জাতীয়
গুম অবস্থায় ভারতের কারাগারে যাওয়ার লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন সুখরঞ্জন
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া সুখরঞ্জন বালি কীভাবে ভারতের কারাগারে পৌঁছেন তার এক লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
ঘটনাটি ঘটে ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর সকালে। অপহৃত হওয়ার পর তার সঙ্গে কী কী ঘটেছে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপের সময় তার বিশদ বর্ণনা তুলে ধরেন সুখরঞ্জন বালি।
সুখরঞ্জন বালি বলেন, ২০১২ সালের নভেম্বর মাসের ৫ তারিখে আমি ঢাকায় কোর্টে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে দুইজন ব্যারিস্টার ও দুইজন উকিল ছিলেন। আমাদের গাড়ি দেখে কোর্টের গেটে আটকে ফেলা হয়, তখন আমার সঙ্গে থাকা আইনজীবীদের সঙ্গে গেটের লোকদের তর্ক-বিতর্ক চলছিল। আমি গাড়িতে দু’জন ব্যারিস্টারের মাঝে বসা ছিলাম, এ সময় কিছু সাদা পোশাকের লোক আমাকে নামিয়ে টানাটানি করতে লাগলো।
‘তারা বলছিল, যার জন্য গাড়ি থামানো হয়েছে সেই লোক উনি। একেই আমাদের দরকার। সেই লোকরা আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে টেনে হিঁচড়ে পাঁচ-ছয় হাত দূরে অপর একটি গাড়িতে তুলে আমার চোখ বেঁধে ফেলে। একটু পরে গাড়িটি ছেড়ে দেওয়া হয়।’
‘প্রায় আধা ঘণ্টা গাড়িটি চালানোর পরে সাদা পোশাকের লোকেরা আমাকে হাঁটাতে থাকে। এ সময় আমি নিচের দিকে নামার মতন অনুভব করি। কিছুদূর হাঁটিয়ে একটা দরজা খুলে অন্ধকার জায়গায় আমাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কোনো আলো সেখানে ছিল না, অথচ তখন সকাল দশটা-এগারোটা বাজে।’
সুখরঞ্জন বালি বলেন, আমাকে একটি খালি রুমে আটকে দেওয়া হয়। বাইরে কোনো শব্দ ছিল না ঘরে কোনো জানালা বা কোনো ফাঁকা ছিল না, যা দিয়ে কোনোরকম আলো ভেতরে আসতে পারে। তখন আমাকে মাঝে মাঝে অল্প করে খাবার দেওয়া হতো। সেখানে কিছু লোক ছিল যারা আমাকে খাবার দিত বা পাহারায় আসত তারা নীল রংয়ের পোশাক পরা থাকতো।’
তিনি বলেন, এর দুদিন পর আমাকে সেই রুম থেকে বের করে অন্য একটি রুমে নেয়া হয়। সেখানে আমাকে নিয়ে তারা জোর করে সাঈদী হুজুরের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তি নিতে চায়। সে রুমে অনেকগুলো ক্যামেরা লাগানো ছিল আমি দেখতে পাই। আমার ভাইয়ের হত্যায় সাঈদী হুজুর জড়িত কি-না জানতে চাইলে আমি যখন অস্বীকার করি এবং বলি যে, যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে তাদের আমি চিনি। তাদের বিরুদ্ধে আমি সাক্ষ্য দিতে পারবো, কিন্তু তারা বারবার আমাকে সাঈদী হুজুরের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে বলে এবং একপর্যায়ে তারা আমাকে মারধরসহ কারেন্টের শক দেয়, নির্যাতন করে।
সুখরঞ্জন বালি বলেন, তারা আমাকে একপর্যায়ে টাকা দিয়ে লোভ দেখানোর চেষ্টা করে এরপরও রাজি না হলে তারা অমানবিক নির্যাতন চালায়। সেখানে টানা কয়েকদিন ছিলাম। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতো। তখন তিন-চারজন লোক জিজ্ঞাসাবাদ করতো।’
সুখরঞ্জন বালি বলেন, তাদের অত্যাচারে আমি অসুস্থ হয়ে যাই। কয়েকদিন সেখানে থাকার পর তারা একদিন সকাল সাতটা কী আটটায় দিকে আমাকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তোলে। আয়নাঘর থেকে যখন গাড়িতে ওঠানো হচ্ছিল তখন আমি ভয়ে ভয়ে জানতে চাই আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? জবাবে তারা বলেন, আমরা তোকে তোর দেশে নিয়ে যাবো। বল কোথায় নামিয়ে দিলে তুই তোর বাড়ি চিনে যেতে পারবি। তখন বলি, বাগেরহাটে নামিয়ে দিলে আমি আমার বাড়িতে যেতে পারবো। সারাদিন ধরে গাড়ি চালানোর পর মাঝে একবার ফেরিতে ওঠানো ও নামানো হয় সেটা আমি অনুভব করতে পারি।
তিনি বলেন, একপর্যায়ে আবার গাড়ি চলতে শুরু করে। দীর্ঘক্ষণ চালানোর পর দুইজন লোক গাড়িতে ওঠে। এর কিছুক্ষণ পর দশ-বারো মিনিটের মতো হবে গাড়িটি চলতে চলতে থেমে যায়। এ সময় গাড়ি থেকে আমাকে নামানো হয় ও চোখ খুলে আমাকে সামনে এগোতে বলা হয়।
সুখরঞ্জন বালি বলেন, জায়গাটা বাগেরহাট কী-না সেটা বুঝতে চেষ্টা করি। আমি বুঝতে পারি যে, ওটা বাগেরহাট নয় এবং স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি সামনে বিএসএফ, এটা বর্ডার এলাকা। সেখানে যারা আমায় নিয়েছে কান্না করতে করতে আমি বিএসএফ-এর হাতে তুলে না দিতে তাদের অনুরোধ করি। আমি বলি এদের হাতে তুলে দিয়েন না। প্রয়োজনে আমাকে মেরে ফেলেন। এ কথা বলতে বলতে আমি মাটিতে পড়ে যাই।
‘আমাকে নেয়া গাড়ির লোকেরা জোর করে বিএসএফ-এর কাছে দিয়ে আসে আমায়। এ সময় আমি দেখতে পাই গাড়িতে ৬-৭ জন সবুজ পোশাকের পুলিশের সাথে দু’জন বিজিবি সদস্য আছেন। তখন আমি বুঝতে পারি গাড়ি থামিয়ে যাদের নেয়া হয় তারাই বিজিবি।’
সুখরঞ্জন বলেন, বাংলাদেশের একজন নিরপরাধ নাগরিককে রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আরেকটি দেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে তুলে দেয় কেমন করে?
কান্না জড়িত কন্ঠে সুখরঞ্জন বালি বলেন, আমি যেতে না চাইলে জোর করে তারা আমাকে ধরে বিএসএফ সদস্যদের হাতে তুলে দেয়। বিএসএফ কিছু জিজ্ঞেস না করেই আমাকে প্রচণ্ড মারপিট শুরু করে। বিএসএফ হিন্দিতে কথা বলছিল এবং আমি আমাকে না মারার জন্য বাংলায় বোঝাতে চেষ্টা করি। আমার কোনো কথা তারা বুঝতে পেরেছিল কি-না আমি আজও বুঝিনি। একপর্যায়ে বিএসএফ মোটা দড়ি দিয়ে পেছন দিক দিয়ে আমার হাত বেঁধে ফেলে। হাত বাধার সেই দাগ এখনো স্পষ্ট। সেটা তিনি প্রতিবেদককে দেখান।
সুখরঞ্জন বালি তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনায় বলেন, মোটা লাঠি দিয়ে বিএসএফ তাকে মারতে থাকে। এতে তিনি ডান হাতের কনুইতে প্রচণ্ড আঘাত পান। এখনো ডান হাত দিয়ে ভালোভাবে তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। বিএসএফ-এর মারের পরে তিনি প্রায় তিন ঘণ্টা বেহুঁশ ছিলেন।
সুখরঞ্জন বালি বলেন, আমি বিএসএফ-কে বলতে থাকি যে আমি ইচ্ছা করে এখানে আসিনি কিন্তু আমার কথা বুঝতে না পারায় তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করে।
আমাকে মারধরের আর কোনো কারণ বুঝিনি। বিএসএফ-এর ক্যাম্পটির বিষয়ে জানতে পারি এটি বৈকারী বাজার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-চব্বিশ পরগণা জেলার স্বরূপনগর থানা এলাকা। এরপর বশিরহাট জেলে আমাকে বাইশ দিন রাখা হয়। সেখানে একদিন আমাকে কোর্টেও নেয়া হয়। এরপর আসা হয় দমদম জেলে।
সুখরঞ্জন বলেন, দমদম জেলে থাকাকালীন সেখানে এক বন্দীকে (সম্পর্কে আমার ভাগনে হয়) আমি দেখি। সে আমাকে চিনতে পারেনি। আমি সুযোগ বুঝে তাকে আমার পরিচয় দিলে সে আমায় জড়িয়ে ধরে বলে ‘মামা তুমি বেঁচে আছ। আমরাতো জানি তুমি মারা গেছ।’ সে ভাগনে কারামুক্তির পর আমার বাড়িতে ও নিকটাত্মীয়দের আমরা বেঁচে থাকা ও ভারতের দমদম জেলে বন্দী থাকার কথা জানায়।
সুখরঞ্জন বলেন, আমার বাড়ির লোকেরা ভারতে প্রশাসন ও মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করলে মানবাধিকার সংস্থা সহায়তায় সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে ৫ বছর জেল খেটে আমি মুক্ত হয়ে দেশে ফেরত আসতে পারি।
তিনি জানান, দমদমে থাকাকালীন বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা আমার ইন্টারভিউ নিয়েছিল।
সুখরঞ্জন বালি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় কারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে সেই দৃশ্য আমি আমার বাড়ির পাশে টয়লেটের ভেতর লুকিয়ে থেকে নিজ চোখে দেখেছি। সেখানে সাঈদী হুজুরকে আমি দেখিনি। তখন এ নামে কাউকে আমি চিনতামও না। উনি আমাদের এলাকা থেকে নির্বাচিত দুই দু’বারের এমপি ছিলেন। তখন তার সম্পর্কে জানি ও চিনতে পারি। সাঈদী হুজুর যখন এমপি ছিলেন তখন আমাদের মনে হতো যেন আমরা মায়ের কোলে আছি। হুজুর নিরপরাধ নির্দোষ তার বিরুদ্ধে শত নির্যাতন সহ্য করেও আমি সাক্ষ্য দেইনি। আমাকে ক্ষুদিরামের মতো ফাঁসি দিলেও আমি প্রস্তুত ছিলাম।
তিনি বলেন, ভারত থেকে দেশে ফিরেও আমি নিজ এলাকায় পিরোজপুরের ইন্দুরকানিতে যেতে পারিনি। নিরাপত্তার কারণে বাগেরহাটে আত্মীয় ও পরিচিতিদের সহায়তায় তাদের আশ্রয়ে ছিলাম।
সুখরঞ্জন বালি বলেন, পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানি (সাবেক জিয়ানগর) উপজেলার পাড়েরহাট ইউনিয়নের উমেদপুর গ্রামে আমার বাড়ি।
আমি পেশায় কাঠমিস্ত্রি। আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। আমার ছেলেও কাঠমিস্ত্রির কাজ করতো। তাতে যে আয় রোজগার ছিল তাতে আমি পরিবার নিয়ে ভালোই চলতাম।
সাঈদী হুজুরের মামলায় সাক্ষ্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে আমাকে অপহরণ করে গুম করে নির্যাতন নিপীড়ন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং বিজিবি সহায়তায় বিএসএফের হাতে তুলে দিয়ে টানা ৫ বছর কারাবন্দী করে অবর্ণনীয় সাজা ভোগে বাধ্য করা হয়। অনেক ভয় আতঙ্কের পরও সাঈদী হুজুরের মৃত্যুর পর তার জানাজায় উপস্থিত হয়েছিলাম। তারপর আবারো আমি নিরাপত্তার কারণে আড়ালে চলে যাই।
তিনি বলেন, তার ওপর ঘটে যাওয়া এতো ঘটনার পর তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে স্বাভাবিক হতে পারেননি। নিজ পেশায়ও ফিরে যেতে পারেননি। ফলে অর্থ কষ্টে ও অভাবে দিন কাটছে তার ও পরিবারের।
সুখরঞ্জন বালি রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় অপহরণ, গুম এবং ৫ বছর কারাবন্দি থাকাসহ তার সাথে ঘটে যাওয়া সকল অন্যায়ের বিচার চান তিনি। ক্ষতিপূরণ চান রাষ্ট্রের কাছে।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী শাসনামলে গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৭ আগস্ট গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গঠন করে। কমিশনের প্রধান করা হয় বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে। কমিশন গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গুমের ঘটনায় কমিশনে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬৭৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৭৫৮ জনের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। দেশে গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে কমিশন।
উল্লেখ্য, সুখরঞ্জন বালি পশ্চিমবঙ্গের এক কারাগারে আছেন, এ খবর প্রথম প্রকাশ করে ঢাকার একটি ইংরেজি পত্রিকা। সুখরঞ্জন বালি বাংলাদেশে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধের মামলায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন। তিনি ২০১২ সালপর ৫ নভেম্বর ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চত্বর থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর আইনজীবীরা তখন অভিযোগ করেছিলেন যে তাকে সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন অপহরণ করে নিয়ে গেছে।
সুখরঞ্জন বালি ভারতের কারাগারে বন্দী থাকার বিষয়ে তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য, কারামুক্ত হওয়ার পর সুখরঞ্জন বালির বক্তব্য এবং গুম কমিশনের ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনের তথ্য একই চিত্র ফুটে উঠেছে। সূত্র: বাসস
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
বিমানের ফ্লাইটে বোমা হামলার হুমকি, শাহজালালে সতর্কতা
ইতালির রোম থেকে ঢাকাগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বোমা হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে আতঙ্কের মধ্যেই ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে ফ্লাইটটি। পরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে বিমান বন্দরে।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকালে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম।
জানা গেছে, বিজি-৩৫৬ নম্বর ফ্লাইটটি রোম থেকে ঢাকায় আসার পথে বিমান থেকে জানানো হয়, ওই বিমানের কেউ বা কোনো যাত্রী বোমা বিস্ফোরণের হুমকি দিয়েছেন। এ অবস্থায় সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
বিমানের ফ্লাইটটি অবতরণের পর এটির চারপাশে নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়া হয়। ওই ফ্লাইট ঘিরে অবস্থান নেয় শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে ৩০ বছর করতে রাজি চীন
চীনের কাছ থেকে অগ্রাধিকারমূলক ক্রেতা-ঋণ এবং সরকারি রেয়াত-ঋণ নামে দুই ধরনের ঋণ নিয়ে থাকে বাংলাদেশ। ওই ঋণের সুদের হার ২-৩ শতাংশ এবং ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ২০ বছর। এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ২০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করতে সম্মত হয়েছে চীন।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বেইজিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-য়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এই সম্মতি পাওয়া গেছে।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র আমন্ত্রণে দেশটিতে সফরে গেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই তার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। মঙ্গলবার তার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়াতে নীতিগতভাবে সম্মত হন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মঙ্গলবার বেইজিংয়ের দিয়াওইউতাই স্টেট গেস্ট হাউসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে তৌহিদ হোসেন চীনকে অগ্রাধিকারমূলক ঋণ ও সরকারি ছাড়কৃত ঋণের জন্য সুদের হার দুই-তিন শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশ করার অনুরোধ জানান। সেইসঙ্গে কমিটমেন্ট ফি (অঙ্গীকার মাশুল) মওকুফ করতে ও ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ২০ বছর থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত বাড়ানোরও অনুরোধ করেন।
এ সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুদের হার কমানোর অনুরোধ বিবেচনা করবেন বলে আশ্বাস দেন। পাশাপাশি ২০২৬ সালে এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের পরও বাংলাদেশি পণ্যের ডিএফকিউএফ (শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত মার্কেট অ্যাক্সেস) প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন তিনি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের অনুরোধে পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনের কুনমিংয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের উন্নতমানের চিকিৎসার জন্য তিন থেকে চারটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্ধারণের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে শুভেচ্ছা নিদর্শন হিসেবে ঢাকায় চীনের একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবকেও স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
শিক্ষা, রেলওয়ে, কৃষি, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, পশুসম্পদ, মৎস্য, জাহাজ ভাঙা, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং সবুজ অর্থনীতির মতো খাতে আর্থিক, প্রযুক্তিগত ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশের অনুরোধের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন চীনের মন্ত্রী।
বৈঠকে উভয় দেশ ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। আলোচনা শুরুর আগে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তৌহিদ হোসেনকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
বৈঠকে উভয়পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ ও সমৃদ্ধির জন্য সহযোগিতা জোরদারের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন।
বৈঠকে ওয়াও ই বলেন, বাংলাদেশের জনগণ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি দেশের সভ্যতা ও ঐক্য বজায় রাখার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেছেন এবং তার সরকার বাংলাদেশের জন্য অনেক বাস্তবিক কাজ করেছে।
তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এখানকার স্থিতিশীলতা, সংস্কার, গণতন্ত্রে উত্তরণ ও উন্নয়ন উদ্যোগকে তার দেশ সমর্থন করে।
চীন তাদের নিজেদের উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেরও অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেখতে চায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সফরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পাশাপাশি চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও এবং চীনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থার (সিডকা) চেয়ারম্যান লাও ঝাওহুইয়ের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি।
পরে বেইজিং থেকে সাংহাই যাবেন। সেখানে সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে (এসআইআইএস) একটি আলোচনায় অংশ নেবেন তৌহিদ হোসেন। পাশাপাশি উপদেষ্টা সাংহাই চেম্বারের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। পরে বৈদ্যুতিক গাড়ি, রোবোটিক্স ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ক তিনটি কারখানা পরিদর্শনে যাবেন।
আগামী ২৪ জানুয়ারি উপদেষ্টার চীন সফর শেষ হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে ইউএনএইচসিআর
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে ইউএনএইচসিআর।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাতকালে এ কথা বলেন গ্র্যান্ডি। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গত সোমবার (২০ জানুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের দাভোসে শুরু হয় পাঁচদিনব্যাপী ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন। গুরুত্বপূর্ণ এই সভায় যোগ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার মূল সম্মেলনের ফাঁকে কয়েকটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি মতে, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআই-এর প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডির সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা বলেন। সংকটের সমাধাণের জন্য, বিশেষ করে চলতি বছরের শেষের দিকে এ বিষয়ে একটি বৈশ্বিক সম্মেলন আয়োজনে গ্রান্ডির সমর্থন চান তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, ‘এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ জবাবে শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, ‘আমরা আপনাকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
বাংলাদেশে এখন রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে আট লাখ রোহিঙ্গা প্রবেশ করে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী কয়েক মাসে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিধনযজ্ঞ ও গণহত্যার মুখে। সম্প্রতি রাখাইন মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাতের জেরে আরও প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে।
ফিলিপ্পো গ্রান্ডির সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস বলেন, এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার আগমন বাংলাদেশের ওপর আরও বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সংকটের ওপর বিশ্বব্যাপী মনোযোগ ফিরিয়ে আনার আহ্বানও জানান তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। তারা আরও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে।’
সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল নির্মাণের জন্য উন্নত উপকরণ ব্যবহার করার অনুমতি দেয়ার জন্য গ্র্যান্ডি প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান। পূর্বে রোহিঙ্গাদের কেবল বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে ঘর তৈরি করার অনুমতি ছিল। বৈঠকে তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মানবিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন। সেখানে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
এর আগে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলজের সঙ্গে বৈঠকেও রোহিঙ্গা ইস্যু তোলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য সেফ জোন তৈরিতে জার্মানির সমর্থন চান তিনি। এদিন পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাবেরসঙ্গে বৈঠক করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
জার্মান চ্যান্সেলরের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সুইজারল্যান্ডে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে এই সাইডলাইন বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে, সোমবার (২০ জানুয়ারি) রাতে সুইজারল্যান্ডের ডাভোসের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন ড. ইউনূস। পরে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে তিনি সুইজারল্যান্ডে পৌঁছান। এ সময় সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম তাকে স্বাগত জানান।
চার দিনের সরকারি সফর শেষে আগামী ২৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প উচ্ছেদের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান
ঢাকার সাভার উপজেলায় মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প উচ্ছেদের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন প্লট মালিকসহ সেখানে বসবাসকারীরা। একই সঙ্গে এসব ব্যক্তিমালিকানাধীন বসতভিটা হতে উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (রাজউক) স্মারকলিপি প্রদান করে মধুমতি মডেল টাউন হাউজিং সোসাইটি নামে একটি সংগঠন।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রাজউক ভবনের সামনে জড়ো হন মধুমতি মডেল টাউনের প্লটের মালিক ও সেখানে বসবাসকারীরা।
রাজউকে দেওয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ২০০১ সাল থেকে রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, খাজনা পরিশোধ ও বাড়িঘর করে এখানে বসবাস করে আসছেন সেখানকার বাসিন্দারা। সকল রেকর্ড পত্র- সি.এস/এস.এ ও আরএস পর্চাসমূহে সুস্পষ্টভাবে জমিগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন নাল জমি হিসেবে বর্ণিত আছে। মেট্রো মেকার্স কর্তৃক ব্যাপক ধারাবাহিক প্রচারণায় আকৃষ্ট হয়ে মধুমতি মডেল টাউন প্লট ক্রয় করেন তারা। ঐ সময় কোন সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রকল্প নিয়ে কোনো আপত্তি তোলা হয়নি। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ২০০৪ সালে বন্যা প্রবাহ অঞ্চলে অবস্থিত দাবি করে প্রকল্পটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট পিটিশন দায়ের করে। আদালত ২০০৫ সালের ২৭ জুলাই প্রকল্পটি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়। সেই সাথে প্রকল্প বৈধ হওয়ার রাস্তা খোলা আছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এতে জানানো হয়, নির্দেশনার প্রেক্ষিতে একটি হাউজিং প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় ৯টির মধ্যে সরকারের ৮টি বিভাগ যথা- পানি উন্নয়ন বোর্ড, ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ, তিতাস গ্যাস এন্ড ট্রান্সমিশন, ঢাকা ওয়াসা, পল্লী বিদ্যুৎ, টি এন্ড টি বোর্ড, ঢাকা সিটি করপোরেশন, ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ড (ডিটিসিবি) প্রকল্প অনুমোদনের জন্য মেট্রো মেকার্সকে ছাড়পত্র দিয়েছিল। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট ২০১২ সালের ৭ আগষ্ট এক উদ্ভট, ফরমায়েশি ও গণবিরোধী রায় প্রদান করে। রায়ে মেট্রো মেকার্সকে বলা হয় তাদের খরচে প্রকল্প এলাকার ভরাটকৃত মাটি সরিয়ে এটিকে আবার ধানক্ষেত বানাতে। আর প্লট ক্রেতাদের তাদের মোট প্রদেয় টাকার দ্বিগুণ এবং রেজিস্ট্রেশন বাবদ সকল খরচ প্রদান করে ৬ মাসের মধ্যে প্রকল্পটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য মেট্রো মেকার্সকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে মেট্রো মেকার্স ও প্লট মালিকদের পক্ষ হতে রিভিউ পিটিশন করা হয়। ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে সব রিভিউ পিটিশন খারিজ হওয়ার পর প্রায় ৬ বছর অতিক্রান্ত হলেও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মেট্রো মেকার্স কর্তৃপক্ষ থেকে আমরা কোন টাকা পাই নাই। বর্তমানে এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ খারিজের রায়ের বিরুদ্ধে মডিফিকেশনের দরখাস্ত শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, প্রকল্পে বর্তমানে ৮০০’র বেশি আবাসিক ভবনে প্রায় ৫০ হাজার লোক বসবাস করেন। প্রকল্পের বাণিজ্যিক জোনে রয়েছে ১০০টির অধিক পোলট্রি ও ডেইরি ফার্ম, ৮টি রিসোর্ট, ৩টি মসজিদ, ৪টি মাদ্রাসা, স্কুল, প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রসহ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, যেখানে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। এখানে রয়েছে প্রায় ৮/১০ লক্ষাধিক বনজ, ফলজ ও ঔষধি গাছপালা, যা প্রকল্পটিকে একটি সবুজ নগরীতে পরিণত করেছে এবং পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। গত ২৪ বছরে এখানে ভূপ্রকৃতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে মধুমতি মডেল টাউনের চারদিক সরকারি বেসরকারি স্থাপনা বেষ্টিত একটি স্থলভূমি। প্রকল্পের অতি সন্নিকটে তথাকথিত ফ্লাডজোনে ডিএনসিসি কর্তৃক জাপান সরকারের সহায়তায় গার্বেজ রিসাইক্লিং সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। প্রকল্পের উত্তরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের কোল ঘেষে গড়ে উঠেছে পেট্রোল/গ্যাস ফিলিং ষ্টেশন, আবাসিক এলাকা ও নানা স্থাপনা। প্রকল্পের পূর্বে রয়েছে বিদ্যুতের সাব-স্টেশন ও তিতাস গ্যাসের স্থাপনা। এইভাবে চারদিকে সরকারি, বাণিজ্যিক ও আবাসন বেষ্টিত মধুমতি মডেল টাউনকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে বন্যা প্রবাহ এলাকা বা জলাধার আখ্যা দেওয়া বা বানানো নিতান্তই অবাস্তব ও বৈষম্যমূলক। তাছাড়া, ঢাকা শহরের আশেপাশে বাস্তবায়ন করা প্রায় সব হাউজিং প্রজেক্ট এক সময় বিলামালিয়া ও বলিয়ারপুর মৌজার অবস্থায় ছিল। সে বিবেচনায় আদালতের রায় অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক।
যে কোনো রকম উচ্ছেদ পরিকল্পনা থেকে বিরত থাকা সহ সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষা ও শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করায় বিঘ্ন ঘটানো থেকে নিবৃত থাকা এবং বাস্তবতার নিরিখে মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প এলাকাকে (ডেটাইলেড এরিয়া প্ল্যান) এ নগর আবাসিক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
কাফি