ঢাকার নবাবপুরে একটি হোটেলে প্রায় দুই দশক ধরে পাচকের কাজ করেন সুজন মাহমুদের বাবা আবদুল মোতালেব। ছোটোকালে পিরোজপুরের বাড়িতে সুজন ও তার তিন ভাইবোনের কাছে সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত ছিলো প্রতিমাসের শুরুতে বাবা যখন বাড়িতে আসতেন। কেননা তিনি সবসময়ই কিছু না কিছু সাথে নিয়ে আসতেন। আবার লঞ্চে আসার সময় বেতনের টাকাটা কীভাবে নিরাপদে এনেছেন সেই গল্প শোনাও তাদের কাছে ছিল বেশ রোমাঞ্চের, কেননা সে সময় চোর-ডাকাত, ছিনতাইকারী, প্রতারকের পাল্লায় পড়ে সর্বস্ব খোয়ানোর ঘটনা শোনা যেত প্রায়ই। একারণে টুপির ভাঁজে, জামার চোরা পকেটে, কাপড়ে সেলাই করে, চানাচুর-বিস্কিটের প্যাকেটে লুকিয়ে টাকা আনার গল্প সন্তানদের শোনাতেন মোতালেব সাহেব। সারা মাসের কষ্টের আয় নিরাপদে বাড়িতে নিয়ে আসতে কতই না বুদ্ধি বের করতে হতো তাকে। তবে দেশে গত দশকে এই চিত্র আমূল বদলে গিয়েছে বিকাশের মতো মোবাইল আর্থিক সেবা আসার মধ্য দিয়ে।
এখন সুজনও বাবার সাথে একই হোটেলে কাজ করেন। বেতন পেয়ে বাড়িতে টাকা বিকাশ করে দেন। টাকা নিরাপদে পৌঁছানো নিয়ে এখন আর কোনো টেনশন নেই পিতা-পুত্রের। সুজনের কাছে এখন টাকা পাঠানো মানেই বিকাশ করা। কেবল তিনিই নন, কোটি বাংলাদেশির কাছে এখন টাকা পাঠানোর সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছে ‘বিকাশ করা’।
দেশের যেকোনো স্থানে বিভিন্ন প্রয়োজনে টাকা পাঠানোর জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সেবা বিকাশ-এর সেন্ড মানি। খুব সাধারণ ফিচার ফোনেও *২৪৭# ডায়াল করে টাকা পাঠানোর যে সেবা শুরু হয়েছিল, তা এখন কোটি গ্রাহকের কাছে আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
ধরন: বিকাশ-এ দুই ধরনের সেন্ড মানি সুবিধা রয়েছে – সেন্ড মানি ও গ্রুপ সেন্ড মানি। সেন্ড মানি সেবার মাধ্যমে টাকা পাঠানো যায় একক গ্রাহককে, আর গ্রুপ সেন্ড মানি অপশনের মাধ্যমে একসাথে পাঠানো যায় ৭টি বিকাশ নাম্বারে। একজন গ্রাহককে টাকা পাঠাতে সেন্ড মানিতে গিয়ে নাম্বারটি লিখে বা মোবাইলের কন্টাক্ট লিস্ট থেকে নির্বাচিত করে সহজেই এই সেবা নেয়া যায়। গ্রুপ সেন্ড মানির ক্ষেত্রে যে নাম্বারগুলোতে টাকা পাঠাতে চান সেগুলোকে নির্বাচন করে একটি গ্রুপ তৈরি করে নিতে হবে। এরপর গ্রুপ নির্বাচন করে টাকা পাঠিয়ে দিলে সবগুলো নাম্বারে সমান ভাগে ভাগ হয়ে সেন্ড মানি হয়ে যাবে।
লিমিট: বিকাশের অন্যান্য সেবার মত সেন্ড মানি সেবার জন্যও বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত সীমা বা লিমিট রয়েছে। গ্রাহক বিকাশ অ্যাপের হোমস্ক্রিনের উপরে ডান দিকের বিকাশ লোগোতে ট্যাপ করে ড্রপডাউন লিস্ট থেকে দৈনিক ও মাসিক লিমিট দেখে নিতে পারবেন। আবার স্টেটমেন্ট থেকে কতটাকা সেন্ড মানি করেছেন, কতবার করেছেন আর কতবার সুযোগ আছে সে তথ্যও সংযুক্ত থাকে, প্রত্যেক গ্রাহক তার নিজস্ব খরচটা এখানে দেখতে পান অনায়াসে।
সেন্ড মানিতে শুভেচ্ছা কার্ড: কোনো বিশেষ দিবস, ঈদ-পূজা-পার্বণ, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী বা বিশেষ কোনো উপলক্ষ্য উদযাপনে প্রিয়জনকে অনেকেই অর্থ উপহার দিয়ে থাকেন। এরকম বিশেষ মুহূর্তে প্রিয়জনকে বিকাশ থেকে সেন্ড মানি করার সময় সঙ্গে যুক্ত করা যায় পছন্দ অনুযায়ী বার্তা সম্বলিত ডিজিটাল শুভেচ্ছা কার্ড।
কিউআর স্ক্যান করে সেন্ড মানি: প্রত্যেক বিকাশ গ্রাহকের রয়েছে নিজস্ব ইউনিক কিউআর কোড। বিকাশ অ্যাপ-এর উপরে বামদিকে প্রোফাইল অংশ থেকে নিজের কিউআর ডাউনলোড করে নিতে পারেন যেকোনো গ্রাহক। এই কিউআর স্ক্যান করে সহজেই সেন্ড মানি করতে পারেন অন্য বিকাশ গ্রাহকরা। কিউআর স্ক্যান করে সেন্ড মানিতে নাম্বার টাইপ করার ব্যাপার থাকে না বিধায় ভুল হওয়ার সুযোগ নেই এবং কিউআর স্ক্যান করায় সরাসরি সেন্ড মানি ইন্টারফেস চলে আসায় টাকা পাঠাতে সময়ও কম লাগে।
স্ক্রিনশটে বিশেষ সুবিধা: সেন্ড মানি করার পর অনেকেই মানি ট্রান্সফার রিসিট এর বদলে স্ক্রিনশট পাঠিয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। গ্রাহকের অর্থের নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে স্ক্রিনশট নেয়ার আগে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স যে অংশে দেখা যায় সেখানে ট্যাপ করই বিশেষ চিহ্ন দিয়ে তা ঢেকে ফেলা যায়। ফলে গ্রাহক সহজেই ব্যালেন্স গোপান রেখে স্ক্রিনশট শেয়ার করতে পারেন। আবার সেন্ড মানি সফল হওয়ার পর ট্রানজ্যাকশন স্টেটমেন্ট থেকে ট্রানজ্যাকশন নম্বরও কপি করে প্রয়োজনে যে কাউকে পাঠানোর সুবিধা পান গ্রাহক। এমনকি ঐ স্ক্রিনেই যাকে টাকা পাঠানো হয়েছে তার নাম্বারের পাশে কল করার অপশনও যুক্ত হয়েছে সম্প্রতি।
অটো সেন্ড মানি: অনেকেই বেতন পেয়ে মাসের নির্দিষ্ট তারিখে বাড়িতে বাবা বা মাকে টাকা পাঠান, কেউ হয়ত কাউকে সহায়তা করার জন্য প্রতিমাসে টাকা পাঠান। অটো-সেন্ড মানি সেবার মাধ্যমে অ্যাপ থেকে যাকে টাকা পাঠাতে চান তার নম্বর নির্বাচন করে, টাকার পরিমাণ এবং তারিখ উল্লেখ করে রাখলে নির্দিষ্ট সময়ে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স থাকা সাপেক্ষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স গ্রহীতার কাছে চলে যায়। আলাদা করে গ্রাহককে টাকা পাঠানোর কথা মনেও রাখতে হয়না আর সময় সাশ্রয় তো হয়-ই।
প্রিয় নাম্বারে সেন্ড মানি: ডাটা এবং প্রযুক্তির সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সেন্ড মানি সেবা সাশ্রয়ী করতে প্রিয় নম্বর পদ্ধতি চালু করেছে বিকাশ। একজন গ্রাহক এক মাসে সর্বোচ্চ পাঁচটি নাম্বার ‘প্রিয় নাম্বার’ হিসেবে যুক্ত করে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কোন খরচ ছাড়াই সেন্ড মানি করতে পারেন। আর মাস শেষ হলে প্রয়োজন অনুযায়ী ‘প্রিয় নাম্বার’ পরিবর্তনও করে নিতে পারেন গ্রাহক।
নন-বিকাশে সেন্ড মানি: বিকাশ অ্যাকাউন্ট নেই এমন নাম্বারেও সেন্ড মানি করার সুবিধা রয়েছে বিকাশ গ্রাহকের। সেক্ষেত্রে টাকা গ্রহণের দুইদিনের মধ্যে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে পারেন গ্রহীতা। আবার নন-বিকাশ নাস্বারে টাকা পাঠানোর পর প্রেরক প্রয়োজনে সেন্ড মানিতে ঢুকে বাতিল/ক্যান্সেল অপশন ক্লিক করে সাথে সাথেই সে টাকা ফেরত নিয়ে আসতে পারেন। উল্লেখ্য, টাকা পাঠানোর পর গ্রহীতা অ্যাকাউন্ট না খুললে তিন কর্মদিবস পর সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রেরকের বিকাশ অ্যাকাউন্টে ফেরত চলে যায়।
ভুল নাম্বারে টাকা চলে গেলে করণীয়: ডিজিট ভুল করে বা অন্য কোনো ভাবে ভুল নাম্বারে টাকা পাঠানোর ঝামেলা থেকে গ্রাহককে সুরক্ষিত রাখতে বিকাশ অ্যাপ-এর সেন্ড মানিতে নতুন একটি অপশন যুক্ত করেছে বিকাশ। টাকা পাঠানোর ঠিক আগের ধাপে যে নাম্বারে সেন্ড মানি করতে চান সে নাম্বারটি সঠিক কি না তা ‘অনুগ্রহ করে আবার চেক করুন’- এমন একটি বার্তা দেখতে পান গ্রাহক। এখানে নাম্বারটি এডিট করার ব্যবস্থাও থাকে। গ্রাহক নাম্বার নিশ্চিত করলেই কেবল পরের ধাপে যাওয়ার সুযোগ পান। আবার ভুল নাম্বারে টাকা পাঠানো এড়াতে টাকা পাঠানোর আগে প্রেরকের সাথে কথা বলে নাম্বারটি নিশ্চিত হয়ে নেয়া যেতে পারে। যে নাম্বারে টাকা পাঠানো হচ্ছে তা সেভ করে নিয়ে টাকা পাঠালেও ভুল হওয়ার সম্ভবনা কমে যায়।
অর্থসংবাদ/কাফি