গত জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কয়েক দিন ইন্টারনেট বন্ধ এবং ধীরগতির বড় প্রভাব পড়েছিল মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। কিন্তু সেই ধাক্কা কাটিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে গত (২০২৪) নভেম্বর মাসে। এক মাসে এক লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকার মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন এটাই প্রথম। হিসাব অনুযায়ী বার্ষিক বিবেচনায় এই লেনদেন ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলানায় ৩১ শতাংশ বেশি। আর ২০২৪-এর জুলাই মাসের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি।
২০২৪ সালের মার্চে সর্বোচ্চ লেনদেন ছিল এক লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড হলো সদ্যবিদায়ী বছরের নভেম্বরে। নভেম্বর মাসে এক লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। দৈনিক পাঁচ হাজার ২২৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এ মাসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, আলোচিত নভেম্বর মাসে ক্যাশ ইন হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। উত্তোলন (ক্যাশ আউট) হয়েছে ৫০ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এ ছাড়া নভেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা হয়েছে দুই হাজার ৮৪১ কোটি টাকা, বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৬৩২ কোটি, মার্চেন্ট পেমেন্ট বা পণ্য কেনাকাটায় ৭ হাজার ৭৭৫ কোটি ও রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৭৭ কোটি টাকার।
দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে তাৎক্ষণিক আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল আর্থিক সেবা। অর্থ পাঠানোর পাশাপাশি অনেক নতুন সেবাও মিলছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। এর মধ্যে রয়েছে- বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা বিতরণ, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোসহ (রেমিট্যান্স) বিভিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে। দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ মাধ্যমটি।
বর্তমানে বিকাশ, রকেট, নগদসহ ১৩টি এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধিত অ্যাকাউন্ট ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ১২ হাজার ৫১৫ জন। এক মাস আগেও নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৫৭ লাখ। অর্থাৎ এক মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নতুন করে ১৬ লাখ গ্রাহক যুক্ত হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের সময় অর্থাৎ জুলাই মাসে এ গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৩১ লাখ ২৭ হাজার।
এর আগে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিংসেবা চালুর মধ্যে দিয়ে দেশে এমএফএস যাত্রা শুরু হয়। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংসেবা বিকাশ চালু হয়। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংসেবার বেশির ভাগই বিকাশের দখলে। এরপর রয়েছে ‘নগদ’-এর অবস্থান। বর্তমানে বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ নানা নামে ১৩টি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এমএফএস সেবা দিচ্ছে। গাড়িচালক, নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহকর্মীর বেতনও এখন দেওয়া হচ্ছে এসব সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। পোশাক খাতসহ শ্রমজীবীরা এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে পরিবার-পরিজনদের কাছে টাকা পাঠাচ্ছেন। ফলে দিন দিন নগদ টাকার লেনদেন কমে আসছে।