চট্টগ্রামের জুবিলী রোড শাখা থেকে প্রায় ৯৯৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে আশরাফুল আলম ও আহসানুল আলমসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসামিরা হলেন- ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও এস আলম গ্রুপের মালিকের সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম এবং অপর ছেলে ও ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপস লিমিটেডের মালিক আশরাফুল আলম।
এ ছাড়া মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, বাণিজ্য বিতান কর্পোরেশনের মালিক মো. তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী, অ্যাপার্চার ট্রেডিং হাউজের মালিক এস. এম নেছার উল্লাহ, ড্রিমস্কেপ বিজনেস সেন্টারের মালিক মোহাম্মদ মহসিন মিয়াজী, এক্সিসটেন্স ট্রেড এজেন্সির মালিক মো. সালাহ উদ্দিন (সাকিব), ফেন্সিফেয়ার কর্পোরেশনের মালিক মোহা. আব্দুল মজিদ খোকন, এপিক এ্যাবল ট্রেডার্সের মালিক মো. ইকবাল হোসেন, ফেমাস ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক আরশাদুর রহমান চৌধুরী, প্রোপ্রাইটর জিনিয়াস ট্রেডিংয়ের মালিক মোহাম্মদ আবুল কালাম, গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাশেদুল আলম, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর, ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফারজানা বেগম, এমডি আব্দুল ওয়াহিদ, ইনিফিনিটি সিআর স্ট্রিপস লিমিটেডের হিসাব পরিচালনাকারী মনতোষ চন্দ্র রায়, চেমন ইস্পাত লিমিটেডের পরিচালক মুহা. নজরুল ইসলাম, ওই প্রতিষ্ঠানের এমডি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আনছার এন্টারপ্রাইজের মালিক আনছারুল আলম চৌধুরী, রেইনবো কর্পোরেশনের মালিক রায়হান মাহমুদ চৌধুরী, গ্রিন এক্সপোজ ট্রেডার্সের মালিক এম এ মোনায়েম, সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মাহাফুজুল ইসলাম, মেসার্স শাহ আমানত ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী চৌধুরী, সোনালী ট্রেডার্সের মালিক সহিদুল আলম ও মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গোলাম সরওয়ার চৌধুরী।
ইসলামী ব্যাংকের আসামিরা হলেন- ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী ও কে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, সাবেক পরিচালক ও ইসি কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি ও চিফ হিউম্যান রিসার্চ অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ সাব্বির, মিফতাহ উদ্দিন, সাবেক ডিএমডি আবুল ফাইয়াজ মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, সাবেক এসইভিপি ও এএমডি মো. আলতাফ হোসেন, এসইভিপি জি এম মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের জুবিলী রোড শাখা প্রধান ও এসভিপি সোহেল আমান, ওই শাখার সাবেক প্রধান একজো শাহাদাৎ হোসেনসহ অন্তত ৩০ কর্মকর্তা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ঋণের নামে শুধুমাত্র ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জুবিলী রোড শাখা থেকে প্রায় এক হাজার ১১৪ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। যার নেতৃত্ব দেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলম। আত্মীয় স্বজন ও নিজ কোম্পানির বেতনভুক্ত কর্মচারীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক দেখিয়ে মাত্র তিন বছরে ওই টাকা হাতিয়ে নেয় আলোচিত গ্রুপটি।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জুবিলী রোড শাখায় মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীকে সাপ্লায়ার হিসেবে দেখানো হয়। মূলত ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক, অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যাংকের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে অপকর্ম ঘটিয়েছেন। অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা ব্যাংকিং অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের অনুকূলে ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বরে ৮৯০ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা গ্রহণ করলেও তার বিপরীতে কোনো মালামাল ক্রয় এবং বিক্রয় না করে বিভিন্ন জাল কাগজপত্র তৈরি করে। এরপর ওই টাকা উত্তোলন ও বিতরণ করে রূপান্তর, স্থানান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে অপরাধ গোপন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
ওই চক্রটি নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আবারও বিনিয়োগসীমা ৮৯০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১০০০ কোটি করে। আর ২৮টি ডিল সাজিলে চক্রটি ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ৯৯৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এ সব কাজের মধ্য দিয়ে ব্যাংকিং নীতিমালা এবং ইসলামী ব্যাংকের জন্য প্রচলিত শরীয়াহ নীতি লঙ্ঘন করা হয়েছে।
অন্যদিকে ২০২৩ সালে আরও নতুন করে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত ভুয়া ডকুমেন্ট তৈরি করে চারটি ডিল সৃষ্টি করে আরও ১৮১ কোটি টাকা উত্তোলন করে নতুন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এভাবে জুবিলি রোড শাখার গ্রাহক মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের নামে ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ইস্যুকৃত অসমন্বিত ৩২টি ডিলে মোট এক হাজার ৭৪ কোটি ৮৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা ছাড় করে যা ব্যাংকের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, অডিট প্রতিবেদন কিংবা দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বিষয়টির প্রমাণ মিলেছে। পরবর্তী সময়ে ২০২৪ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে জাল নথি তৈরি করে কৃত্রিম উপায়ে ১৩ কোটি ৫০ লাখ ৮৭ হাজার পরিশোধ দেখানো হয়েছে।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর পর্যন্ত ঋণ হিসাবে ৯৯৩ কোটি ৭০ লাখ ২৪ হাজার টাকা ও মুনাফা হিসাবে ১২০ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ মোট এক হাজার ১১৩ কোটি ৯৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ হয়েছে।