যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ভারতের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। বলেছেন, মার্কিন কিছু পণ্যের ওপর নয়াদিল্লি যে ‘উচ্চ শুল্ক’ আরোপ করেছে, তার জবাবে তিনিও দেশটির পণ্যের ওপর সমান শুল্ক আরোপ করবেন।
গত সোমবার ফ্লোরিডার পাম বিচে নিজ বাসভবন মার-এ লাগোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই হুমকি দেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, বিষয়টি হলো—পারস্পরিকতা। তারা (ভারত) যদি আমাদের ওপর শুল্ক আরোপ করে, আমরা তাদের ওপর ঠিক একই পরিমাণ শুল্ক আরোপ করব। তারা আমাদের ওপর শুল্ক আরোপ করে। আমরা তাদের ওপর শুল্ক আরোপ করব। এবং তারা প্রায় সব ক্ষেত্রেই আমাদের ওপর শুল্ক আরোপ করে, কিন্তু আমরা তাদের ওপর শুল্ক আরোপ করিনি।
চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, ভারত-ব্রাজিলসহ এমন কিছু দেশ আছে যারা মার্কিন কিছু পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে। এর আগেও একবার ট্রাম্প এই একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, পারস্পরিকতা কথাটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কেউ যদি আমাদের ওপর শুল্ক আরোপ করে, ভারত যদি আমাদের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তাহলে আমরা কি তাদের জন্য শূন্য শুল্ক আরোপ করব? তারা একটি সাইকেল পাঠায় আর আমরা একটি সাইকেল পাঠাই। তারা আমাদের ওপর ১০০ থেকে ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। ভারত অনেক শুল্ক আরোপ করে। ব্রাজিলও অনেক শুল্ক আরোপ করে। তারা যদি আমাদের ওপর শুল্ক আরোপ করতে চায়—সেটা ঠিক আছে, কিন্তু আমরাও তাদের ওপর একই শুল্ক আরোপ করব।
একই সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প মনোনীত বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, পারস্পরিক সম্পর্ক ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে চলেছে। আপনারা আমাদের সঙ্গে যেমন আচরণ করবেন, আপনাদেরও তেমন আচরণের প্রত্যাশা রাখতে হবে।
এর আগে, গত অক্টোবরে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ভারত বিদেশি পণ্য আমদানিকে সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ করে থাকে এবং তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা ভারতীয় পণ্যেও ‘রেসিপ্রোকাল ট্যাক্স’ (পারস্পরিক সমানুপাতিক কর) চালু করা হবে।
ট্রাম্প বলেন, আমার পরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো, আমেরিকাকে অত্যন্ত ধনী করে তোলা এবং এর মূল কথা হচ্ছে সমান-সমান আচরণ। আমরা সাধারণত শুল্ক আদায় করি না। আমি সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছি। চীন আমাদের পণ্যে ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, ব্রাজিল বড় ধরনের শুল্ক আরোপকারী, আর সব থেকে বড় শুল্কারোপকারী হলো ভারত।
তিনি বলেন, ভারত খুব বড় ধরনের শুল্ক আরোপকারী দেশ। আমাদের ভারতের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে দেশটির নেতা মোদির সঙ্গে, তিনি একজন মহান নেতা। সত্যিই তিনি একজন মহান ব্যক্তি। তিনি দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন, চমৎকার কাজ করছেন। কিন্তু তারাও বেশ বড় শুল্ক আদায় করে।
ট্রাম্পের সম্ভাব্য এই শুল্কনীতি ভারতের আইটি, ওষুধ এবং টেক্সটাইল খাতে প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এই খাতগুলো মার্কিন বাজারের ওপর নির্ভরশীল। অপরদিকে, চীন থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য ট্রাম্পের যে নীতি, তা ভারতের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে। মার্কিন কোম্পানিগুলো যেহেতু তাদের সরবরাহ চেইন চীন থেকে সরিয়ে আনতে চায়, এর ফলে ভারত নিজেকে একটি উৎপাদন হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পেতে পারে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের কড়া অভিবাসন নীতিমালা, বিশেষ করে এইচ-১বি ভিসা নীতি ভারতীয় পেশাজীবীদের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। তাঁর প্রথম শাসনামলে বিদেশি কর্মীদের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং বাড়তি নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা করেছিলেন। যা ভারতীয় আইটি পেশাজীবী এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছিল। ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন যদি আবার এই ধরনের পদক্ষেপ নেয়, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং সেসব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও প্রভাবিত করবে, যেগুলো ভারতীয় কর্মীদের ওপর নির্ভরশীল।