ক্যাটাগরি: অর্থনীতি

ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী: ডিসিসিআই সভাপতি

শুল্ক, করহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এবং শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) মতিঝিল ডিসিসিআই কার্যালয়ে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ‘দেশের সমসাময়িক অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি এবং ২০২৫ সালে ডিসিসিআইর বর্ষব্যাপী কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআই সভাপতি অর্থনীতির ১১টি বিষয়ের ওপর বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ২০২৫ সালে ডিসিসিআই’র কর্মপরিকল্পনার ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাব, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি খরচ বৃদ্ধি, উচ্চ জ্বালানি ব্যয় ও নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ঋণ প্রাপ্তিতে বাধা ও সুদের উচ্চ হার, উচ্চ শুল্কহার, ভ্যাট হার বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দেশের বেসরকারিখাত এমনিতেই বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অর্থনীতির বিদ্যমান চ্যালেঞ্জের মধ্যে শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধিসহ বেশকিছু পণ্যের করহার বৃদ্ধি এবং শিল্পে গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর উদ্যোগ আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ সামগ্রিক অর্থনীতর জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি বলেন, শিল্প ও ক্যাপটিভের প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম সম্প্রতি ৩০ টাকা ও ৩১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে যথাক্রমে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা বাড়িয়ে দ্বিগুণের বেশি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রায় ৪৩টি পণ্যের ওপর ভ্যাট ও শুল্ককর দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম বাহন মোটরসাইকেল, অতি প্রয়োজনীয় রেফ্রিজারেটর, কম্প্রেসার শিল্পের আয়কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর।

তিনি বলেন, আমাদের শিল্পে কী এমন ম্যাজিক আছে যেখানে ঘন ঘন জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়, প্রস্তাব করা হয়। গত তিন বছরে গ্যাসের দাম ৩০০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। প্রস্তাবিত দর কার্যকর হলে তা ৪০০ শতাংশ বেড়ে যাবে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব এবং বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভ্যাট-করহার বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। উৎপাদন ব্যাহত করবে, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস করবে। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে করে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ উত্তরণে সরকারের পাশাপাশি স্টেকহোল্ডারদের সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি। ব্যবসা পরিচালন ব্যয় ও মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ কমাতে এ মুহূর্তে ভ্যাট এবং করহার বাড়ানোর উদ্যোগটি পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাই।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, নতুন বছরের নতুন বোর্ডের প্রথম সভা আমাদের। আমরা পোশাকখাতসহ বিভিন্ন রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য নতুন নতুন বাজার তৈরিতে কাজ করতে চাই। পোশাকের বাজার লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার সঙ্গে কাজ করবো, যেখানে আরও যাবে পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া, কৃষি, খেলনা, ইলেকট্রিক পণ্য। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতি ক্ষুদ্রশিল্প নিয়ে কাজ করতে চাই। আমাদের বড় বড় শিল্পে যেখানে খেলাপি বেশি, সেখানে সিএসএমইএ শিল্পে খেলাপি নেই। তাদের জন্য কিছু করতে চাই।

বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে তিনি বলেন, কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ দেশে বিনিয়োগ করতে এলে তাকে অনেক দপ্তর ও শাখার অনুমোদন নিতে হয়। দেশীয় কোনো উদ্যোক্তা উদ্যোগ তৈরিতেও ৩১টি কাগজ সাবমিট করতে হয়। আমরা চাই এটা যেন সহজ হয়, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করবো। এটা করতে না পারলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না, আবার দেশীয় বিনিয়োগও তৈরি হবে না।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতি ও অর্থনীতি আলাদা করে রাখতে হবে। রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতি না মেলানোর জন্য সবার সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাই।

তিনি জানান, এ বছর ঢাকা চেম্বার সুদের হার কমানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করবে।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার