জাতীয়
চীনা ঋণ পরিশোধের সময় ৩০ বছরে নিতে চায় সরকার

চীনা প্রকল্পের সুদের হার কমানোর পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের সীমা ৩০ বছরে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। আগামী ২০ জানুয়ারি চীন সফরে যবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। ২১ জানুয়ারি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে দ্বিক্ষীয় বৈঠকে বসবেন তিনি।
সফরকে সামনে রেখে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অনেক প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ আছে। বিনিয়োগগুলো মূলত ঋণ আকারে। তার মধ্যে কিছু প্রকল্প চলমান। আলাপ আলোচনার সময় প্রথমে ব্যবসায়িক বিষয়গুলো আসবে। অফিসিয়ালি চীন আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। আন-অফিসিয়ালি ভারতকেও বড় অংশীদার বলা হয়।
উপদেষ্টা বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের প্রধানত আমদানির সম্পর্ক এবং এগুলো আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ আমাদের অনেক রপ্তানি সেই আমদানি পণ্যগুলোর ওপর নির্ভরশীল। কাজেই চীনের সঙ্গে আমাদের যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আরও অর্থনৈতিক আলোচনা আছে- যেমন আমরা ঋণের শর্তাবলী নিয়ে কথা বলব। এর মধ্যে সুদহার কমানো বা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো।
তিনি আরও বলেন, চীনের কাছে এটাও চাইবো যেন যখন আমরা এলডিসি থেকে গ্রাজুয়েট করব তখন ইউরোপের মতো তারাও যেন আমাদের জন্য তিন বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা বহাল রাখে। এখনো চীন আমাদের অধিকাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু গ্রাজুয়েশনের পরে এটা পরিবর্তন হতে পারে, তাই এটি আমাদের আলোচনার মাধ্যমে আগেই ঠিক করে নিতে হবে।
বাংলাদেশে চীনে ঋণের পরিমাণ জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রতিটি ঋণের সুদের হার এক না। আমরা মোটাদাগে সুদের হার কমানোর কথা বলব। ঋণ পরিশোধ সীমা চেষ্টা করব ৩০ বছরে নিয়ে যেতে; যেন আমাদের অর্থনীতির ওপর চাপ কম আসে এবং পরিশোধ করতে সহজ হয়। পরিশোধের সময় বাড়ানোর কথা বলব।
সফরে নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের করা সমঝোতা স্মারকের নবায়নের তথ্য জানান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, তিস্তা প্রকল্পের চেয়ে বড় কথা হলো আমাদের নদী নিয়ে যে এমওইউ আছে ওটা শেষ হয়ে গেছে। আমাদের সেটা নবায়ন করার সিদ্ধান্ত আছে। স্পেসিফিক প্রকল্পের বিষয়ে আরও অনেক বিস্তারিত আলোচনা লাগবে। তবে বাংলাদেশ অবশ্যই তার নিজের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেবে এটা আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের সহায়তা চাওয়ার কথা জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করব। আমরা চাইব চীন আমাদের সহায়তা করুক। চীনের ওখানে যথেষ্ট প্রভাব আছে। রোহিঙ্গা সমস্যা এক দিনে সমাধানের বিষয় না। এখন যে পরিস্থিতি মিয়ানমারে সেখানে স্থিতিশীলতা না ফিরলে কিন্তু প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না, এটা মেনে নিতে হবে। তাদের জোর করে পাঠাতে পারবেন? একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, আমরা সেই পরিবেশ সৃষ্টিতে চীনের সহায়তা চাইব। আমরা চাইব রাখাইনে একটা স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হোক।
চীনের বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগে (জিডিআই) বিগত সরকারের সময় থেকে বাংলাদেমকে যুক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বেইজিং। উপদেষ্টার সফরে জিডিআই সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক কিংবা সরকারের অবস্থান কি?
তা জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, কিছু জিনিস আছে যেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলমান। এটা বহাল থাকবে এবং আমরা ইতিবাচকভাবে দেখব। এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখনই সমঝোতা স্মারকে যাব কিনা আমি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।
বিগত সরকারের সময়ে চীনের সঙ্গে ৫ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি ছিল এবং বাজেট সহায়তা নিয়েও আলোচনা ছিল। বর্তমান সরকারের এ বিষয়ে প্রদক্ষেপ নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমরা কোনো কিছু বাদ রাখব নাম, সবকিছু নিয়ে আলাপ-আলোচনা করব। সেই আলোচনা আছে এবং থাকবে। যেহেতু আমাদের সমস্যা আছে আমরা বাজেট সহায়তা নিয়ে কথা বলব। দেখি তারা কতটুকু সহায়তা দিতে পারে।
চীন সফরের লক্ষ্য জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ইস্যুগুলো আপনারা জানেন কোনটা এক মাসের বা এক বছরের ইস্যু না। ইস্যুগুলো অনেক দিনের, অনেক পেছন থেকে হয়ে আসছে। বিগত সরকারের সময়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আমরা কি সেগুলো সব বাদ দিয়ে দেব? কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা দেখব যে, সেটা আমাদের দেশের স্বার্থ ঠিক মতো রক্ষা করা হচ্ছে কি না।
তিনি আরও বলেন, কিছু সাংস্কৃতিক আলোচনা আছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এ উপলক্ষে দুই দেশেই কিছু উৎসব আছে। সেগুলো নিয়েও আমরা কথাবার্তা বলব।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয়
দুবাই পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে যোগ দিতে দুদিনের সফরে দুবাই পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুবাই স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১৫ মিনিটে তিনি পৌঁছান বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম।
এসময় প্রধান উপদেষ্টাকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রীড়া মন্ত্রী আহমেদ বেলহৌল আল ফালাসি স্বাগত জানান।
ড. আহমেদ বেলহৌল আল ফালাসি ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে অংশগ্রহণের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান এবং গত এক দশকে বার্ষিক দুবাইয়ে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন শীর্ষ সম্মেলনের বিষয়ে তাকে অবহিত করেন।
তারা দুদেশের মধ্যে ক্রীড়া ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়েও আলোচনা করেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ এবং ঢাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী খাসেফ আল হামৌদি উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আজ সন্ধ্যা সাতটা ৪৫ মিনিটে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিট ২০২৫ সম্মেলনে অংশ নিতে আমিরাতের দিছে ঢাকা ছাড়েন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গত ১৩ জানুয়ারি দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিট ২০২৫ সম্মেলনে অংশ নিতে আমিরাতের উপ-রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইয়ের শাসক আমির শাইখ মুহাম্মাদ বিন রাশিদ আল মাখতুম প্রধান উপদেষ্টাকে একটি আমন্ত্রণপত্র পাঠান।
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে সম্মতি দিয়েছেন।
এবারের সম্মেলন সরকারগুলোর মধ্যে কার্যকরী অংশীদারি ও বৈশ্বিক মতবিনিময় এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার ও জনগণের মধ্যকার সেতুবন্ধ সৃষ্টিতে প্ল্যাটফরমটির উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে। প্রধান উপদেষ্টার সম্মেলনে যোগদানের মাধ্যমে বৈশ্বিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে তার চিন্তা এবং বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে আগ্রহী ইইউ

বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আগের মতো সহযোগিতা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে আগ্রহী ইইউ।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে সিলেটে সীমানা ছাড়িয়ে ব্যবসা এই আহ্বানে বাংলাদেশে টেকসই বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মাইকেল মিলার বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের বিষয়টিও তাদের কার্যক্রমেরই একটা অংশ। তাছাড়া ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়ন প্রচারে ইউরোপ বাংলাদেশ ফেডারেশন অব চেম্বার এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কার্যক্রমেরও প্রশংসা করেন তিনি।
সেমিনারে অংশ নেওয়া অন্যান্য বক্তারা দেশের আঞ্চলিক ব্যবসার সম্প্রসারণ, উদ্যোক্তা এবং অংশীদারদের একত্রিত করার জন্য ইউরোপ ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং প্রবৃদ্ধির জন্য নতুন সুযোগগুলি কাজে লাগানোর উপায় বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন তারা।
চেম্বারের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ও বাংলাদেশের কান্ট্রি হেড মোহাম্মদ আলী টিংকুর সভাপতিত্বে সেমিনারে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও ইউরোপে বসবাসরত বাংলাদেশি সিলেটি ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দরা অংশ নেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
ডিসি সম্মেলন শুরু রবিবার, উঠছে ৩৫৩ প্রস্তাব

আগামী রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন। যা শেষ হবে বুধবার (১৮ ফেব্রুয়ারি)। এবার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাবের মধ্যে ৩৫৬টি এই সম্মেলনে উঠছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এবারের ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের কাছ থেকে এক হাজার ২৪৫টি প্রস্তাব পায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর মধ্যে কার্যপত্রে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ৩৫৩টি প্রস্তাবের ওপর সম্মেলনে আলোচনা হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ দ্বিমত করায় এবং আগের ডিসি সম্মেলনে উপস্থাপিত হওয়ায় অনেক প্রস্তাব কার্যপত্রে রাখা হয়নি।
১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ডিসিদের মুক্ত আলোচনা হবে। সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভা হবে। রাতে হবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নৈশভোজ।
দ্বিতীয় দিন কার্য-অধিবেশনের বাইরে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ডিসিরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ডিসিদের সৌজন্য সাক্ষাৎ রাখা হয়নি।
এবার ডিসি সম্মেলনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে মোট ৩৪টি কার্য-অধিবেশন হবে। কার্য-অধিবেশনগুলো ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে।
তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে কার্য-অধিবেশন এবং সমাপনী অধিবেশন সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নবনির্মিত ভবনে হবে।
আগামী শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে ডিসি সম্মেলনের বিষয়ে বিস্তারিত জানাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সরকারের নীতিনির্ধারক এবং জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের মধ্যে সামনা-সামনি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সাধারণত প্রতি বছর ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে এ সম্মেলন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
আ. লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র-জনতার কফিন মিছিল

গাজীপুরে হামলায় আবুল কাশেম নামে এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে কফিন মিছিল বের করেছে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত সোয়া ৯টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কাশেমের জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর লাশের কফিন নিয়ে শাহবাগের দিকে মিছিল বের করা হয়।
এ সময় তারা- ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’; ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’; ‘আমার ভাই কফিনে, খুনি কেন বাহিরে’; ‘ছাত্র-জনতার অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’; ‘হৈ হৈ রৈ রৈ, খুনি হাসিনা গেলি কই’; ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’; ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, গাজীপুরে অভ্যুত্থানের ৬ মাস পরে আমাদের ভাইকে কুপিয়ে শহীদ করা হলো। আমরা কিছুই করতে পারলাম না। লাশ সামনে নিয়ে বিগত দিনের ফ্যাসিবাদকে মনে পড়ছে। যে আওয়ামী লীগ আমার ভাইকে শহীদ করেছে সেই আওয়ামী লীগ এ দেশে রাজনীতি করার বিন্দু পরিমাণ অধিকার রাখে না। শহীদের লাশের শপথ করে বলছি, শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাব।
তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। হাসিনা সেই ফ্যাসিবাদের ধারা বজায় রেখে জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে গণহত্যা চালিয়েছে। তাই, এই মাটিতে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে, আওয়ামী লীগের রাজনীতি চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি কাজে লাগিয়ে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, আজ স্বাধীনতার ৬ মাস পরেও বিপ্লবীদের শহিদ হতে হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এর জবাব দিতে হবে। জুলাইয়ের একজন সৈনিক বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগের কবর রচনা করা হবে। শুধু নিষিদ্ধ করলেই হবে না, যারা বিভিন্নভাবে তাদের পক্ষ নিয়েছে প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করতে হবে। যদি তা না করে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা বিপ্লবকে সম্পন্ন করতে আইন হাতে তুলে নেবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আজকে আয়না ঘর প্রকাশিত হয়েছে, আজকেই অভ্যুত্থান বিষয়ক জাতিসংঘের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, আজকেই আমাদের ভাই শহীদ হলেন। বিপ্লবী ভাইয়ের শাহাদাত আমাদের ব্যর্থতা। আমরা এতদিন পর্যন্ত সুবিচার নিশ্চিত করতে পারিনি, আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারিনি।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর এ ভূখণ্ডের দখল আমরা পেয়েছি। ৫ আগস্টের পরে হয় আমরা থাকব না হলে আওয়ামী লীগ থাকবে। বিপ্লবীরা ও আওয়ামী লীগ এক সঙ্গে এ দেশে থাকতে পারে না। আমরা স্পষ্ট করে সরকারকে বলতে চাই, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর শাস্তি নিশ্চিত করুন এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন।
কাশেমের মৃত্যুর ঘটনায় এর আগে কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। কর্মসূচি অনুযায়ী— সারা দেশের প্রত্যেক জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামে শহীদ আবুল কাশেমের গায়েবানা জানাজা এবং আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে খাটিয়া মিছিল করা হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
বইমেলায় ১২ দিনে এলো ৯২২ নতুন বই

চলছে বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা। এরইমধ্যে প্রথম দশক পেরিয়ে দ্বিতীয় দশকে গড়িয়েছে বইমেলার কার্যক্রম। দিন যত যাচ্ছে পাঠকদের ভিড়ও তত বেশি বাড়ছে। সেইসঙ্গে প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে নতুন নতুন বই। সে ধারাবাহিকতায় বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ১২ দিনে মোট প্রকাশিত নতুন বইয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯২২টিতে। বাংলা একাডেমি থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অমর একুশে বইমেলার ১২তম দিনে মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায়। আজ নতুন বই এসেছে ৮৯টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্লোগান : বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারাবাহিকতায় বাকশাল গঠন, বাংলা সাহিত্যের দায় ও ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্ৰবন্ধ উপস্থাপন করেন হাসান রোবায়েত। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মঈন জালাল চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন ফরহাদ মজহার।
প্রাবন্ধিক বলেন, মানুষের ইতিহাসে স্লোগানকে ছোটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। স্লোগান আমজনতার মুখ থেকে উচ্চারিত হয়ে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনরত মানুষের মুখে মুখে। স্লোগানই একমাত্র শিল্পমাধ্যম যা তাৎক্ষণিকভাবে আমজনতাকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত করে তোলে। বাংলা ভাষার স্লোগান সমসাময়িক ভাষা প্রবণতাকে আত্মস্থ করেছে উদারভাবে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে তৎপরবর্তী সবে আন্দোলন-সংগ্রামে আমজনতার মুখের ভাষা থেকেই স্লোগানের উদ্ভব ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানেও আমজনতার ভাষায় রচিত স্লোগানই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে।
আলোচক বলেন, ভাষা শুধু একটা ভাষিক রূপই নয়, সেটি একই সঙ্গে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রতিরোধেরও খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। স্লোগানের মধ্য দিয়ে মানুষের কথা উঠে আসে, এটি মানুষের প্রতিবাদের ভাষা। আমাদের অভ্যন্তরে ও চেতনায় যে ক্রোধ, প্রতিবাদ জমে ওঠে তারই বহিঃপ্রকাশ হলো স্লোগান। ফ্যাসিবাদী শাসনের অধীনে দীর্ঘ দিন আমাদের মনে জমে থাকা ক্রোধ জনমানুষের ভাষা হয়েই ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের স্লোগানগুলোতে উঠে এসেছে।
সভাপতির বক্তব্যে ফরহাদ মজহার বলেন, আমাদের দেশে ফ্যাসিবাদী চিন্তাচেতনা গড়ে ওঠার পেছনে যে মাইলফলকগুলো রয়েছে, বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যবহৃত স্লোগানগুলোর মধ্যদিয়ে সে মাইলফলকগুলো আমরা অনুধাবন করতে পারি।
আজ লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি ফয়েজ আলম এবং কবি সৈয়দ রনো। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী শিরিন জাহান এবং শাকিলা মতিন মৃদুলা।
আগামীকাল যা থাকছে বইমেলায়
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার ১৩তম দিন। বইমেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২০২৪’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সারোয়ার তুষার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন যোবায়ের আল মাহমুদ এবং নুসরাত সাবিনা চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন মাহবুব মোর্শেদ।