মোফাজ্জল হোসেনের কবিতা ‘গ্রামেই ফিরে যাব’

মোফাজ্জল হোসেনের কবিতা ‘গ্রামেই ফিরে যাব’
শহরের শক্ত ইটের দেয়াল;
মানুষের পাষাণ মন,
দূষিত নিঃশ্বাস গ্রহণ,
মানুষের মেকী বন্ধু সাজা,
টাকার ওজনে মানুষের মূল্যায়ন,
কৃত্রিম ঝাড়বাতিতে; অামি মোহিত হই না।

এখানে পার্লারে সাজানো রমণী,
অথবা কৃত্রিম ব্যবহার অামার মন কাড়েনি।

অামার গ্রাম কত সুন্দর –
শান্তির নিঃশ্বাস,
ধান ক্ষেত, পাল তোলা নৌকা, শাড়ি পরা নারী;
গ্রাম্য লোকের বিনীত কুশল বিনিময়,
সন্ধ্যায় বাজারে মানুষের ভীড়,
বিয়ে বাড়িতে হলুদের মাখামাখি,
বৃষ্টির দিনে রাস্তায় গড়াগড়ি;
কি অপরুপ সৌন্দর্যতা অামার গ্রামের,
গ্রাম টানে অামায়;
এতো সম্পর্ক মায়া জড়ানো প্রেমের।

শহরের দামী হোটেলের খাবার;
অার অামার মায়ের হাতের রান্না, কত পার্থক্য-
মায়ের হাতের খেসারী ডাল অথবা ডিম ভুনা,
সরিষা তেলে ভাজা ইলিশ , কাঁচা মরিচের বেগুন ভর্তা,
টাকি মাছের ঝোল, হাতে বানানো শুটকি ভর্তা,
গরম ভাতের সাথে শুকনো মরিচের লাউ পাতার শাক,
অথবা কুঁচি কুঁচি পেঁয়াজে গরুর কালা ভুনা,
বলে হবে না শেষ।

শীতে কলাপিঠা,পাটিসাপটা কিংবা ভাঁপা,
অারও কত কি,
রৌদ্রে বসে খাওয়া গুড়- মুড়ি,
তালের রস অথবা টমেটো চুরি।
মেলায় বাউল গান অথবা চর্কির ঘূর্ণি,
মনে পড়ে বারবার-
পানি গোল্লার অাবদার,
পেট ভরে খেয়ে, খুশি দেখে কে কার।

অামি গ্রামেই ফিরে যাব-
মায়ের কোলে, ভালবাসার অকৃত্রিমতায়;
মায়ের হাসিমুখ,
বাবার শাসনের চোখ,
বোনের অাদর,
ভাইয়ের সাথে দুষ্ট ঝগড়া; বড্ড মিস করি,
মিস করি ভালবেসে না বলা একজনকে; অামার সেই পরী।

বৃষ্টির দিনে লুডু খেলা,
কাঁঠালের বিচি ভাজা,
অথবা মুড়ি ভর্তা,
কি যে মিস করি-
শান্ত দীঘিতে শাপলা কুড়ানো,
ডিগবাজি দিয়ে পানিতে ঝাঁপ,
বরশী দিয়ে মাছ ধরা,
কারো বকুনিতে কান্না করা।

চাল দিয়ে হাওয়াই- মিঠাই অথবা অাইসক্রীম কেনা,
খাশতা খেতে ভাইয়ের কাছে টাকার জন্য বায়না।

এই শহরে এসব নেই,
যান্ত্রিক এ শহর।
এখানে হয়না বৌচি, কাবাডিও হয়না
নেই বাউল গানের যুক্তি- তর্ক,
কারো দুঃখে কেউ কাঁদে না।

অামি গ্রামেই ফিরে যাব-
এই শহরে জ্ঞানপাপীর সংখ্যা বড্ড বেশি,
অাভিজাত্য, হিংসা অার মিথ্যে রেষারেষি।

এই শহরে সবাই শুধু টাকার গন্ধ খোঁজে-
টাকায় নাকি অানে সুখ,
কাকে মেরে কে বড় হবে, ভেবে ভেবে হয় উন্মুখ।

অামি গ্রামেই ফিরে যাব-
তাজা সবজি, বিষমুক্ত ফল,
পুকুরের মাছ, ঢেকিতে ভানা চাল,
দুইটা দুধালো গাই, হাঁস- মুরগী,
ধান, অালু,সরিষা, তিল চাষ করব,
অামি সাচ্চা কৃষক হব।

অামার বউ মাদুরে খেতে বসাবে;
তাল পাতার পাখায় বাতাস করবে,
বাবুটা কোলে বসে ভাত খাবে,
এই তো ; সুখে থাকার জন্য যথেষ্ট,
এর চেয়ে বেশী সুখ চাই না,
এ শহর ছাড়বই অামি;
অার না, এখানে অার না।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী আজ
জাপানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে জাপানি চিত্রকলা বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান
সোহেল মাহমুদের থ্রিলার-উপন্যাস ‘অ-নির্বাণ’
একুশে বইমেলায় আলতামিশ নাবিলের 'অস্কারনামা'
‘কাব্যরাগে অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইয়ের মোড়ক উম্মোচন
বইমেলায় আলতামিশ নাবিলের 'বাংলার চলচ্চিত্রপাঠ'
বইমেলায় রাশেদুল মওলার ‘লকডাউনের লকারে’
বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে জহিরুল ইসলামের ‘এভিয়েশন ক্যারিয়ার’
একুশে বইমেলায় জান্নাতুল ফেরদাউস অনির ‘সরল অঙ্ক’