সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান, শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি ইবি শিক্ষার্থীদের

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উন্নয়ন অধ্যায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রশাসন কর্তৃক ২৬৬তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক অভিযুক্তকে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট বাতিল ও এক বছরের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে প্রশাসন। তবে সিন্ডিকেট সভার এই সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা সংক্ষুব্ধ হন এবং স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বেলা ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়৷ প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচির পর প্রক্টরিয়াল বডির আশ্বাসে কর্মসূচি থেকে সরে যান শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রথমত হাফেজ ছিলেন একজন সাইকোপ্যাথ; তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর প্রমাণ সহ তথ্য-উপাত্ত দেওয়ার পরও প্রশাসন এমন ভনিতা মার্কা একটা রেজাল্ট দিল যেটার কোন মানেই হয় না। যেমনটা হচ্ছে যে এক বছরে একটা ভ্রমণের ব্যবস্থা করে দিলো। এক বছর পর উনি যদি আবার ব্যাক করে তাহলে আমাদের কী হবে। উনি শিক্ষক থাকা অবস্থায় আমাদের হয়রানি এবং দুর্দশার শেষ ছিল না, উনার বিরুদ্ধে যাওয়ার ফলে আমাদের আবার কী পরিমাণ হয়রানি এবং দুর্দশা হতে পারে তা চিন্তার বাহিরে। আমাদের দিকে প্রশাসন না তাকিয়ে তারা প্রহসন মার্কার রেজাল্ট দিয়ে আমাদেরকে আরো হয়রানির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যতদিন না আমাদের যৌক্তিক দাবি পূরণ হচ্ছে ততদিন আমরা এ আন্দোলন চালিয়ে যাব।

এর পূর্বে গত ৭ অক্টোবর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী হেনস্তা, আপত্তিকর মন্তব্য, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন-সহ ২৭ দফা অভিযোগ তুলে অপসারণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক আটকে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা উপাচার্যের কাছে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন ইবি উপাচার্য। গঠিত তদন্ত কমিটির প্রেক্ষিতে গত ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৬৬ তম (সাধারণ) সভার ৪৪ নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইলশানী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বিধির (4) i (b) ও (৫) ধারা মোতাবেক তাঁকে বাৎসরিক ০১ (এক) টি ইনক্রিমেন্ট বাতিল ও বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

প্রসঙ্গত, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে হেনস্থা, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে মারার ও ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি, ব্যক্তিগত রুমে নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে নির্যাতন, দাড়ি থাকলে শিবির ট্যাগ দিয়ে হেনস্তা, ইচ্ছাকৃতভাবে ফলাফল খারাপ করে দেওয়া সহ গুরুতর অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে অভিযুক্ত শিক্ষক হাফিজের কুশপুত্তলিকা টাঙিয়ে জুতা নিক্ষেপ এবং আগুনে পুড়িয়ে দেয় বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীরা পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত মানি না মর্মে আবেদন করলে পরবর্তী সিন্ডিকেটে পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য স্যার। শিক্ষার্থীদের দাবির কথা ওঠে আসবে।

অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন। তিনি জানান, বাধ্যতামূলক ছুটি মানে তাকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা। সিস্টেমে বিচার করা হবে। প্রয়োজনে আরেকটা সিন্ডিকেট বসে ‘কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না’ মর্মে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হবে। এর আগে যৌন হয়রানির অভিযোগে কয়েকজন শিক্ষক স্থায়ী বহিষ্কার করা হলে জুডিশিয়ারি প্রসেসিং এ আবার ফিরে এসে এখন বহাল তবিয়তে। সুতরাং বিচারিক প্রক্রিয়ায় নেয়ার জন্য সিস্টেম অনুসরণ করা হবে জানান তিনি।

অর্থসংবাদ/সাকিব/এসএম

শেয়ার করুন:-
শেয়ার