ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিভাগ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেন সমাজ কল্যাণ বিভাগের চলমান সকল শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। এসময় বিভাগ সংস্কারের ১০ দফা দাবি উত্থাপন করে ৭ দিনের মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ চান শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে কঠোর কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিভাগে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করেছেন বলে জানান বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘শিক্ষকের পদে নিয়োগ দেও, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেও’, ‘শিক্ষা যদি এগিয়ে চাও, শিক্ষা সংকট দূর করাও’, ‘শিক্ষক সংকটের লাগাম টানো, শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ রক্ষা করো’, ‘শিক্ষক সংকট আর না আর না’, ‘ক্লাসরুমের সংকট কাটাও, শিক্ষার গতি বাড়াও’, ‘যথেষ্ট ক্লাসরুম চাই, শিক্ষার মান বাড়াতে চাই’, ‘শিক্ষার্থীর অধিকার দেও, ক্লাসরুম সংকট দূর করাও’, ‘ক্লাসরুম ছাড়া ক্লাস, আর না আর না’, ‘সেশনজটের এই খেল, শিক্ষার্থীর জীবন ফেল’, ‘স্বপ্ন ভাঙে সেশনজটে, পরিবর্তন আনতে হবে’, ‘সময়মতো ডিগ্রি দেও, শিক্ষার্থীর জীবন বাঁচাও’, ‘আজই চাই সমাধান, সেশনজটের অবসান’, ‘অন্য বিভাগে সেমিনার লাইব্রেরি, আমরা কেন লাইব্রেরি হীন’, ‘অন্য বিভাগ সুবিধাপ্রাপ্ত, আমরা কেন অবহেলিত’, ‘শিক্ষকদের রোষানলে, আর না আর না’, ‘অন্য বিভাগ স্বর্গে, আমরা কেন মর্গে’, ‘জবাব চাই জবাব চাই বিভাগ জবাই চাই’, ‘জবাব চাই জবাব চাই প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ হলো নির্দিষ্ট রুটিন প্রনয়ণ এবং প্রতিটি কোর্সের নুন্যতম ক্লাস নিতে হবে। সেশন জট নিরসনে তিন মাসের মধ্যে প্রত্যেক সেমিস্টারের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। আগামী সাত কার্য দিবসের মধ্যে পুর্নাঙ্গ একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে এবং শিক্ষক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত গেস্ট টীচার দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।পর্যাপ্ত ক্লাস রুমের ব্যবস্থা করতে হবে। সেমিনার লাইব্রেরী বরাদ্দ দিতে হবে। ইনকোর্স সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার আগে নিতে হবে এবং নম্বর প্রকাশ করতে হবে। বর্তমান ট্রেজারার, জাহাঙ্গীর আলম স্যারকে সমাজকল্যাণ বিভাগের সার্বিক তত্বাবধানের দায়িত্ব দিতে হবে। প্রতি বছর বিভাগ থেকে শিক্ষাসফরের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সেটা সম্পূর্ণ বিভাগের অর্থায়নে করতে হবে। আন্দোলন পরবর্তী প্রভাব কোনো শিক্ষার্থীর উপর যেনো না পড়ে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা কয়েকবার দাবি জানিয়ে আসছি কিন্তু কোনো কর্ণপাত নাই। ৯ দফার দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে। প্রয়োজনে আমরণ অনশনে নেমে যাব। শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে কিছু সময় নিতে পারে কিন্তু খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ সহ অন্য দাবিগুলো সব মেনে নিতে হবে। তাদের দাবি সব রোডম্যাপ রাজপথে ঘোষণা দিয়ে ক্লাসে ফেরার সুযোগ দিতে হবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের সভাপতি জানান, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেয়া হয়েছে। সবার চেষ্টায় দ্রুততম সময়ে অর্থাৎ এক সপ্তাহের মধ্যে দৃশ্যমান সংস্কার দেখতে পাবে শিক্ষার্থীরা।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে বিভাগের শিক্ষকরা স্বাক্ষর করেছেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে উপাচার্যের সম্মতিক্রমে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলমকে সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। খণ্ডকালীন শিক্ষক সহ সব সংকট দ্রুততম সময়ের মধ্যে ট্রেজারার দেখভাল করবেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি সমূহের মধ্যে বর্তমান ট্রেজারারকে বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গ ওঠে আসলে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগের প্রশাসন কী করছে বা করছে না সেটা দেখার বিষয় না। আমি দায়িত্ব নিয়েছি যেহেতু প্রতিদিন জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা হবে। শিক্ষার্থীদের এইটুকু আশ্বস্ত করতে পারি যে আমি যেখানে থাকবো সেখানে স্বল্প সময়ের মধ্যেই দৃশ্যমান ফলাফল দেখতে পাবে।
অর্থসংবাদ/সাকিব/এসএম