর্ক সৃষ্টি না করাই উচিৎ।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে, ডিএসইতে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের বর্তমান ফ্লোর প্রাইস ১১০ টাকা ১০ পয়সা। আর ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান ফ্লোর প্রাইস ৩২ টাকা ৬০ পয়সা।

জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পুঁজিবাজার সংস্কার ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে বিএসইসি পুনর্গঠন করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর মুক্ত করার জন্য ঢেলে সাজানো হয়। তবে কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ দায়িত্বে এসে এ পর্যন্ত একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সবগুলো সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নতুন কমিশন ইতোমধ্যে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার একটিও সঠিক হয়নি, কোনো সুফলও দেখা যায়নি। তবে দায়িত্বে আসার ৬ মাস হতে গেলেও পুঁজিবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করা সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর শেয়ারে দাম কমার সর্বনিম্ন স্তর সুবিধা বহাল রেখেছে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সাল থেকে কয়েক দফায় শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়। এর ফলে শেয়ারের দাম বিএসইসির বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সীমার নিচে নামার কোনো সুযোগ ছিল না। সর্বশেষ দফায় ২০২২ সালের ২৮ জুলাই সব শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর ফ্লোর প্রাইস আরোপ করেছিল বিএসইসি। এরপর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর একটি বড় অংশের শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে যায়। এতে দেড় বছর ধরে এসব কোম্পানির শেয়ারের তেমন কোনো লেনদেন হয়নি। পুঁজিবাজারেও একধরনের স্থবিরতা নেমে আসে। এ অবস্থায় বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি থেকে কয়েক ধাপে শেয়ারবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়। সর্বশেষ ধাপে গত বছরের ২৮ আগস্ট বেক্সিমকো ও ইসলামী ব্যাংক বাদে বাকি সব শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

অর্থসংবাদ/এসএম/কাফি

শেয়ার করুন:-
শেয়ার