রাষ্ট্রায়ত্ত মার্চেন্ট ব্যাংক ‘জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের বর্তমান সিইও (চিফ এক্সিকিউটিভ) শহীদুল হকের নিয়োগের বিষয়ে অনিয়ম ও পক্ষপতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। ফলে এ বিষয়ে তদন্ত করছে জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জানা গেছে, শর্ত ভেঙে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি জেসিআইএলের সিইও নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানে কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা।
সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে শহীদুল হকের নিয়োগে অনিয়ম ও পক্ষপতিত্বের বিষয়ে জনতা ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
জানা গেছে, বিধি লঙ্ঘন করে প্রায় ৪ বছরে আগে ‘জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের বর্তমান সিই (চিফ এক্সিকিউটিভ) শহীদুল হককে নিয়োগ দেওয়া হয়। স্বজনপ্রীতি করে সিইও নিয়োগ দিতে বিধিবিধান এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত তোয়াক্কা করেননি জনতা ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. এসএম মাহফুজুর রহমান।
এবিষয়ে শহীদুল হকের মন্তব্য জানতে সোমবার তাঁর ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার (ফোন কল রিসিভ করেননি) যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি। পরবর্তীতে তাঁর ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি। ফলে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাষ্ট্রায়ত্ব জনতা ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি হচ্ছে জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (জেসিআইএল)। এই কোম্পানির সকল স্তরের লোকবল নিয়োগ কর্তৃপক্ষ হচ্ছে জনতা ব্যাংকের পর্ষদ। জনতা ব্যাংকের বিধিবিধানে স্বাভাবিক বা চুক্তিভিত্তিক যেকোনো নিয়োগের ক্ষেত্রে তৃতীয় শ্রেণির ডিগ্রিপ্রাপ্ত গ্রহণযোগ্য নয়।
জানা গেছে, জেসিআইএলের সিই (চিফ এক্সিকিউটিভ) পদে নিয়োগের জন্য ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। প্রার্থীর যোগ্যতা হিসাবে চাওয়া হয় ৩-৪ বছরের স্নাতকসহ ইকনোমিক/ফাইন্যান্স/ব্যাংকিং/অ্যাকাউন্টিং/ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর এবং সঙ্গে এফসিএ/এফসিএমএ/এফসিসিএ।
এছাড়া অন্যান্য শর্তের মধ্যে পেশাগত অভিজ্ঞতা সর্বনিম্ন ১৫ বছর, এর মধ্যে মার্চেন্ট ব্যাংকের অভিজ্ঞতা ৫ বছর এবং বয়স হতে হবে ৪৫-৫৫ বছরের মধ্যে। এছাড়া নিয়োগবিধি অনুযায়ী কোনো পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণি থাকলে তা অযোগ্যতা হিসাবে বিবেচিত হবে।
জানা গেছে, জনতা ব্যাংকের ২০২০ সালের ৬৩৭তম পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেসিআইএলের সিইও নিয়োগের জন্য শহীদুল হকসহ তিনজন প্রার্থীকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকেন তৎকালীন নিয়োগসংক্রান্ত কমিটি। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. এসএম মাহফুজুর রহমান। কমিটির সদস্য ছিলেন- ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য অজিত কুমার পাল (পরিচালক), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক স্বপন কুমার বালা, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি। আর কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন জনতা ব্যাংকের সাবেক এমডি আব্দুস ছালাম আজাদ।
জানা গেছে, পর্ষদের নিয়োগসংক্রান্ত সিদ্ধান্তের নথি কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করা হয়। সেখানে প্রথম সুপারিশ ছিল মোহাম্মদ আলী নামের এক প্রার্থী। তার প্রসঙ্গে বলা হয় ‘বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী-পেশাগত যোগ্যতা, বয়স ও অভিজ্ঞতা যথাযথ রয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকের অভিজ্ঞতাও যথাযথ রয়েছে। তবে বিকম (সম্মান) এর স্থলে বিকম (পাশ)। দ্বিতীয় প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া প্রসঙ্গে সুপারিশে উল্লেখ করা হয় ‘বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী-পেশাগত যোগ্যতা, বয়স ও অভিজ্ঞতা যথাযথ রয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকের অভিজ্ঞতাও যথাযথ রয়েছে। তবে স্নাতকত্তোর ডিগ্রি নেই এবং বিকম (সম্মান) এর স্থলে বিকম (পাশ)। আর সর্বশেষ সুপারিশ করা হয়েছিল শহীদুল হককে। সেখানে বলা হয়, ‘বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পেশাগত যোগ্যতা যথাযথ রয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। তবে বয়স কম ও মোট ১৫ বছরের অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে। বিকম (সম্মান) এর স্থলে বিকম (পাশ) এবং বিকম (পাশ) এর তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জনতা ব্যাংকের বিধান অনুযায়ী তিনজন প্রার্থীর মধ্যে কেউ নিয়োগের যোগ্য নন। অন্যদিকে তিনজন প্রার্থীর মধ্যে তুলনামূলক কমযোগ্য প্রার্থী ছিলেন বর্তমান সিই শহীদুল হক। কিন্তু সব বিধান ভেঙে সিইও পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল শহীদুল হককে।