ক্যাটাগরি: জাতীয়

এক বছরে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

সারা দেশে গত একবছরে আত্মহত্যা করেছেন ৩১০ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ১ শতাংশই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী, অর্থাৎ স্কুলপড়ুয়া। এছাড়াও স্কুল, কলেজ, মাদরাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) ‘২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা: সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন।

গত কয়েক বছরের আত্মহত্যার তথ্য তুলনা করে সংগঠনটি জানায়, ২০২২ সালে দেশে আত্মহত্যাকারী স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫৩২ জন এবং ২০২৩ সালে ৫১৩ জন। ২০২৪ সালে আত্মহত্যাকারী মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩১০ জন। এদের মাঝে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও রয়েছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আত্মহত্যা সম্পর্কিত সংবাদ গণমাধ্যমে কম এসেছে বলেও মত তাদের।

প্রতিবেদন অনুযায়ী বয়সভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১৩-১৯ বছরে বয়ঃসন্ধিকালের শুরু থেকে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। ২০২৪ সালের মোট আত্মহত্যাকারী মানুষের প্রায় ৬৫.৭ শতাংশ এই বয়সসীমার। আত্মহত্যার তালিকায় এরপরই রয়েছে ২০-২৫ বয়সসীমা যুবক-যুবতীরা।

গত বছর এ বয়সের আত্মহত্যা করেন প্রায় ২৪ শতাংশ । শিশুদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা গেছে। ১-১২ বছর বয়সী শিশুর আত্মহত্যার তথ্য উঠে এসেছে, যা প্রায় ৭.৪ শতাংশ। সবচেয়ে কম রয়েছে ২৬-৩০ বছর বয়সসীমার মানুষ। এ বয়সের ২.৯ শতাংশের কাছাকাছি।

২০২৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আত্মহত্যার প্রবণতা সব লিঙ্গের মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে, তবে নারীদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি। মোট ৩১০ জন আত্মহত্যা করেছেন, এর মধ্যে নারী মোট আত্মহত্যার প্রায় ৬১ শতাংশ। এদিকে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হারও কম নয়; প্রায় ৩৮.৪ শতাংশ পুরুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। তৃতীয় লিঙ্গের এবং ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে একজন করে আত্মহত্যা করেছেন, যা মোট সংখ্যার যথক্রমে ০.৩ শতাংশ এবং ০.৩ শতাংশ।

এই পরিসংখ্যানটি নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার উচ্চ প্রবণতা এবং এর সম্ভাব্য সামাজিক ও মানসিক কারণগুলোর দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। নারী শিক্ষার্থীরা সাধারণত আত্মহত্যার ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ থাক। তাই মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সহযোগিতা নারীদের জন্য আরও বেশি প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, এসএসসি বা সমমান অর্থাৎ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ২০২৪ সালে আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৪৬.১ শতাংশ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী। এরপরই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থান। এ হার ১৯.৪ শতাংশ। তাছাড়া, স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।

২০২৪ সালে এ পর্যায়ে আত্মহত্যার হার ১৪.৬ শতাংশ। এছাড়া প্রাথমিক স্তরে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝেও আত্মহননের বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। এ স্তরের ৭.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া স্নাকোত্তর ১.৯ শতাংশ, ডিপ্লোমা ০.৬ শতাংশ, সদ্য পড়াশোনা শেষ করা শিক্ষিত তবে বেকার ০.৬ শতাংশ।

আত্মহত্যার পন্থা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে বলা হয়, আত্মহত্যার ক্ষেত্রে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহননের ঘটনা সবচেয়ে বেশি, যা ৮৩.৫ শতাংশ আত্মহত্যার ক্ষেত্রে ঘটে। অন্যদিকে, বিষপানে আত্মহত্যার হার প্রায় ৮.৭ শতাংশ। ৪.৬ শতাংশ মানুষ অন্যান্য পদ্ধতিতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। যেমন: ছাদ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে, পানিতে ডুব দিয়ে, ট্রেনে কাটা পড়ে, ছুরি দিয়ে আঘাত, ঘুমের ওষুধ খেয়ে ইত্যাদি।

সচেতনতার তাগিদ দিয়ে বলা হয়, আত্মহত্যার ধরন বিবেচনায় নিয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করা সহজতর হতে পারে। দড়ি, বিষ, ছুরি ইত্যাদি ব্যবহারের প্রতি পরিবারের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অভিমান অনেক সময় মানসিক চাপ ও হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পারিবারিক অবহেলা, প্রিয়জনের সাথে ভুল বোঝাবুঝি কিংবা শিক্ষক বা বন্ধুদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সমর্থন না পাওয়ার মতো বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের মনে অভিমান তৈরি করতে পারে।

অনলাইন এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সায়্যেদুল ইসলাম সায়েদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক ড. মো. জামাল উদ্দীন, আইনজীবী ও লেখক ব্যারিস্টার নওফল জামির, আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ প্রমুখ।

কাফি

শেয়ার করুন:-
শেয়ার