ক্যাটাগরি: জাতীয়

বিয়ের ৩ দিন পর জেলে যান বিডিআর স্বামী, ফিরে পেলেন ১৬ বছর পর

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বাসিন্দা সাবেক বিডিআর সদস্য মোতাহার হোসেন মানিক (৩৬)।

দীর্ঘ ১৬ বছর পর গতকাল শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে মায়ের কোলে ফেরেন তিনি। তাকে দেখতে ভিড় জমান আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীসহ বন্ধুবান্ধব।
এ সময় আবেগে আপ্লুত হন উপস্থিত সবাই।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) মোতাহারের বাসায় গেলে তার মা মুক্তা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বুকের ধন ফিরে পেয়েছি। আর যেন কোনো মাকে এভাবে কষ্ট ভোগ করতে না হয়।’

মোতাহার হোসেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য ও কচুবাড়ী জোতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। বাড়ি ফিরে বাবাকে না পেয়ে মোতাহার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিন বছর আগে তার বাবা মারা যান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাকরিতে যোগদানের ছয় মাস বয়সেই পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় জেলে যান মোতাহার। ট্রেনিং শেষে বাড়ি ফিরলে বাবা তাকে বিয়ে করান পাশের গ্রামের ববি আক্তারকে। তিন দিন সংসার শেষে কর্মস্থলে ফিরে যান তিনি। ১৬ বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা স্ত্রীর কাছে ফিরলেন অবশেষে। স্বামীকে ফিরে পেয়ে কান্না আর থামছিল না তার।

ববি বলেন, ‘বিয়ের তিন দিনের মাথায় স্বামী কারাগারে চলে যান। তখন থেকে স্বামীর অপেক্ষায় ছিলাম। দিন গড়িয়ে বছর হয়েছে, বছর গড়িয়ে দশক হয়েছে, তবু তার মুক্তি মেলেনি। ১৬ বছর পর সেই দিন এল।’

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া মোতাহার হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সম্পূর্ণ বিনা বিচারে আমি ১৬ বছর কারাগারে ছিলাম। যদি সঠিক বিচার হতো, তাহলে আমার কারাভোগ করতে হতো না।

তিনি বলেন, ‘১৬ বছর পর মায়ের কোলে ফেরা অন্যরকম এক অনুভূতি। এটা বলে বোঝানো যাবে না। এ জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। মাত্র ছয় মাস চাকরির বয়সে বিনা অপরাধে ১৬ বছর জেলখানায় কেটে গেছে। কী থেকে কী হয়েছে, এটা সবাই জানে।

মোতাহার হোসেন বলেন, ছয় মাস চাকরি আর ১৬ বছরের জেল। এই অল্প সময়ে কী অপরাধ করতে পারি বলেন? বাড়ি ফিরেছি, তবে একটাই চিন্তা, ১০ তারিখ কোর্ট আছে। প্রহসনের কোর্ট; মামলার বাদী বলেছেন, আমাদের ওপর প্রহসনের মামলা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার ইচ্ছা করলেই এটি ডিস্ট্রয়, বাতিল বা শেষ করতে পারে। জানি না আর কত দিন হয়রানি হতে হবে।

সাবেক এই বিডিআর সদস্য বলেন, ‘আমাদের অনেক অসহায় ভাই এখনো ভেতরে আছেন। তাদের কোনো অপরাধ নেই। মিথ্যা মামলায় তাদের ফাঁসানো হয়েছে। এই সরকারের উচিত তাদের ছেড়ে দেওয়া।’

শেয়ার করুন:-
শেয়ার