ক্যাটাগরি: আন্তর্জাতিক

টানা দুই মাস ধরে শূন্যের নিচে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি

শূন্যের নিচে নেমে এসেছে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতির হার। গতমাসে দেশটির মূল্যস্ফীতির হার মাইনাস ১ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এর আগের মাস অর্থাৎ অক্টোবরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল মাইনাস শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। এর ফলে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার পথে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে দেশটি।

নভেম্বর মাসে শ্রীলঙ্কার খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল শূন্য শতাংশ, অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় খাদ্যের দাম বাড়েনি। অক্টোবর মাসে যা ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল মাইনাস ৩ দশমিক ১ শতাংশ, আগের মাস অক্টোবরে যা ছিল মাইনাস ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, এই সময়ে শ্রীলঙ্কার মুদ্রা রুপির দরবৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমানো হয়েছে, তার হাত ধরে মূল্যস্ফীতির এই অধোগতি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০২৫ সালের প্রথম দুই মাসেও মূল্যস্ফীতির হার ঋণাত্মক থাকতে পারে। এরপর গাড়ি আমদানি শুরু হলে বিদেশি মুদ্রার চাহিদা বাড়তে পারে। তখন মূল্যস্ফীতির হার আবার শূন্যের ওপরে যাবে, যদিও তা ৪ শতাংশের ওপরে যাবে না।

২০২২ সালে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে দেউলিয়া হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। এরপর ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২৯০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে দেশটি।

রয়টার্সের সংবাদে বিশ্বব্যাংকের সূত্রে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হতে পারে ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশ। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী বছর বৃদ্ধির হার আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। টানা তিন বছর ধরে মারাত্মক বিপর্যয়ের পর ২০২৪ সালের শেষের দিক থেকে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে উন্নতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে বলে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি ওই পূর্বাভাসও হার মানিয়েছে।

২০২২ সালে ঋণখেলাপি হয়ে যাওয়ার পর শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে জোর দেয়। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, তার ফল পেতে শুরু করেছে দেশটি। টানা পাঁচ প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার পর ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। তখন প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৬ শতাংশ। সে বছরের শেষ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। টানা দুই বছর অর্থনৈতিক সংকোচনের পর চলতি বছর সামগ্রিকভাবে দেশটি প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরবে বলে আশা করছেন অর্থনীতিবিদেরা।

ইতিমধ্যে বেশ কিছু কল্যাণকর প্রকল্প গ্রহণ করে দেশের সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছে শ্রীলঙ্কার বামপন্থী সরকার। কাঠামোগত সংস্কার ও কল্যাণকর প্রকল্প প্রণয়নের পাশাপাশি শিল্পায়নেও জোর দিয়েছে অনূঢ়া কুমার দিশানায়েকের নেতৃত্বাধীন সরকার। দেশটির ছোট–বড় উদ্যোগকে ঋণের দায়মুক্ত করতে সরকার বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের উৎপাদন ও নতুন উদ্যোগে আগ্রহী করতে সরকারের আর্থিক সহযোগিতা বাড়ানো হয়েছে।

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কয়েক দফায় শ্রীলঙ্কায় গাড়ি ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের আমদানি আবার শুরু হবে। এতে বেশ কিছু শিল্পের পুনরায় চাঙা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই শিল্পে বিনিয়োগের জন্য ইতিমধ্যে ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার যৌথ বাণিজ্যিক ফোরাম বিশেষ উৎসাহ দেখিয়েছে। বামপন্থীদের এই শিল্পায়ননীতির অনেকটাই স্বনির্ভরতার ধাঁচে গড়ে তোলা হচ্ছে। এই সমস্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারে তেমন টানও পড়বে না বলে মনে করা হচ্ছে।

কাফি

শেয়ার করুন:-
শেয়ার